যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
হলুদ বা হলদি গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকার মসলা। ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদা পারিবারের অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। হলুদগাছের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া। এটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জন্মে থাকে। হলুদগাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত দরকার হয়। বছরে সাধারণত একবার হলুদগাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরানো শিকড় থেকে নতুন গাছ গজায়। হলুদগাছের শিকড়কে কয়েক ঘন্টা সিদ্ধ করা হয়, তারপর গরম চুলায় শুকানো হয়। এরপর এই শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়। এই হলুদ গুঁড়া দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাদ্যে প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। তবে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিকড় ভালোভাবে ধোয়ার পর শিলপাটায় পানি সহযোগে বেটে নিয়ে হলুদ লেই তৈরি করা হয়, যা সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
কার্যকর উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম হলুদে আছে জলিয় অংশ ১৩.১, খনিজ পদার্থ ৩.৫, আঁশ ২.৬, খাদ্যশক্তি ৩৪১ কিলো ক্যালোজি, আমিষ ৬.৩, চর্বি ৫.১, শর্করা ৬৯.৪, ক্যালসিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৪.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটনি ৩০ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন .০৩ গ্রাম।
হলুদের গুণাবলি : * সাধারণ কাটাছেঁড়ায় হলুদ অ্যান্টিসেপ্টিকের কাজ করে। * মুখে জ্বালাপোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করলে উপকার হয়। * শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগালে উপশম হয়। * সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে হলুদের পাউডারের মধ্যে বাদামের চূর্ণ এবং দই মিশিয়ে লাগালে ভালো অনুভূত হয়। * সর্দি-কাশি হলে হলুদ খেলে উপকার হয়। কাশি কমাতে হলে হলুদের টুকরা মুখে রেখে চুষলে আরাম বোধ হয়। এ ছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুড়া এবং গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। * আয়ুবের্দিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে। হলূদের ফুলের পেস্ট লাগালে চর্মরোগ দূর হয়। * এটি চেহারার সৌন্দর্য বাড়াতেও সাহায্য করে। হলুদের সাথে চন্দন মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ^ল হয়। এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়। লিভারের ক্ষেত্রে হলুদ খাওয়া খুবই ভালো।* হলুদের মধ্যে ফিনোলিক যৌগিক কারকিউমিন রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। * হলুদ মোটা হওয়া থেকে বাঁচায়। হলুদে কারকিউমিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। শরীরের কলাগুলোকে বাড়তে দেয় না। * গা ব্যথা হলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। জয়েন্টের ব্যথা হলে হলুদের পেষ্ট তৈরি করে প্রলেপ দিলে উপশম হয়। * যখন ফুলকপির সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া হয় তখন তা গ্লান্ড ব্লাডারে ক্যান্সার প্রতেরোধে সাহায্য করে। * ব্রেস্ট ক্যান্সার লাং পর্যন্ত যাতে ছড়াতে না পারে তা প্রতিরোধ করে হলুদ। * এটা শৈশবে লিউকেমিয়ার ঝুকি কমায়। * চাইনিজরা বিষণ্নতা কমাতে অনেক আগে থেকেই হলুদের ভেষজ চিকিৎসা করে আসছে। * ক্ষতিগ্রস্তত্বক বা যাদের ত্বকে এ্যালার্জির প্রকোপ বেশি তা কমাতে এবং নতুন কোষ গঠনেও হলুদ উপকারী। * লিভার ড্যামেজ, যা এক সময় সিরোসিসে রূপ নেয় তা প্রতিরোধ হলুদের উপকার অনস্বীকার্য। * রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে, হলুদের মাধ্যমে পূর্ব চিকিৎসা নেয়া হলে তা ক্যান্সার সেল র্দ্বুল করে দেয় এবং এতে করে ক্যান্সার সহজে ছড়াতে পারে না। * এ ছাড়া হলুদ ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। কাঁচা হলুদ বেটে অথবা পাউডার হলুদ মিক্স করেও ফেসপ্যাক বানানো যায়।
ডা. মাওঃ লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবাইল-০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।