পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত সোমবার দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ট্রেনের টিকিট পাচ্ছে না সাধারণ যাত্রীরা। না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রথমত কোটা পদ্ধতি দ্বিতীয়ত সুবিধাভোগীদের স্বার্থ। কোটার কথা স্বীকার করেছেন, রেলওয়ে পরিচালক (ট্রাফিক) সৈয়দ জহুরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, যাত্রীর তুলনায় আমাদের টিকিট ক্যাপাসিটি কম। এরমধ্যে সরকার নির্ধারিত কোটার কারণে টিকিট দেয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ভুক্তভোগীর উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, লম্বা লাইন অতিক্রম করে কাউন্টারে এসে যাত্রীরা টিকিট চাইলে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সিট খালি নেই। অথচ পাশেই দালালরা টিকিটের গ্যারান্টি দেয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২-৩ শ’ টাকা বেশি দিলে টিকিট পাওয়া যাবে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, কোটাকে পুঁজি করে পকেট ভরছে রেলের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমপি কোটার কথা বলে যে টিকিটগুলো অবিক্রিত রাখা হয় সেগুলো পরে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। এক্ষেত্রে নীতিমালা বা নিয়মনীতি না থাকার কারণে দুর্নীতিবাজরা সুযোগ নিচ্ছে। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে রেল তাহলে কাদের স্বার্থে?
আধুনিক যুগে রেলকে সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে মনে করা হলেও বাংলাদেশে এ সুবিধা যেন সাধারণ যাত্রীদের জন্য সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। রেলের অব্যবস্থাপনার কথা প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাস্তবে এসবে কেউ কান দিচ্ছেন বা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সেরকম মনে না। রেলের ভাড়া বেড়েছে অথচ সেবার মান বাড়েনি। সেই সাথে বিনা টিকিটের যাত্রী, হকারদের উপদ্রব এবং হিজড়াদের চাঁদাবাজিসহ নানা ঝামেলাও রয়েছে। রেলের অন্য দুর্নীতিও কম নয়। এ বছরই এপ্রিলে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রেল বিভাগে শত শত কোটি টাকার পণ্য কেনা হলেও তা ব্যবহার করা হয় না। এসব পণ্য ক্রয় করা হয় বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে। একই সঙ্গে রেলে ব্যবহারের জন্য কেনা হয় অনুপযোগী মূল্যবান মালামালÑ যা পরে আর ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। রেলের পণ্য কেনায় বড় ধরনের অডিট আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্নমুখী অনিয়মের মাধ্যমে রেলে অর্থিক অনিয়ম হয়েছে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা। আলোচ্য ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, কোটার হিসেবে প্রায় ৯০ ভাগ আসনই চলে যায় সাধারণ যাত্রীদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এরপর যেটুকু থাকে তা চলে যায় অনিয়মে। রেল সূত্র অনুযায়ী, নির্ধারিত এই কোটা পদ্ধতির বিশেষ সুবিধাভোগী হচ্ছেন কমলাপুর স্টেশন মাস্টার ও স্টেশন ম্যানেজার। কারণ, সুপারিশ যেকোন জায়গা থেকেই করা হোক তার নিয়ন্ত্রণ থাকে স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজারের হাতে। রেল স্টেশনে কালোবাজারিদের বিষয়টি নতুন নয়। এদের সাথে সাথে রেলের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকার অভিযোগ রয়েছে। যাদের এসব অনিয়ম দেখার কথা, তারাই যদি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে, তবে সাধারণ যাত্রীরা কোথায় যাবে? সাধারণ মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। একে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা বলা ছাড়া কোন উপায় নেই। এই বাস্তবতা অনাকাক্সিক্ষত। কোন অবস্থাতেই এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও রেল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না।
পৃথিবীর কোন দেশে রেলের টিকিটের ক্ষেত্রে এত হারে কোটার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসনের ৯০ ভাগই যদি কোটায় চলে যায় তাহলে সাধারণ যাত্রীদের ন্যূনতম সুবিধাটুকু পাবার সুযোগ কোথায়? বিশেষ সময়ে কোটা থাকতে পারে। তাই বলে বছরের সব সময়েই এই কোটা থাকা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রেল নিয়ে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে-হচ্ছে। তবে টিকেট ও যাত্রীদের সুবিধা নিয়ে যে অনিয়ম ও উদাসীনতা বিরাজমান, তাতে হতাশ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা রেল নিয়ে অনেক বড় বড় কথা শুনেছি বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যাত্রী সুবিধা বলতে কিছু নেই। টিকিটের মূল্য বাড়ালেও যাত্রীদের ন্যূনতম সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। উল্টো কোটার মাধ্যমে সব সুবিধা লোপাট করে দেয়া হচ্ছে। রেল কায়েমীস্বার্থবাদীদের খপ্পর থেকে মুক্ত হোক এটা সকলেই কামনা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।