Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি : মানববন্ধনে বিএনপি

৩-৬ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

৩০ ডিসেম্বর দেশে কোন নির্বাচন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর যা হয়েছে তা ভুয়া নির্বাচন। সরকার ও নির্বাচন কমিশন ষড়যন্ত্র করে যে তথাকথিত এমপিদের নাম ঘোষণা করেছে এবং একটি সংসদ ঘোষণা করেছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও এর সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। এই সংসদ ডাকাতির সংসদ, এই সংসদ অবৈধ সংসদ, এই সংসদ সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক দেশসমূহের কলঙ্কিত সংসদ এবং এই সংসদ তথাকথিত সংসদ। এই সংসদ ১৯৭৫ সালের মতো একদলীয় দখলদারিত্বের সংসদ। তারা নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদকে প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন।
গতকাল (বুধবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের ভোটকে ভুয়া ভোট আখ্যা দিয়ে নির্বাচিত সংসদ অধিবেশন বসার প্রথম দিনে এর প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করে বিএনপি। পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ি বেলা ১১টা থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। তবে এর ঘণ্টাখানিক আগে থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে পরেন। তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং এই সংসদকে অবৈধ উল্লেখ করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরেই মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭৫ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধংস করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় আজকে তারা জনগণের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একদলীয় দখলদারিত্বের সংসদ গঠন করেছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে সম্পূর্ণ ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে সংসদ বসিয়েছে। নির্বাচনের পূর্ব থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের সাথে সাথে বলেছি, আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছি এবং তখন আমরা বলেছিলাম পুনরায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে সরকার গঠন করতে হবে। আজকেও আবার আমরা সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করছি, অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠান করতে হবে এবং জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে রায় দিতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এদেশে জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণ ধবংস করে দিয়ে রাষ্ট্রকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত ষড়যন্ত্র তারা পাকাপোক্ত করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখেই খালেদা জিয়াকে একবছর আগেই মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গ্রেপ্তার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয় নাই। আজকে যারা এই প্রহসন নাটক করেছে তারা অতীতেও বাকশাল কায়েম করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিলো। আজকেও তারা ২৯ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি করে আবার অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। আমরা এই সংসদ মানি না। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে যাই নাই। অনেকে সেসময়ে অভিযোগ করেছেন কেনো আমরা সেই নির্বাচনে যাইনি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যে যাই নাই সেটা সঠিক ছিলো এবং শেখ হাসিনার অধীনে যে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। এটা আজকে প্রমাণিত হয়েছে। সারা বিশ্বে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখান করেছে তারা বলেছে এটি কোনো নির্বাচন হয় নাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন খন্দকার মোশাররফ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যে সংসদ বসছে সেটা জনগণের সংসদ নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই নির্বাচনের ওপর আমরা তথ্য ভিত্তিক একটি শ্বেতপত্র বের করবো। সেখানে আপনারা দেখেবেন এই নির্বাচনটিতে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে এবং ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে পেরেছে। বাকীদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয় নাই। এই নির্বাচনটা করেছে প্রশাসন, পুলিশ ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। এই নির্বাচনের সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক ছিলো না।
তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচনে হতবাক হয়েছি, অবাক হয়েছি। আমি তো নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম, মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। আমাদের কারোই বের হওয়ার কথা নয়। এরকম আমরা কোনোদিন প্রত্যাশা করি নাই যেটা এবার আমরা দেখলাম। বিএনপি নেতা বলেন, এ নির্বাচন আমরা প্রত্যাখান করেছি। অবিলম্বে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন হতে হবে এবং নিরপেক্ষ ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। তাহলেই আমরা কার্যকর সংসদ দেখতে পারবো, জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। সেটা করার জন্য সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দলের কারাবন্দি নেতাকর্মীদের আবারা মুক্ত করে তাদের পুনর্বাসন করে নতুন নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্য নতুন নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনেরও কথা বলেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, একাদশ সংসদে আজকে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা হচ্ছেন ভুয়া ভোটের প্রতিনিধি। এরা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় শুধু রিগিং নয়, তাদের সহায়তায় ভোট সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। তিনি বলেন, এদেশে ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। আমরা যেটা দেখেছি ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ২৯ ডিসেম্বর ব্যালট বাক্স বোঝাই করা হয়েছে। যার ফলোশ্রুতিতে অকার্যকর সংসদ হয়েছে। এটা আমরা কথা নয়, বিশ্বের নামী-দামি মিডিয়া, আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, এনবিসি, এবিসি থেকে শুরু করে রয়টার্স, ফ্রান্সের এএফপি, জার্মানির ডয়েচে ভ্যালে, বিলাতের ইকোনিস্ট, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ, বিসিসি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি মিডিয়াতে একটি কথা বলা হয়েছে সেকথা হচ্ছে- বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতারা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরের উত্তরের এটিএম শামসুল হক, ছাত্র দলের আকরামুল হাসান প্রমূখ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান ঢালী, বিলকিস জাহান শিরিন, জহিরউদ্দিন স্বপন, নবী উল্লাহ নবী, মীর নেওয়াজ আলী, হারুনুর রশীদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, অঙ্গসংগঠনের নূরুল ইসলাম নয়ন, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান প্রমূখ।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:১৪ এএম says : 0
    সাব্বাস বিএনপি আপনারাই জাতীয় বীর। আপনাদেরকে ধন্যবাদ এত বড় দৈত আপনারা করিবেন কতোপকাত। ইনশাআল্লাহ। তবে শাবধান। আপনাদের পক্ষ ছাড়া দৈত পক্ষ নাই। ইনশাআল্লাহ। জাতীয় বেঈমানদের ছার দিবেন না। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • md a rahman ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৩২ এএম says : 0
    আমি চাই একটি সুন্দর বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ