পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আন্ত:সীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে স্বীকৃত। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং বিএসএফ’র পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধ হয়নি। এহেন বাস্তবতায় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে বাংলাদেশীদের নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি মহাপরিচালকের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং নাগরিক সমাজে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। গত বুধবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে ‘সীমান্ত ডেটা সেন্টার’ উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: সাফিনুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের কারণে সংঘটিত সব হত্যাকান্ডই সীমান্ত হত্যাকান্ড নয়। তাঁর মতে, সীমান্তের উভয় অংশে ১৫০ গজের মধ্যে নোম্যান্স ল্যান্ডে হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে তবেই তা সীমান্ত হত্যাকান্ড হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে, বেশীরভাগ হত্যাকান্ড ঘটছে ভারতের ১০-২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে, অতএব এসব হত্যাকান্ড সীমান্ত হত্যাকান্ড নয়। যেখানে সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে শুধু হত্যাকান্ডই সংঘটিত হচ্ছে না, বিএসএফ সদস্যদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে নিরীহ মানুষদের উপর নির্যাতন ও লুণ্ঠনের ঘটনারও নজির আছে সেখানে সীমান্ত হত্যাকান্ড নিয়ে বিজিবি মহাপরিচালকের বক্তব্য অনেকটা বিএসএফ’র পক্ষে সাফাই গাওয়ার মতই শোনায়।
নিজের বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক এটাও বলেছেন যে, কোনো হত্যাকান্ডই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতীয়দের প্রতিশ্রুতি সত্তে¡ও সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধ হচ্ছে না। দেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে এ বিষয়ে বিজিবি ডিজির বক্তব্যে যে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া উঠে আসার কথা, তার বিপরীত বক্তব্যে দেশের মানুষ হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাদকের চালান ও অবৈধ অস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে। এসব চোরাচালানের সাথে ভারতীয়রা জড়িত রয়েছে। বিএসএফ’র সহযোগিতা বা প্রশ্রয় ছাড়া কোটি কোটি টাকার ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও মাদকের ব্যবসা বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বিজিবির ব্যর্থতাও অস্বীকার করা যাবে না। নিরীহ সাধারণ মানুষ, ফেলানীর মত কিশোরী অথবা গুরু ব্যবসায়ীরা বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হলেও মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানীদের কিছুই হয়না। বিএসএফ ও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে এই ব্যবসায় চালিয়ে যাওয়া কি সম্ভব? গরু চোলাচালানের কারণে যদি সীমান্তের নিরীহ মানুষদের বিএসএফ’র গুলির সম্মুখীন হতে হয়, পক্ষান্তরে সমাজ ধ্বংসকারী মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিরা কেন বিএসএফ/বিজিবি’র গুলিতে নিহত হচ্ছে না, এই প্রশ্ন আসতেই পারে।
বিজিবি ডিজির বক্তব্যে কিছুটা কৈফিয়ত ও ব্যাখ্যা থাকলেও তার এই বক্তব্যে সীমান্ত হত্যাকান্ড বন্ধে ভারতীয়দের প্রতিশ্রুতি ও ব্যর্থতার কোনো অনুসঙ্গ নেই। বেশীরভাগ হত্যাকান্ড নোম্যান্সল্যান্ডের বাইরে ভারতের ১০-২০ কিলোমিটার ভেতরে ঘটলেও এর পক্ষে সাফাই গাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিরস্ত্র গ্রামবাসী বা গরু ব্যবসায়ীদের সীমান্তে অনুপ্রবেশের শাস্তি বিনা বিচারে মেরে ফেলা নয়। কোনো দেশের আইনেই এটা সমর্থনযোগ্য নয়। ভারতের চারপাশে আরো অন্তত চারটি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে, কোথাও এমন নির্বিচার হত্যাকান্ড ঘটছে না। বাংলাদেশ যেন ব্যতিক্রম। সীমান্তের কাঁটাতারে কিশোরী ফেলানীর গুলিবিদ্ধ লাশ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রতীক হয়ে আছে। এই সীমান্তকে বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতি সীমান্ত হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্যসহ শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, যার সিংহভাগই ভারতের অনুকুলে। লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরী করে বছরে বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থানের সংকট ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব সত্তে¡ও এসব বাস্তবতায় তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্বেগও দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু বিজিবি মহাপরিচালক যখন সীমান্ত হত্যাকান্ডকে পরোক্ষভাবে হালকা করে দেখানোর প্রয়াস চালান, যা অনেকটা বিএসএফ’র বক্তব্যের মত শোনায়, তখন দেশের মানুষের দু:খ রাখার আর জায়গা থাকে না। আমরা দেখতে চাই সীমান্তে সব ধরনের অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধে বিজিবি সাহসী ও সফল ভুমিকা পালন করছে। বিশেষত: মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অবাধ অনুপ্রবেশে দেশের যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে, অপরাধ ও সন্ত্রাস বেড়ে চলেছে। কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর এবার বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে শত শত বার্মিজ বৌদ্ধদের অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়ার চেয়ে এসব বিষয়ে নজর দেয়াই বিজিবির কাছে মানুষের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।