Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমানো জরুরি

শাহ আব্দুল হান্নান | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

আমি একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করছি। একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তি, যিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে মধ্য পর্যায়ে চাকরি করেন। তার স্ত্রীর ঘাড়ে একটি টিউমার হয়। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার চিকিৎসা, ভাড়া এবং ওষুধ খরচ বাবদ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। একজন নিউরো সার্জন যিনি এই ঘাড়ের টিউমারের ওপারেশন করেন তিনি ওপারেশন ফি দাবি করেন ২ লক্ষ টাকা। শেষ পর্যন্ত ১.৫ লক্ষ টাকায় রফা হয়। এই সার্জন তার অপারশেন ফি হাসপাতালের মাধ্যমে নেন নাই, সরাসরি নিয়েছেন। অর্থাৎ এই টাকার তিনি ইনকাম ট্যাক্স দেবেন না। এই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্যে হাসপাতালের মাধ্যমে না নিয়ে সরাসরি নিয়েছেন, যার কোনো হিসাব কোথাও থাকবে না। এভাবেই ডাক্তারদের একটি অংশ ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন। এর জন্য প্রয়োজন বিধি করা, যেন কেউ হাসপাতালে অপারশেন করলে তার ফি হাসপাতালের মাধ্যমে নেন, যাতে হিসাব রক্ষিত থাকে। তাহলে তিনি ইনকাম ট্যাক্স দিতে বাধ্য হবেন। বিষয়টি একদিকে আর্থিক অন্যদিকে নৈতিকতাও বটে।

উল্লেখ্য, ওই ভদ্রলোকের এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। তিনি বেশ কিছু জায়গা থেকে ধার কজ করে হাসপাতলের বিল এবং অপারেশন ফি দেন।
সরকারি চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করা দরকার। সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় এবং নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত লোকেরা যেন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। কয়েকটি ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসার সুবিধা সরকারি হাসপাতালে বাড়াতে হবে । যেমন ক্যান্সার, কিডনি ডায়ালাইসিস, হার্ট বাইপাস, হার্টের রিং পরানো ইত্যাদি
এসব চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে অপ্রতুল হওয়ায় সাধারণ জনগণ প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনেক কিছু বিক্রি করে চিকিৎসা ব্যয় মিটাচ্ছে। এমনকি অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে। আমি পূর্বে লিখেছিলাম, এইসব ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা খরচ তা সরকারি হাসপাতালেই হোক আর প্রাইভেট হাসপাতালেই হোক সরকারের বহন করা উচিত। এর ফলে প্রতি বছর সরকারের ৫০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে না। বাংলাদেশের বাজেট প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা। এ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বের করা বড় ব্যাপার নয়। এবার আসি সার্জন সাহেবদের অপারেশন ফি সম্পর্কে। এই ফি এত বেশি হওয়া, যেমন পূর্বে উল্লেখ করেছি, কোনো যুক্তিসংগত কারণ নাই, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। সুতরাং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ফি নির্ধারণে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন।
প্রাইভেট হাসপাতালসমূহে শতকরা ১০ ভাগ রোগীর, যারা বেশি দরিদ্র তাদের চিকিৎসা ফি ন্যূনতম করা উচিত বা একেবারেই না নেয়া উচিত। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেক ঝামেলা। আউটডোরের মাধ্যমে গেলে ভর্তি হতে অনেক সময় লাগে। আবার ইমার্জেন্সিতে সব রোগী যেতে পারে না। তাদের রোগের ধরন ইমার্জেন্সি নয়। এ জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন যে, প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে কিছু কাউন্টার করা হবে যার মাধ্যমে ৫০% রোগী ভর্তি হতে পারবে, কেবল তাদেরকে কোনো ডাক্তারের ভর্তি হওয়ার সুপারিশ দেখাতে হবে। অন্য ৫০% ভাগ রোগী আউটডোরের মাধ্যমে বা ইমার্জেন্সির মাধ্যমে ভর্তি হতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই, কী কী কারণে বাংলাদেশের মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, কিছু রোগের চিকিৎসা ব্যয়। এ কারণে আমার প্রস্তাব হলো, সরকারি হাসপাতালে এসব রোগের চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করা, এমনকি সামগ্রিকভাবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো। এ ছাড়া নিঃস্ব হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। যেহেতু ভাঙ্গন এলাকাগুলো চিহ্নিত সুতরাং সরকারের একটি ভাঙন বিপর্যয়রোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকতে হবে। আর কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। মামলার কারণে অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। অধিকাংশ মামলাই ভিত্তিহীন। এ ব্যাপারে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় যেন আরো তদারকি করে, যেন অহেতুক মামলা না হয় এবং লিগ্যাল এইড ফান্ড সরকারি উদ্যোগে চালু করা হয়। বিষয়গুলি নিয়ে কর্তৃপক্ষ, কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে।
লেখক: সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার।



 

Show all comments
  • শেখ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:০৬ এএম says : 0
    ধন্যবাদ লেখক শাহ আব্দুল হান্নান সাহেবকে চিকিৎসা সেবার বিষয়টি নিয়ে সুন্দর উপস্থাপনার জন্য। আমিও আশা করি মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে বিল উত্তাপন করবেন। জনগনের সরকার জনগণের ভাল দিকটাই চিন্তা করবেন বলে আমি মনে করি। আর স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীল হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আবুল কালাম আজাদ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৬:৪৭ পিএম says : 0
    আশ করি কর্তৃপক্ষ সুনজর দিবে। আমাদের সকলের দাবি দাওয়া গুলো বিবেচনা করবেন। আপনার যুক্তি গুলো 100% যুক্তিসংগত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা ব্যয় কমানো
আরও পড়ুন