পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। প্রেসিডেন্টের এ আহ্বান ও বক্তব্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণেও একইভাবে জাতীয় ঐকমত্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ঐক্যসূত্র কী হবে, সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমাদের ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের দৃষ্টিতে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করবো। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে, বলা বাহুল্য, তেমন কোনো পার্থক্য দেখছি না। তারা উভয়ই জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য জাতীয় ঐক্যমত্যের প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা স্বীকার করেছেন। আমরা একে তাদের আত্মপোলব্ধির পরিচায়ক বলেই মনে করি। তাদের এ বক্তব্য থেকে এটাও স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দেশে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে এবং তারা মনে করেন বা বিশ্বাস করেন, সকল প্রকার বিভেদ ও মতপার্থক্যের অবসান হওয়া জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই জরুরি। এ উপলব্ধির জন্য আমরা তাদের অকুণ্ঠ সাধুবাধ ও ধন্যবাদ জানাই।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতির মধ্যে দুঃখজনক হলেও একটা দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। জাতি স্পষ্টত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এটা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্বার্থের দিক থেকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাম্য, সুশাসন, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্যও প্রতি বন্ধকস্বরূপ। জাতির মধ্যে এই অনাকাক্সিক্ষত বিভক্তির জন্য অসহিষ্ণু, সংঘাতময় ও প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতিই মূলতঃ দায়ী। বিগত একদশক ধরে যারা ক্ষমতায় আছেন, এক্ষেত্রে তাদের দায় সবচেয়ে বেশি। কারণ, তারা বিভেদ সংকুচিত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সক্ষম হননি। বরং এই সময়ে বিভেদ-বিভক্তি বেড়েছে এবং জনগণ পর্যায়ে তা সম্প্রসারিত হয়ে পড়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। সব দলের অংশগহণই তার প্রমাণ। সেই নির্বাচন কেমন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, সেটা দেশবাসীর অজানা নেই। নির্বাচনটি সকলের কাছে প্রশ্নাতীত ও গ্রহণযোগ্য হলে জাতীয় অন্যান্য ক্ষেত্রে ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রশ্নে তা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারতো। নির্বাচন বিভেদ-বিভক্তিকে যে আরো শক্তিশালী করেছে, তাতে অনেকের মধ্যেই কোনো সন্দেহ নেই। এমতাবস্থায়, বর্তমান সরকারকেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করতে হবে। শুধু আহ্বান জানালে বা ডাক দিলেই হবে না, কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঐক্যই শক্তি। জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ হয় কিংবা ঐক্যবদ্ধ থাকে, তখন জাতীয় অগ্রগতির পথে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। জাতীয় ঐক্যের শক্তি সকল অপশক্তি ও বাধাবিপত্তিকে চুরমার করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবিস্মরণীয় বিজয় জাতীয় ঐক্যের শক্তিরই বিজয়। এর এর আগে এবং পরে জাতি যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই সুফল ও সাফল্য এসেছে। কাজেই, শান্তি, সাম্য, ন্যায় বিচার, সুশাসন, উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করতে জাতীয় ঐক্যের বা ঐকমত্যের বিকল্প নেই।
বিভক্তি যেমন জাতীয় ঐক্য গঠন এবং জাতীয় মৌলিক প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসবে, আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। রাজনৈতিক অঙ্গণে এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে, তা দেশের জন্য মোটেই অনুকূল নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকটের কোনো সুরাহা তো হয়ইনি, উল্টো তা আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কাই দেখা দিয়েছে। সংসদে কার্যত বিরোধী দল নেই। সেখানে ‘নিজেরা করি’ ধরনের একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা প্রকৃত বিরোধী তারা সংসদে নেই; তাদের নির্বাচিত ৮ জন সংসদের বাইরে রয়ে গেছেন। ওদিকে নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর নেতাকর্মীরা যে দমন-পীড়নের মুখে ছিল, এখনো সে রকমই আছে। তাদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলাগুলোতে জামিন পর্যন্ত হচ্ছে না। হাইকোর্টে জামিনের জন্য তাদের ভিড় করতে হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারের উচিৎ মামলাগুলো তুলে নিয়ে তাদের মুক্ত করে দেয়া এবং নতুন মামলায় আসামী করা থেকে বিরত থাকা। এই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেয়া ও মতামত প্রকাশের অধিকার স্বীকার করা। এতে রাজনৈতিক অঙ্গণে একটা আস্থার পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে, যা এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা বজায় রেখে জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক অঙ্গণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বশর্ত। অশান্তি ও অস্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকলে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যহত হতে বাধ্য। এটা কারো অজানা নেই, বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। যা হচ্ছে, তার ৮৪ শতাংশই বেসরকারি। অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়বে না। ব্যবস্যা-বাণিজ্যে গতি আসবে না। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অর্থ পাচার ও দেশত্যাগ বাড়বে, যা বিগত বছরগুলোতে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ করেছি। কাজেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোক্তাদের টেনে আনতে হবে, ধরে রাখতে হবে; অর্থনীতির প্রতিটা ক্ষেত্রে ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ন্যায়, সুশাসন এবং সুবিচার অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে নাগরিক নিরাপত্তা ও শান্তি সুনিশ্চিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।