পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমান আর্ন্তজাতিক রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ভেনেজুয়েলা সংকট। দক্ষিণ আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দেশ ভেনেজুয়েলার এই রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত হয় ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও পরবর্তীতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে যখন দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো শপথ নিতে যান। কেননা, এসময় বিরোধী দলগুলো নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনেন।
এই সুযোগে, জাতীয় পরিষদের স্পিকার জুয়ান গুইদো সংবিধানের ২৩৩ এবং ৩৩৩ অনুচ্ছেদ অনুুযায়ী নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দাবি করেন। জুয়ান গুইদোর এই দাবিতে সমর্থন জানিয়ে বিরোধী দলগুলো তার নেতৃত্বে ডেমোক্রেটিক ইউনিটি রাউন্ডটেনিল (এসইউডি) দল গঠন করে। বিরোধী এই শিবিরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেনসহ ৫০টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে, নিকোলাস মাদুরোর নেতৃত্বকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া, চিন, তুরস্ক। অবস্থা দৃষ্টে ভেনেজুয়েলা সংকটকে কেন্দ্র করে ‘স্নায়ু যুদ্ধ’ সৃষ্টি হয়ে গেছে দুই শিবিরের মধ্যে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দানের মুখ্য কারণ হচ্ছে, ভেনেজুয়েলার জ্বালানি সম্পদের প্রতি আগ্রহ। যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি বিভাগের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেলের মজুদ আছে ভেনেজুয়েলায়। পরিমাণের দিক দিয়ে তা ৩,০০,৮৭৮ মিলিয়ন ব্যারেল। মজুদের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব। জ্বালানি তেলের এই বিশাল মজুদের দিকে অতি আগ্রহের কারণে জুয়ান গুইদোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তা ষ্পষ্ট।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে একজন স্থায়ী বন্ধুর খোঁজ করছে বহুদিন ধরে। হুগো শ্যাভেজের (মাদুরোর পূর্ববর্তী শাসক) শাসনকালে যা সম্ভবপর হয়নি। শ্যাভেজ ভেনেজুয়েলাকে অর্থনেতিক সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বন্ধুরাষ্ট্র কিউবা, চিন, রাশিয়াকে সস্তায় তেল সরবরাহ করা ছাড়াও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সময় থেকে চলে আসা মুদ্রাষ্ফীতি, দারিদ্র্য, মাদুরোর শাসনকালে এসে প্রকট আকার ধারণ করে।
যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, মাদুরোর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ও অর্থনৈতিক সংকটকে পুঁজি করে জুয়ান গুইদোকে ক্ষমতার কেন্দ্রে আনতে। তবে, সিরিয়া প্রেক্ষাপটকে উদাহরণ হিসাবে ধরে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা এত সহজ হবে না। কারণ, ভেনেজুয়েলায় মাদুরোর সরকারকে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রগুলো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাই ভেনেজুয়েলায় চলমান সংকটকে আগেভাগেই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া বিশ্বনেতাদের এখন আশু কর্তব্য।
মো. হাসান তারেক
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ড. মালিকা কলেজ, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।