পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে তথা জাতীয় ঐক্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উল্লেখ করা পাঁচটি যোগসূত্রের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসঙ্গে ইতোমধ্যে প্রকাশিত দুটি কলামে কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছি। এর বেশি আলোচনা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উল্লেখ করা বাকি তিনটি যোগসূত্র (যথা- অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার, উন্নয়ন ও অগ্রগতি) প্রসঙ্গে সবিশেষ আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। কিঞ্চিৎ আলোচনা তথা দু-চারটি বাক্য মাত্র উল্লেখ করছি।
যেহেতু পত্রিকার কলাম গবেষণাপত্রের আকারে বা আদলে বা বৈশিষ্ট্যে লিখছি না, সেহেতু সাদামাটা ভাষায় বর্ণনা করছি। ১৯৭২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে ২০১৮ পর্যন্ত সততার মানদণ্ড ও অভ্যাস কমেছে এবং অসততার অভ্যাস বেড়েছে, নীতির প্রতি সম্মান কমেছে এবং দুর্নীতির প্রতি আকর্ষণ ও অভ্যাস বেড়েছে, গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, সাথে সাথে অতি ধনীর সংখ্যাও বেড়েছে, দেশের অর্থনীতিতে বাজেটের আকার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে, জিডিপির আকার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে- সাথে সাথে অর্থপাচার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে, অর্থ লোপাট ক্রমান্বয়ে বেড়েছে, ধনীদের মধ্যে আরো ধনী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। শিল্পায়ন বেড়েছে, শ্রমিকের বেতনও বেড়েছে, কিন্তু শ্রমিকের জীবনযাপনের মান কাক্সিক্ষতভাবে বাড়েনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে, শিক্ষকদের বেতনভাতা বেড়েছে, ছাত্রসংখ্যা বেড়েছে, পরীক্ষায় পাস ও মেধাভিত্তিক পাসের অনুপাত ‘সাংঘাতিকভাবে’ বেড়েছে; কিন্তু শিক্ষায় নৈতিকতা ও শিক্ষার মানের দারুণ অবনতি হয়েছে। রাস্তাঘাট বেড়েছে, ফ্লাইওভার বেড়েছে, ভৌতকাঠামো নির্মাণ বেড়েছে; সাথে সাথে সামাজিক অশান্তি বেড়েছে, পারিবারিক ভাঙন বেড়েছে, নদীভাঙন বেড়েছে, কৃষিজমির অপব্যবহার বেড়েছে। সরকারি চাকরিতে পদের সংখ্যা বেড়েছে, বেতনের স্কেল বেড়েছে এবং প্রশাসনের রাজনীতিকরণ শতভাগ বেড়েছে। এই অনুচ্ছেদের উপসংহার হলো, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি সমাজের বিক্ষুব্ধ অংশকে, সমাজের সুবিধাভোগী বা উপকারভোগী অংশের সাথে সমঝোতার মানসিক টেবিলে বসাতে পারবেন কি? যা হোক, যত কিছুই বলি না কেন, পত্রিকায় যত ধরনেরই তথ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক বা সামাজিক সংবাদ ছাপানো হোক না কেন, আমাদের দেশের মানুষ জাতীয় ঐক্য বলতে বা জাতীয় ঐকমত্য বলতে প্রধানত রাজনৈতিক ঐক্য বা ঐকমত্যকেই বোঝে।
স¤প্রতি জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি খবরের ভাষ্য এবং দু’টি ক্ষুদ্র খবর, মিডিয়ার মাধ্যমে আনুপাতিকভাবে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। রাজনৈতিক মূল্যায়ন বা ভাষ্যটি ছিল: বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে, ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকছে কি থাকছে না এ নিয়ে। অপর পক্ষে, দু’টি ক্ষুদ্র খবরের মধ্যে প্রথম খবরটি হলো, জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ। দ্বিতীয় ক্ষুদ্র খবরটি হলো, জামায়াতে ইসলামীর উচ্চতম পর্যায়ের ১০০ জনের মধ্যকার একজন নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুকে জামায়াতে ইসলামী দল থেকে বহিষ্কার। এ প্রসঙ্গে পত্রিকায় বড়-ছোট কলাম লেখা হয়েছে বা কলামের মাঝখানে এর উল্লেখ এসেছে এবং টেলিভিশনের টকশোতে আলোচনা হয়েছে। অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করেছেন। রাজনীতি অঙ্গনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব, আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শর্তসাপেক্ষে মন্তব্য করা থেকে বিরত আছেন। আমি এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত মন্তব্য করব না, অর্থাৎ পদত্যাগ বা বহিষ্কার নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমি শুধু অতীতের একটি কলাম থেকে কিয়দংশ উদ্ধৃত করছি।
বিগত ১৮ বছরে অগণিতবার টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়েছি। এই ধারাবাহিকতায় আমি কদিন আগে একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়েছি। ওই টকশোতে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে এবং অতীতেও ১৬-১৭ বার প্রশ্ন করা হয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে। সে প্রশ্নটি কী, সেটি উদ্ধৃত করছি। প্রশ্নটি হলো- ‘আপনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আপনি এমন একটি জোটে যোগদান করেছেন যেখানে আছে স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী। আপনি কেন তাদের সাথে বসেন? আপনি কেন ওই জোটে গেলেন? আপনি কোন বিবেচনায় ওই জোটে গেলেন? আপনি বা আপনার দল ওই জোটে থাকা উচিত কি না, ইত্যাদি।’ প্রশ্ন শেষ। এ প্রসঙ্গে জুলাই ২০১৬ এবং আগস্ট ২০১৬ দুই খণ্ডে একটি দীর্ঘ কলাম লিখেছিলাম। সেখানে ওই প্রশ্নের উত্তর যেমন দিয়েছিলাম, তেমনি জামায়াতে ইসলামী নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছিলাম। আজকের কলামের পরবর্তী অংশে আগস্ট ২০১৬-তে প্রকাশিত কলাম থেকে তিনটি অনুচ্ছেদ হুবহু উদ্ধৃত করছি। পাঠক মেহেরবানি করে মনে রাখবেন, তখন বাংলাদেশে উগ্রপন্থীদের তৎপরতা হঠাৎ করেই লক্ষ্যণীয় ছিল; ১ জুলাই ২০১৬ রাতে ঢাকার গুলশানে ‘হোলি আর্টিজান’ নামক রেস্টুরেন্টে উগ্রপন্থীদের হামলা হয়েছিল। সেই সময় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম জিয়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতেই ওই দু’টি কলাম লেখা হয়েছিল। যা হোক, কলাম থেকে উদ্ধৃতি শুরু করছি।
এখন জাতির সামনে বড় সমস্যা চরমপন্থা বা উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদ। এখন জাতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। সেখানে, বিএনপিকে আহ্বান জানানো হচ্ছে বা অপর ভাষায় পরিস্থিতিগতভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে, যেন তারা জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে: ‘জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে।’ কিন্তু বেশি না হলেও অন্তত দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার সমর্থিত একটি রাজনৈতিক জোটকে বা তাদের প্রতি শুভেচ্ছা আছে এমন ভোটারদেরকে বাদ দিয়ে কীভাবে ‘জাতীয় ঐক্য’ হয়, সেটি একটি রহস্যময় প্রশ্ন। জাতীয় ঐক্য ও বিএনপি-জামায়াত নিয়ে যে প্রশ্ন, সেই প্রশ্নটির দু’টি আঙ্গিক আছে। প্রশ্নটির প্রথম প্রচারিত আঙ্গিকটি হলো, বিএনপি এবং জামায়াত একত্র থাকলে, সরকার তাদেরকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করবে না। তবে বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিলে, সরকার যে নতুন করে কোনো শর্ত দেবে না অথবা কোনো শর্ত না দিয়েই খুশি মনে বিএনপিকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ায় স্থান দেবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রশ্নটির দ্বিতীয় আঙ্গিক হলো, সরকারি ১৪ দলীয় জোট বা ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দল কি বিএনপি ও জামায়াত যদি আলাদা হয় তাহলে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যে আসবে; এ প্রশ্নের উত্তরও সুনিশ্চিত নয়। তবে যেমনটি এই কলামেই ওপরের অংশে বর্ণনা করেছি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা প্রক্রিয়ায় একিউরেট বা নির্ভুল, ক্লিয়ার বা পরিষ্কার, ব্রিফ বা সংক্ষিপ্ত ভাষার উত্তর পাওয়া কঠিন বৈকি। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, রাজনৈতিক উত্তরগুলো পরোক্ষ হয়, অসম্পূর্ণ হয়, সুবিধামতো সময়ে সুবিধাজনকভাবে সংশোধনযোগ্য হয়। সর্বোপরি রাজনৈতিক উত্তরগুলো কৌশলগত হয়। যা হোক, এখন অন্যতম আলোচ্য বিষয় হচ্ছে জাতীয় ঐক্য এবং ওই ঐক্যপ্রক্রিয়ায় প্রশ্নাধীন বা আলোচিত বিষয়টি হলো, জামায়াত এবং বিএনপির সম্পর্ক। জাতীয় ঐক্যের সাথে জোটের সম্পর্ক আছে এবং জোটের এত দিনকার সঙ্গীদের সম্পর্ক আছে (অথবা থাকতেই পারে)।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সা¤প্রতিককালের বা চলমান সম্পর্ক নিয়ে যত প্রকারের কথা বা অভিযোগ আনা হয়, তার প্রায় সমান পরিমাণ কথা ও অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের অতীতকালের সম্পর্ক নিয়েও আনা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিয়ে কথাগুলো যতই বলা হোক না কেন, প্রচারমাধ্যমে ওই কথাগুলোর অবস্থান দুর্বল। বাংলাদেশের প্রচারণা জগতে আওয়ামী লীগের প্রভাব অপরিসীম। আরো একটি কথা আছে; আওয়ামী ও জামায়াতের পারস্পরিক অতীত সম্পর্ক নিয়ে কথাগুলো বিএনপির নেতারা অবশ্যই বিভিন্ন স্থানে তুলে ধরছেন। কিন্তু এটা তো বিএনপি নেতা বা আমাদের মূল কাজ নয়। তুলে ধরার কাজটি হলো জামায়াতের। আওয়ামী লীগ যেহেতু জামায়াতের সাথে তাদের রাজনৈতিক অতীত সম্পর্ককে অস্বীকার ও অবমূল্যায়ন করেই যাচ্ছে, সেহেতু জামায়াতও অতীতকালে আওয়ামী লীগের সাথে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ককে জগৎবাসীর সামনে বারবার তুলে ধরা উচিত কি উচিত নয়- এ প্রশ্নটি বিবেচনাযোগ্য। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ইশারা দিচ্ছে যে, জামায়াত তাদের অতীতের আওয়ামী লীগ-কেন্দ্রিক সম্পর্ক নিয়ে সম্ভবত কিছু বলবে না; না বলাই কৌশল।
এখন আওয়ামী লীগ কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না, সে প্রসঙ্গে দুটো কথা বলি। আওয়ামী লীগ যদি নিষিদ্ধ করেই দিত, তাহলে নিষিদ্ধ দলটি আর জোটে থাকত না; এত আলোচনাও হতো না; আলোচনা না হলে রাজনীতির মাঠ গরম থাকত না। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ অনেকের কথা ধার করছি না; একজন মন্ত্রীর সাম্প্রতিক কথা ধার করছি। কথাটি হুবহু অথবা অনেকটা এ রকম: ‘বিএনপি ও জামায়াত প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ বা বর্তমান সরকার রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে। বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় যদি কোনো বড় মাছ বড়শিতে আটকায়, তাহলে সেটাকে খেলাতে হয়; গলায় আটকানো বড়শি নিয়ে, খেলতে খেলতে মাছ হয়রান হয়ে গেলে তখনই মাত্র ওই মাছকে ডাঙ্গায় তোলা হয়। রাজনীতির পুকুরেও বিএনপি এবং জামায়াত এখন বড়শিতে আটকা; গলায় বড়শির কাঁটা নিয়ে তারা খেলতে খেলতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে, তখনই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করবে না।’ পাঠক, আবারো নিবেদন করছি, উদ্ধৃতি বা কমার ভেতরের কথাগুলো আমার নয়; এক মাননীয় মন্ত্রীর।
‘ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কৌশলগতভাবে জামায়াত প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়া বিলম্বিত করলেও জামায়াত কিন্তু কৌশলগতভাবে সব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে পারে না। শুধু বলব, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে জামায়াতের বক্তব্য হালনাগাদ নয়। সে জন্যই সব কিছু করার বা বলার পরও মুক্তিযোদ্ধা ইবরাহিম অবশ্যই একটি কথা বলতে থাকবে। কারণ, মুক্তিযোদ্ধা ইবরাহিম দেশ ও সমাজের বাইরে নয়। সেই কথাটি কী? কথাটি হলো, আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটি নিজেরাই ১৯৭১ সালে তাদের দলীয় ভূমিকাকে পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত এবং পুনর্মূল্যায়িত বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা উচিত। এর কারণ হচ্ছে, জামায়াতের চতুর্মুখী দায়বদ্ধতা। দায়বদ্ধতার চারটি মুখ পরস্পরবিরোধী নয়, বরং সম্পূরক। প্রথম দায়মুখিতা হলো দ্বীন ইসলামের প্রতি। কারণ, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী প্রচার করত, পাকিস্তান না বাঁচলে দ্বীন ইসলাম বাঁচবে না। দ্বিতীয় দায়মুখিতা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের সব নাগরিকের প্রতি; বিশেষত বাংলাদেশি প্রজন্মের প্রতি। তৃতীয় দায়মুখিতা হলো বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতি বিশেষত ২০ দলীয় জোটের প্রতি। চতুর্থ দায়মুখিতা হলো জামায়াতে ইসলামীর অন্তর্ভুক্ত বা অনুসারী তরুণ প্রজন্মের প্রতি, যাদের জন্ম ১৯৭১ সালের বহু পরে। যা হোক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জামায়াতের; তারা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ? দলের, জোটের এবং বাংলাদেশের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ।’ উদ্ধৃতি শেষ।
২০১৬ সালের কলামের তিনটি অনুচ্ছেদ সম্মানিত পাঠক এখন পড়লেন। সম্মানিত পাঠক সেটিকে ২০১৯ সালের বাস্তবতার সাথে এখন মেলাবেন। জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন, কয়েকজনের হয়েছে ফাঁসি, কয়েকজন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ট্রাইব্যুনাল গঠন বা পরিচালনা ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা আজকের কলামের লক্ষ্যবস্তু নয়। তবে একটি বিষয় অনুমান করা যায়, সেটি হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচার ছাড়াও আরো দশ রকমের মামলা-মোকদ্দমার কারণে জামায়াতে ইসলামী নামক দলটি অবশ্যই বিপর্যস্ত; অথবা বিপর্যস্ত না হলেও ব্যতিব্যস্ত ও ক্লান্ত। জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী বলেই তারা এখনো ওই পর্যায়ে আছে, যতটুকু দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে। সরকারি ঘোষণা মোতাবেক যুদ্ধাপরাধের বিচার চলবে; উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী দলটি নিষিদ্ধ হওয়ার পথে আছে। এই প্রেক্ষাপটে, প্রধানমন্ত্রী কি রাজনৈতিকভাবে কোনো নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করবেন বা জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের ছত্রছায়ায় তিনি কি নমনীয় মনোভাবের ইশারা দিচ্ছেন? উত্তরটি সহজ নয় বা তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া সম্ভব নয়। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক কৌশলগত খেলা অথবা (অন্য ভাষায়) রাজনৈতিক খেলার কৌশলগুলো, সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সাধারণ কর্মীদের পক্ষে সাথে সাথে বোঝা মুশকিল। এ কথা আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী- সবার জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশি প্রজন্ম যে দলেই থাকুক না কেন, তারা বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক রাজনীতি করবে, এটাই কামনা। বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে তাদের মধ্যে কেউ বামপন্থী হতে পারে, কেউ ডানপন্থী হতে পারে।
বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে কেউ ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতে পারে আবার কেউ ধর্মীয় মূল্যবোধ গৌণ মনে করতে পারে। বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে, কেউ আমেরিকার প্রেমপ্রীতিকে মূল্য বেশি দেবে, কেউ চিনের প্রেমপ্রীতিকে মূল্য বেশি দেবে আবার কেউ ভারতের প্রেমপ্রীতিকে মূল্য বেশি দেবে। তবে যে যা-ই ভাবুক না কেন বা যে যা-ই করুক না কেন, মুক্তিযোদ্ধা রাজনৈতিক কর্মী ইবরাহিম মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাকে মেনে নিয়ে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অলঙ্ঘনীয় প্রত্যয় নিয়ে এবং অগ্রগতির একাধিক বিকল্প হাতে নিয়ে আজকের তরুণ সম্প্রদায়ের রাজনীতি করা উচিত। ভবিষ্যতের সীমান্তরেখা (ইংরেজি পরিভাষায় : হরাইজন্স অব দি ফিউচার) এত দ্রুত বর্ধনশীল যে, অতীতের কোনো একটি পয়েন্টে চিন্তাশক্তিকে বন্দি রাখার কোনো সুযোগ প্রগ্রেসিভ পলিটিক্স বা অগ্রসর রাজনীতিতে নেই।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।