Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠাকুরগাঁওয়ে সংকটে জর্জড়িত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ছাত্রদের স্কুল

রুবাইয়া সুলতানা বাণী , ঠাকুরগাঁও | প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৪:৩৫ পিএম

মাটি বন-জঙ্গল নদী খাল বিলের মধ্যে বেড়ে ওঠা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে মূলধারার জীবনযাপনে উন্নীত করার সরকারের উদ্যোগ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবহেলিত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য নিয়েই নির্মিত একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংকটে জর্জড়িত হয়ে আছে। স্কুলটিতে না আছে পর্যাপ্ত শিক্ষক , আর না আছে ক্লাসঘর। আধুনিক শিক্ষার পর্যাপ্ত উপকরণ তো তাদের কল্পনায়ও আসেনি। স্কুলটির নামকরণ করা হয় আদিবাসী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও বিদ্যালয়টির অর্থায়ন করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তবু এর ভগ্ন দুর্দশা সীমাহীন।

স্কুলটিতে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ৫৩জন শিক্ষার্থীর পাঠদান। দুটি আধা পাঁকা ঘর ছাড়া স্কুলটির শ্রেণী কক্ষ বলতে কিছু নেই। শিক্ষার্থীরা পাঠদানে গাদা গাদি করে বসতে পারলেও পাঠদানে তেমন মনোযোগ দিতে পারে না বলে জানিয়েছে একাধিক শিক্ষার্থী।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৬ সালে সরকার আদিবাসীদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলার যাদুরাণীবাজারে স্কুলটি নির্মাণ করা হয়।
একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। এখানে রয়েছে ৫৩ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে ভবন সংকটে ভুগছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আদিবাসীদের শিক্ষাদান কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট দুটি আধাঁ পাকাঁ ইটের দেয়াল ও টিনের ছাউনির কক্ষ রয়েছে।
একটিতে পড়ানো হয় প্রাক-প্রাথমিক ২৩ জন শিশুকে আর অন্যটিতে প্রথম শ্রেণির ৩০ জন শিশুকে।
জায়গার অভাবে গাদাগাদি করে বসতে হয়।
একজন ছাত্রের অভিভাবক কনক মুর্মূ বলেন, আমরা খুশী আছি যে আমার মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছে। সরকার যেমন স্কুলের উদ্যোগ নিয়েছে আশা করি তাদের উপরে তোলার দায়িত্বও তারা নেবেন। কিন্তু উপবৃত্তি না পাওয়ায় আমার মেয়ের খরচ চালানো আমার জন্য কঠিন।
যে শিশুরা জন্মের পর থেকেই শিখে আসে পশু পাখী মাছ শিকার , প্রকৃতির মতো বন্য আর স্বাধীন যাদের জীবন ও অভ্যাস তাদেরকে বিদ্যালয়ের অনুশাসনের মধ্যে আনা সহজ ব্যাপার নয় , তাই তাদেরকে মূলধারার জনগোষ্ঠীর সাথে একই ¯স্রোতধারায় আনার জন্য আরো বেশি উদ্যোগ , বেশি বাজেট ও বেশি প্রয়াস প্রয়োজন , বললেন শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ রসায়নবিদ অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দীক।
বিদ্যালয়ের দুটি ক্লাসেই একজন মাত্র শিক্ষক চিন্তামণি মুর্মূকে দিয়ে ক্লাস চালানো হয়। তিনি বলেন, এতোগুলো শিক্ষার্থীর মাঝে একজন শিক্ষকের পাঠদান অনেকটা কঠিন। তা ছাড়া দুটি মাত্র রুমে জায়গা সংকটে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান এ শিক্ষক।
বিদ্যায়ের সভাপতি সনিরাম হেমরম জানান,উপজেলার ৯টি আদিবাসী গ্রামের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ভাষা জ্ঞানের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করবে এ আশায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারিভাবে উপজেলা প্রাথমিক অফিস থেকে পাঠ্য বই দেয়া হলেও নেই উপবৃত্তির ব্যবস্থা। এই স্কুলটিতে দুটি কক্ষ আর একজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে হরিপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজার রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি আমার দপ্তরের অধীন নয় , সরাসরি ইউএনও অফিসের তত্বাবধানে পরিচালিত হয় , তাই এটা সম্পর্কে আমি বিষদ বলতে পারবো না। হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম.জে আরিফ বেগ জানান,মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে মাসে ৩ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়টিতে ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আর আরো বেশি বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে এ অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তা ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন এ অঞ্চলের আদিবাসীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঠাকুরগাঁও


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ