পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যেই ভারতীয় পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। যুদ্ধের চেয়ে তখন পাইলট আটক হওয়ার ইস্যুই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে আটক পাইলটকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খান।
ইমরান খানের এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই হতবাক হয়ে যান। দ্রুত এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে এমন ধারণা ভারতীয়রা কল্পনাও করতে পারেনি।
খোদ ভারতীয়রাও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই দেশেরই সুশীল সমাজ
ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন এরকম সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমন করতে সহায়ক হবে।
ইমরান খানের এ ঘোষণার পর ভারতজুড়ে স্বস্তি নেমে এসেছে। পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টুইট করেন।
টুইট বার্তায় অমরিন্দর সিং বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। আমরা দাবি করছি যথাশীঘ্রই তাঁকে মুক্তি দেয়া হবে। আমি মনে করি এটি একটি ভালো উদ্যোগ এবং এটি বজায় থাকবে।’
ভারতীয়রাও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই দেশেরই কোটি মানুষ
ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন এরকম সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমন করতে সহায়ক হবে।
পাকিস্তানিরাও
ইমরান খানের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় পাকিস্তানের বিশিষ্ট সাংবাদিক মাজহার আব্বাস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত একটি শুভ বার্তা বয়ে আনবে।
এদিকে
ইমরান খানের ওই ঘোষণার পর ভারতের সামরিক বাহিনীর পূর্ব নির্ধারিত যৌথ ব্রিফিং স্থগিত করা হয়। দেশটির সেনাবাহিনী স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ওই ব্রিফিং করার কথা ছিল।
ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যৌথ ব্রিফিং স্থগিত করা হয়েছে। এটি সন্ধ্যা ৭টায় করা হবে।
গত বুধবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমান ভেঙে পড়ে পাকিস্তানে। যদিও বিমানটি গুলি করে নামানো হয় বলে দাবি পাকিস্তানের। বিমানের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে তারা। সেই থেকে
ইমরান খান সরকারের উপর চাপসৃষ্টি করছিল ভারত। অবিলম্বে অভিনন্দনকে নিরাপদে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল। তা না হলে আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ভারত।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ফ্লাইট সুট পরা একজন ব্যক্তি হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় কথা বলছেন। নিজের পরিচয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নাম উইং কমান্ডার অভিনন্দন। আমার সার্ভিস নম্বর ২৭৯৮১। আমি এই ফ্লাইটের পাইলট। আমার ধর্ম হিন্দু।’
পাকিস্তানি সেনারা তাকে আরও প্রশ্ন করতে গেলে জবাবে তিনি বলেন, দুঃখিত স্যার। আমার এটুকুই বলার অনুমতি রয়েছে।’
এর পর তিনি কাউকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমি কি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি আছি কিনা- এটি জানা আমার অধিকার।’ সেসময় তাকে আরও প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন।
অভিনন্দন সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম তানভী মারওয়াহা। তাদের ঘরে একটি সন্তান আছে তার নাম এ. তাভিস। তার বাড়ি ভারতের চেন্নাইয়ে।
পারিবারিকভাবেও তার শরীরে বইছে সৈনিকের রক্ত। তার বাবা সিমহাকুট্টি বর্তমান ছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন এয়ার মার্শাল, একসময় কলকাতাতে ইস্টার্ন এয়ার কমান্ডের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। স্বভাবত বাবাকে দেখেই অভিনন্দনের সেনাবাহিনীতে আসা। ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির এই স্নাতক বিমানবাহিনীতে ‘কমিশনড’ হয়েছিলেন ২০০৪ সালে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ ও যুদ্ধসফল বৈমানিকদের একজন তিনি। অর্থাৎ এলিট ইউনিট ‘স্কাট’ বা `সূর্যকিরণ অ্যারোবেটিক’ টিমের সদস্য অভিনন্দন। এই তরুণ সেনানিই গতকাল বুধবার সকালে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মাটিতে ভূপাতিত হওয়ার পর জীবিত অবস্থায় ধরা পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। তাকে কেন্দ্র করেই এখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।