Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সিলেট ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। দেশের প্রধানতম পর্যটন এলাকা হিসেবে এই দুই অঞ্চল পরিচিত। পাহাড়, টিলা, লেক আর বৈচিত্রপূর্ণ গাছগাছালিসমৃদ্ধ এ অঞ্চল পর্যটকদের বরাবরই হাতছানি দেয়। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সম্পদে পরিপূর্ণ অঞ্চল দেশে আর নেই। দুঃখের বিষয়, প্রকৃতির এই অপার দান আমরা রক্ষা করতে পারছি না। নির্বিচারে ধ্বংস করে চলেছি। পাহাড়, টিলা, গাছগাছালি কেটে প্রকৃতিকে ধ্বংস করার প্রতিযোগিতা চলছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রকৃতির এই দান যে রক্ষা করতে হবে, বিষয়টি উপলব্ধিই করছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানোর তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। অথচ বিশ্বের এমন অনেক দেশ আছে যাদের জিডিপির বেশিরভাগ জোগান দেয় পর্যটন শিল্প। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের মতো দেশগুলোর জিডিপিতে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আমাদের দেশে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও জিডিপিতে তার কোনো অবদান নেই বললেই চলে। এদিকটি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। পর্যটন শিল্পকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং এ থেকে কীভাবে ব্যাপক আয় সম্ভব, তা নিয়ে পরিকল্পনার কথা খুব কমই শোনা যায়। আমরা দেখেছি, সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অসাধারণ সব রিসোর্ট গড়ে তুলে আয়ের উৎস সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্যটকরাও সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। অথচ এর বিপরীত চিত্র বৃহত্তর চট্টগ্রামে। এখানে পর্যটনের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকলেও তা বিভিন্নভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। পাহাড় ও গাছপালা কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। উন্নয়ন এবং পাহাড় কেটে অবৈধ দখলের মাধ্যমে ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি খাতকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
উন্নয়নের বিষয়টি কেউই অস্বীকার করে না। তবে সে উন্নয়ন যদি আরেকটি খাতকে ধ্বংস করে দেয়, তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে এ কাজটিই করা হচ্ছে। যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব নিদর্শন এবং ভারসাম্য রক্ষাকারী যে পাহাড়টি কেটে বসতি বা উন্নয়ন কাজ করছে, সে পাহাড়টি তারা তৈরি করতে পারবে না। এ পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামে যত পাহাড় ও টিলা ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে কেবল প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এক হিসেবে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরী ও শহরতলির আশপাশের এলাকায় গত ২০ বছরে ছোট বড় শতাধিক পাহাড় ও টিলা ধ্বংস করা হয়েছে। পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে শুরু করে পার্বত্য বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে চলছে পাহাড় ধ্বংসের তান্ডব। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা প্রকৃতিবিনাশী এই কর্মকান্ড অদূর ভবিষ্যতে পুরো এলাকাটিকে যদি বিরানভূমিতে পরিণত করে তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা জানি, চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের কাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হোক, তাতে কারো আপত্তি নেই। তবে এই উন্নয়ন প্রকৃতিকে ধ্বংস করে করা কতটা যৌক্তিক? প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন কাজ করলে কী বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তা সম্প্রতি ব্রাজিলের একটি এলাকায় দেখা গেছে। সেখানে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রকৃতির রোষে সেখানের আশপাশের এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের কী পরিস্থিতি তা আমরা ভারতের বিরূপ পানিনীতির কারণে নদ-নদী মরে যাওয়া থেকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। উন্নত বিশ্বে যেখানে পাহাড়, পর্বত এবং বন-জঙ্গল ঠিক রেখে উন্নয়ন কাজ এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলছে, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মরুভূমিতে খাল কেটে পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করছে, সেখানে আমরা করছি ঠিক উল্টোটা। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডেও প্রকৃতিকে ঠিক রেখে অনিন্দ্যসুন্দর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে না লাগিয়ে তা অবিরত ধ্বংস করে চলেছি। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হুমকির মুখে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, লবণাক্ততা ভূমি গ্রাস করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে যেখানে পাহাড়, টিলা, বন সংরক্ষণ এবং বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, সেখানে ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে। এর চেয়ে আত্মবিধ্বংসী কাজ আর কী হতে পারে!
আমাদের কথা স্পষ্ট, পাহাড়, টিলা, বন সম্পদ যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। কোনো অজুহাতেই এসব ধ্বংস করা যাবে না। উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিবেশ বান্ধব করে চালাতে হবে। যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলছে, সেগুলো পরিবেশবান্ধব কিনা, তা পুনরায় যাচাই করা প্রয়োজন। এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যেমন প্রকল্পের প্রয়োজন, তেমনি অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নও জরুরি। বৃহত্তর চট্টগ্রামকে পর্যটনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বৃহৎ খাত হিসেবে গণ্য করে এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পর্যটন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী করে তুলতে হবে। যা কিছুই করা হোক না কেন, পাহাড়, টিলা ও বনের প্রাকৃতিক বৈচিত্র ঠিক রেখে করতে হবে। সারাবিশ্ব যেখানে পর্যটনকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। আমাদেরও এ খাতের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটন

৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন