Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

নববধূর মেহদীর রঙ্গ মুছে যাওয়ার আগেই চির বিদায়!

বালাগঞ্জ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:১১ এএম

নববধূ মাহফুজা আনজুম তাসনীম তাপাদারের (২০) হাতের মেহদীর রঙ মুছে যাওয়ার আগেই প্রাণ কেড়ে নিল ঘাতক বাস। চিরদিনের জন্য চলে গেলেন না ফেরার দেশে। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে গেল চারটি পরিবারের সকল স্বপ্ন। নববধূর স্বপ্ন ছিল প্রবাসী স্বামীর হাত ধরে চলে যাবে স্বপ্নের প্রবাসে। সবাইকে নিয়ে গড়ে তুলবে একটি সুখী সমৃদ্ধ পরিবার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে দিল না ঘাতক বাস! স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। ঘটনার সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হতে লাগলে শোকের ছায়া নেমে আসে ওসমানীনগরসহ গোটা সিলেটজুড়ে। ওসমননিগরে এ ঘটনার দুইদিন আগে এভাবে সড়ক দুর্ঘটরায় প্রাণ হারান আরেক মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শায়খুল ইসলাম। এ ঘটনার শোক শেষ হবার আগেই আরেকটি শোকে শোকাহত উপজেলার মানুষ। বিশেষ করে উপজেলার মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তাসনীম আলহাজ্ব মিনা বেগম নুরানীয়া মহিলা দাখিল মাদরসার সুপার ও ওসমানীনগর উপজেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুমের প্রথমা কন্যা। এ সময় নব বধুসহ নিহহত হন তিনজন । এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।

গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা পশ্চিমপাড়া মারকাজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাসের চালককে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও অটোরিকশা জব্দ করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নববধু তাসনীমের বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার হাতিডহর গ্রামে। নিহত অপর দুইজন নববধুর ননদ। নিহতরা হচ্ছেন, লিয়া বেগম (১৭) দক্ষিণ সুরমার মোহাম্মদপুর গ্রামের সৈয়দ মজলিস আলীর মেয়ে। তিনি দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আয়শা (১৮) একই গ্রামের লিয়াকত হোসেনের মেয়ে। তিনি দক্ষিণ সুরমা নুরজাহান মেমোরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। নিহত লিয়া ও চাঁদনী একে-অপরের চাচাতো বোন। আহতরা হলেন- মোগলাবাজার থানারেেমাহাম্মদপুর গ্রামের মরহুম সৈয়দ লিলু মিয়ার ছেলে ও নববধুর স্বামী সৈয়দ জুবায়ের হোসেন এবং অটোরিকশা চালক।

জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি নববধু মাহফুজা আনজুম তাসনীমের বিয়ে হয় ফ্রান্স প্রবাসী সৈয়দ জুবায়ের হোসেনের সাথে। দাওয়াত খেতে শনিবার তাসনীম তার স্বামীকে নিয়ে তার নানার বাড়ি শহরতলীর আলমপুর অটোরিক্সাযোগে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা পশ্চিমপাড়া মারকাজের সামনে যেতেই এ নির্মম ঘটনার শিকার হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস প্রতিযোগিতা করে চালিয়ে আসা আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এ সময় হতাহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ওয়সিস প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে মাহফুজা আনজুম তাসনীম, লিয়া বেগম ও আয়শা সিদ্দিকা চাঁদনীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ নির্মম দুর্ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বদিকোনা এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ৩০ মিনিট ধরে চলা অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে।
মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, এ ঘটনায় বাস চালককে আটক করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করলেও পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ