পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দুধ পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর। খাদ্য হিসাবে দুধের বিকল্প নেই। দুধ শিশুর প্রধান খাদ্য, প্রবীণের শক্তির উৎস এবং রোগীর পথ্য। অতি প্রয়োজনীয় এই খাদ্যের ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ কিন্তু কম নয়। দুধে ভেজাল, তাতে নানা উপকরণের মিশ্রণ এবং দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদনের উপস্থিতি ইত্যাদি নিয়েই আমাদের এই উদ্বেগ। খোলা তরল দুধ হোক, প্যাকেটজাত তরল দুধ হোক কিংবা প্যাকেট ও টিনের গুঁড়ো দুধ হোক-কোনো দুধেরই মান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণায় দুধের মান সম্পর্কে যে সব তথ্য উঠে এসেছে তাতে উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ফুড ল্যাবরেটরি (এনএসএফএল) সম্প্রতি দুধ ও দুধজাত খাদ্যের মান নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। ওই গবেষনায় দুধ ও দুধজাত খাদ্যের মধ্যে অনুজীব, রাসায়নিক ও সিসা ইত্যাদির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। খোলা তরল দুধে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক সিসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেইসঙ্গে তাতে পাওয়া গেছে আফলাটক্সিন ও বিভিন্ন অণুজীব। প্যাকেটজাত তরল দুধেও অনুরূপ উপাদান লক্ষ্য করা গেছে। দইয়ের মধ্যেও পাওয়া গেছে সিসা ও অণুজীব। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেহে মাত্রাতিরিক্ত সিসা, আফলাটক্সিন ও কীটনাশক প্রবেশে করলে বিভিন্ন অঙ্গ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। তাছাড়া অণুজীব থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে নানা ধরনের মারাত্মক রোগ। তাদের মতে, অপ্রয়োজনীয় অ্যাটিবায়োটিকের প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা লোপ পাওয়ার ঝুঁকিও বিদ্যমান।
কেন বা কী কারণে দুধে এ ধরনের অযাচিত উপদানের উপস্থিতি ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, গোখাদ্য থেকেই এসব এসে থাকতে পারে। ন্যাশনাল ফুড ল্যাবরেটরির গবেষকরা গোখাদ্য নিয়েও গবেষণা করেছেন। তারা দেখেছেন, গোখাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি রয়েছে। সেখানে কীটনাশক মিলেছে এবং সিসা ও ক্রোমিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হয় না, গোখাদ্য থেকেই এসব উপাদান দুধে সম্প্রসারিত হয়ে গেছে। গোখাদ্যের মধ্যে ধানের খড় ও ঘাষই প্রধান। ধান ও ঘাষ উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া গাভীপালকদের অনেকে গাভীর বর্ধন, দুধ বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং, গোখাদ্য উৎপাদন ও গাভীর বর্ধন, দুধ বৃদ্ধি ও রোগবালাই দূর করার ক্ষেত্রে রাসায়নিক উপাদান ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে দুধ থেকে এসব উপাদান দূর সম্ভব হবে বলে মনে হয়না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, শুধু দুধ-দই বা দুধজাত খাদ্য নয়, অন্যান্য খাদ্যেও নিরাপত্তার ঝুঁকি মজুদ। এমন কোনো খাদ্য নেই যাতে ভেজাল নেই। শাক-সবজি, ফলমূল খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে যার উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার না হয়। সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক। মাছ- গোশতে ব্যবহৃত হয় ফরফামিলসহ নানা রাসায়নিক উপাদান। নতুন করে অর্গানিক কৃষি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এবং রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারে সচেতনতা এলেও সেটা যথেষ্ট নয়। বলার অপেক্ষা রাখেনা, নিরাপদ খাদ্য আমাদের প্রত্যাশিত হলেও এদিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। নিরাপদ খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। খাদ্য খাওয়ার পর যদি অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে হয়, চিকিৎসার জন্য বিস্তর খরচ করতে হয়, তাহলে সেই খাদ্য খাওয়ার কোনো মানে হয় না। মানুষ কি খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে? পারে না। কাজেই, আমাদের নিরাপদ খাদ্যের সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
ন্যশনাল ফুড ল্যাবরেটরির গবেষকরা বলেছেন, দুধসহ সব ধরনের খাদ্যে রাসায়নিক ও অণুজীবের পরিমাণ জানার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ দরকার। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। এই নিবিড় পর্যবেক্ষণ একদিকে আমাদের খাদ্যের মান সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেবে, পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করবে অন্যদিকে কীভাবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে পন্থা ও ব্যবস্থা নির্ধারণে সহায়তা দেবে। ন্যাশনাল ফুড ল্যাবটরির গবেষণায় আমরা দুধ ও দুধজাত খাদ্যের মান সম্পর্কে যা জেনেছি তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও এ নিয়ে হৈচৈ করার অবকাশ নেই। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তরফে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘শিশুদের বাজারের দুধ খাওয়ানো উচিৎ কিনা’। এসএফএসএলের প্রধান শাহনাজ ফেরদৌস এর সরাসরি জবাব দেননি। শুধু বলেছেন, ‘আমাদের এই দুধই তো খেতে হচ্ছে।’ হ্যা, আমাদের এ দুধই খেতে হচ্ছে। এখনই দুধ ছেড়ে দেয়া যাবে না। বিকল্প না থাকায় তা খেতেই হবে। তবে যতদ্রুত সম্ভব দুধ নিরাপদ করার উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে আশু নজর দেবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।