Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপদ সিলিন্ডার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

যানবাহন, বাসাবাড়ি ও রেস্তোরায় অনিরাপদ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হচ্ছে। এটা একটা বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার, পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট না করাসহ বিবিধ কারণে গ্যাস সিলিন্ডার কার্যত বিপজ্জনক বোমায় পরিণত হয়েছে। বৈধ বা অবৈধভাবে গাড়িতে সংযোজিত গ্যাস সিলিন্ডার জানমালের জন্য ভয়ংকর হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এনিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি: (আরপিজিসিএল) এর কোনো বিকার আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে ব্যবহার করায় প্রতিটি সিলিন্ডার মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। তাদের অভিমত অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে তিন হাজার দু’শ পাউণ্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়। ওই সময় সিলিন্ডার ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা অতীতে ঘটতে দেখা গেছে। এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সিলিন্ডারের উপযুক্ত মান নিশ্চিত করা জরুরি। জানা গেছে, এখন গাড়িতে যেসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেক ক্ষেত্রে অক্সিজেনের সিলিন্ডার, এমন কি জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডারও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ রকম সিলিন্ডার ব্যবহার আর সর্বক্ষণিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহন করে বেড়ানো একই কথা। তাছাড়া, যে কোনো সিলিন্ডার পাঁচ বছর পর পর পুন:নিরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। এই বাধ্যবাধকতা অধিকাংশ গাড়ির ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। আরপিসিএল’র হিসাবে সারাদেশে সিএনজি চালিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। এর মধ্যে একই সিলিন্ডার পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। এসব গাড়ি সড়ক-মহাসড়কে দিব্যি চলাচল করছে। 

জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সারাদেশে চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে ৫৩ হাজার ৮০০ সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হয়েছে, যা মোট সিলিন্ডারের ১৪ শতাংশ মাত্র। দেশে গত ১৫ বছর ধরে সিএনজি চালিত গাড়ির প্রচলন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সংযোজিত সিলিন্ডারের খুব কমই রেটেস্টিং হয়েছে। আরপিসিএল ও জ্বালানি বিভাগের তথ্য থেকে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। বলা বাহুল্য, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই সিএনজি চালিত অধিকাংশ গাড়ি চলাচল করছে। কর্তৃপক্ষীয় তরফ থেকে বলা হয়েছে, গাড়িগুলো সিলিন্ডার রিটেস্ট করাতে আসে না। কিন্তু তাদের আসতে বাধ্য করার কোনো ব্যবস্থা নেই। উদ্যোগও নেই। আসলে সারাদেশে কত গাড়ি সিএনজি চালিত, তার সঠিক সংখ্যাও জানা যায় না। একেক কর্তৃপক্ষের একেক হিসাব। দেশে মোট ১৮০টি সিএনজি কনভারশন সেন্টার আছে। এদের কাছ থেকে সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব যদি এক্ষেত্রে অবৈধ কোনো কারবার না থাকে। অবৈধ কারবার আছে বলে অভিযোগ আছে। অবৈধ কারবার বন্ধ করলে কনভারশন সেন্টারগুলোর মাধ্যমে সিএনজি চালিত গাড়ির সঠিক সংখ্যা নিরূপন করা সম্ভবপর হতে পারে। অত:পর কোন গাড়ির সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হয়নি তার একটি হিসাবও বের করা সম্ভব। এই হিসাব থাকলে ওই গাড়িগুলোকে নোটিশ করা বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতে পারে। এছাড়া বিআরটিএ গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সময় যদি সিএনজি চালিত গাড়ির সিলিন্ডারের মেয়াদকাল পরীক্ষা করার মাধ্যমে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করে তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার অনেকাংশেই রহিত হতে পারে। দু:খের বিষয়, এরকম ব্যবস্থা নেই এবং অনেক গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ভুয়া। সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়াও কোনো ব্যাপার নয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, কুমিল্লায় বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। বাসাবাড়ির মালিকরা সিলিন্ডারে করে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস ভরে ব্যবহার করছে। এসব সিলিন্ডার কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণত পুরানো, মেয়াদউত্তীর্ণ, জোড়াতালি দেয়া সিলিন্ডারই এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা যে কতটা বিপজ্জনক তা সহজেই অনুমেয়। সিএনজি স্টেশনের মালিক ও বাসাবাড়ির মালিক দেখছে তাদের লাভের দিকটা। এটা যে তাদের জন্য বড় ধরনের বিপদ ও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা বিবেচনায় আনার প্রয়োজন বোধ করছেনা।
গ্যাস সিলিন্ডার, তা গাড়িতে ব্যবহৃত হোক কিংবা বাসাবাড়িতে অথবা হোটেল রেস্তোরায়, অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। নিরাপদ অর্থে মানসম্পন্ন হতে হবে। ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বাজারে গুণগত মানের গ্যাস সিলিন্ডার আসছে না। কেন আসছে না সেটাই প্রশ্ন। অবশ্যই গুণগত মানসম্পন্ন গ্যাস সিলিন্ডারের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। আর গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর পুন:নিরীক্ষার ব্যবস্থা যে কোনো মূল্যে কার্যকর করতে হবে। যারা নিয়ম মেনে গ্যাস সিলিন্ডার পুন:নিরীক্ষা করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব কর্তৃপক্ষের এসব করার দায়িত্ব তারা তা এড়িয়ে যেতে পারে না। আরপি জিসিএল, বিআরটিএ’কে এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যব্যবস্থা নিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এক্ষেত্রে ভালো ফল এনে দিতে পারে। সেটাও শুরু করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলিন্ডার ব্যবহার
আরও পড়ুন