Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তোপের মুখে কাদের-রাঙ্গা

জাপার মতমিনিময় সভায় এরশাদ-রওশন যাননি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। মূলত লাঙ্গলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা নেতাদের শান্তনা দিতেই এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। সভায় দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ছিলেন না। মতবিনিময় সভায় তোপের মুখে পড়েন দলটির কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল জাপার বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সারাদেশ থেকে বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। নির্বাচনের প্রায় দুইমাস পর এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১৭২ জনকে আমন্ত্রন জানানো হলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫৮ জন। সভা থেকে বের হয়ে উপস্থিত প্রার্থীরাও এ স্বল্পসংখ্যক উপস্থিতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সভা চললেও প্রার্থী কোনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এদিকে যারা মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তারাও সভায় উপস্থিত পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বিগত নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে কোনো ধরণের খোজ-খবর নেয়া হয়নি। এমনকি দলটি েেনতৃত্বে থাকা নেতারা পার্টির প্রার্থীদের ফোন রিসিভ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। কিছু কিছু বক্তা মহাজোটে কম আসন পাওয়ার জন্য দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দায়ী করেন।
পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আবু সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, বিগত নির্বাচনে দলের শীর্ষনেতারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের এ দায়িত্বহীনতার জন্য আমি ব্যথিত হয়েছি। এমতাবস্থায় হয়ত আমি এ পার্টি আর করবোনা। তিনি জাপার বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল আলম রুবেল বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই নেতৃত্ব নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। স্বার্থান্বেষী মহলরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব ষড়যন্ত্রের কারণেই তৃণমূল ধ্বংস হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামীতে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি করাও কঠিন হবে।
হবিগঞ্জ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল পার্টির মহাসচিব রাঙ্গাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মহাজোটে আমাদের ৪৫টি আসন দেয়ার কথা ছিলেন। কিন্তু আপনি মহাসচিব হওয়ার পর এ আসন ২৫টিতে নেমে এসেছে। এসময় রাঙ্গা
তার বক্তব্যের প্রতিত্তরে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। আমি মহাসচিব হওয়ার পূর্বেই তা ঠিক করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল মির্জাপুর থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যে আমরা আজ দিশেহারা। সামাজিক মর্যাদা ও দলে কোনো রকমের অবদান না থাকলেও টাকার বিনিময়ে নমিনেশন ও বড় বড় পদ দেয়া হয়। এ ধারা থেকে বের হবার নিশ্চয়তা না পেলে আগামীতে রাজনীতি থেকে আমরা সরে দাড়াবো।
সাতক্ষীরা থেকে আবু মতলুব লিয়ন উপস্থিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কোমড় সোজা হয়ে দাড়ান। ভয় পেলে চলবেনা। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। তখন জিএম কাদের তাকে বলেন, তুমি তোমার কথা বলো। জবাবে লিয়ন বলেন, আমার কথা যদি পছন্দ না হয় তাহলে বলেন পার্টি ছেড়ে চলে যাই।
জাপার যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু বলেন, আমাদেরকে নির্বাচনে দাড় করিয়ে আবার প্রত্যাহার করানো হলো। নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে ফরম বিক্রয় ও পার্র্টির চাঁদা বাবদ ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা আয় হয়েছে। সেখান থেকেও আমরা যারা পার্টির ত্যাগী নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তাদের কিছু কিছু করে টাকা দিতে পারতো। সে টাকা গেল কোথায়? যেখানে এরশাদ সাহেব অসুস্থ, সেখানে কোন প্রয়োজনে দলের মাঝে বড় বড় প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। দলের মাঝে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণেই এগুলো হচ্ছে বলে মনে করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীকারী কাজী মামুন বলেন, যা হবার হয়েছে। এখন দলকে উজ্জেবিত করার প্রশ্নে সরকারের সাথে আলোচনা করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্নস্থানে পার্টির ত্যাগী নেতাদের কিভাবে মূল্যায়িত করা যায় সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিতে হবে।
সভার শেষ পর্যায়ে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সকলের মাঝেই কিছু রাগ ক্ষোভ থাকতেই পারে। আগামীতে সবাইকে নিয়ে দল গুছিয়ে পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
সভায় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ আরো বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একাদশ জাতীয় সংসদ

১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
১৮ জানুয়ারি, ২০২১
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ