Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী বাজেটে ট্যাক্স রেট কমানো হবে। ট্যাক্স রেট কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এখন তিন লাখ কোটি টাকা কর আদায় করা হচ্ছে, ট্যাক্স রেট কমিয়ে চার লাখ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে। ট্যাক্স রেট এবং রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য ও আশাবাদ বিশেষভাবে প্রতিধানযোগ্য। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো জানিয়েছেন, ট্যাক্সের প্রতিটি আইটেম নিয়ে স্টাডি করা হবে। কোন আইটেমে ট্যাক্স কমানো যায়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ভ্যাট হার এক হবে না। পণ্যভিত্তিক আলাদা ভ্যাট হার হবে। এব্যাপারে ব্যবসায়ীসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজস্ব আয় রাষ্ট্রের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশ এবং জনগণের জীবনমানের উন্নতিতে রাজস্ব আয়ের ভূমিকা ও অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্বীকার করতে হবে, আমাদের রাজস্ব আয় যথেষ্ট নয়। এমন কি আশাব্যঞ্জকও নয়। প্রতি বছর রাজস্ব আয়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বছর শেষে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কিছু না কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে। চলতি বছর রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বছরের প্রথম ৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা কম। আলোচ্য সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৯৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। তবে গত অর্থ বছরের তুলনায় আদায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে। অবশিষ্ট ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা ও তৎপরতার ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনীতির আকার অনুপাতে আমাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও আদায় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আয় আরো বেশি হওয়ার কথা। হচ্ছে না কেন, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। অনেকে মনে করেন, ট্যাক্স নির্ধারণে ত্রæটি ও অসঙ্গতি আছে, আছে দুর্নীতি ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা। ট্যাক্সের আওতা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও আছে দূর্বলতা। আওতা যেভাবে ও যতটা বাড়ার কথা, আজও সেভাবে ততটা বাড়েনি। ট্যাক্স দেয়ার সক্ষমতা আছে এমন বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্যাক্স দেয় না। কারণ, তাদের ট্যাক্সের আওতাভুক্তই করা হয়নি। যারা ট্যাক্সের আওতাভুক্ত, তারা অনেকে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রাপ্তব্য ট্যাক্স পরিশোধ করেনা বা কম পরিশোধ করে। ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একাংশ নানা ফন্দি-ফিকির করে ট্যাক্স ফাঁকি দেয় বা দেয় না। উচ্চ ট্যাক্স রেট ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার বা না দেয়ার একটা বড় কারণ। এছাড়া ট্যাক্স আদায় প্রক্রিয়া জটিল এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দুর্নীতির নানা সুযোগ ও ফাঁক-ফোকড় রয়েছে। ট্যাক্স না দিলে ভালো, দিতে গেলে শত ঝামেলা, এমন একটা কথাও চালু আছে। ট্যাক্স আদায় ও পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি সহজ ব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও অভয় পরিবেশের অভাব বিদ্যমান রয়েছে। ট্যাক্স দিতে সক্ষম প্রতিটি ব্যক্তির ট্যাক্স পরিশোধ করা অপরিহার্য দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে তাদের স্বত:র্স্ফূতভাবেই এগিয়ে আসা উচিৎ, যা আমরা খুব কমই লক্ষ্য করি। এক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি, যার অভাব রয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য সিস্টেম, বান্ধব পরিবেশ এবং ন্যায়সঙ্গত ট্যাক্স রেট প্রর্বতন করা হলে রাজস্ব আদায় এখনকার তুলনায় অনেক বাড়তে পারে বলে স্বভাবতই আশা করা যায়।
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আয় বাড়ানোর যে দুটি যৌক্তিক পন্থার কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আয় না বাড়ার কোনো কারণ নেই। ট্যাক্স রেট কমিয়ে যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নির্ধারণ করা হলে ট্যাক্স না দেয়া বা ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা যেমন কমবে তেমনি অনেকেই ট্যাক্স দিতে এগিয়ে আসবে। ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ ও ক্ষেত্র আছে। যেসব মানুষ ট্যাক্স দিতে সক্ষম তাদের সকলকে যদি ট্যাক্স নোটের আওতায় আনা যায় তবে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। কাজেই অর্থমন্ত্রী যে বলেছেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন কোন আইটেমে ট্যাক্স রেট কমানো যায়, সেটা দেখা হবেÑএটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোরও বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে রাজস্ব আয় বাড়াতেই হবে। যে সুযোগ সামনে আছে তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। কথাই বলে, ‘রাই কুড়াতে কুড়াতে বেল’। ট্যাক্স রেট কমিয়ে ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব আয় মোটা অংকে বাড়ানো সম্ভবপর, এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরো কার্যকর অবস্থায় দেখতে চাই। এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা-স্বচ্ছতা ও উচ্চ দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্যাক্স


আরও
আরও পড়ুন