Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হতাশা দুর্বলতা নয়, একটি রোগ

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

প্রত্যেকের সুখ এবং আনন্দের অভিজ্ঞতা যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই দুঃখ এবং হতাশার অভিজ্ঞতাও আছে। কোনও কারণে মনে হতাশা জš§ালে তা ক্রমে বহুদূর বিস্তৃত হয়। এমনকী কোন কোন ক্ষেত্রে কর্মশক্তিকে পঙ্গু করে ফেলে। দু’ সপ্তাহের বেশি হতাশায় ভুগলে শরীরে নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে মহিলারাই বেশি পরিমাণে হতাশায় ভোগেন। বিশ্বস^াস্থ্য সংস্থা এ স¤পর্কে পৃথিবী জুড়ে সমীক্ষাও চালিয়েছিল। সংস্থার মতে, মহিলাদের বহু রোগের একমাত্র কারণ হচ্ছে দীর্ঘদিনের হতাশা। উন্নত দেশগুলোতে মহিলাদের মধ্যে হতাশা একটা মারাত্মক ব্যাধিরূপেই পরিগণিত হয়েছে। বিশ্বস^াস্থ্য সংস্থার এ সমীক্ষাকে মেজর ডিপ্রেশন (ইউএমডি) বলে অভিহিত করা হয়েছে।

এ সমীক্ষার সময় মনস্তাত্তি¦ক দৃষ্টিভঙ্গিতে হতাশার কারণগুলো নির্ণয় করা হয়েছে। এ ধরনের মহিলাদের অবয়বেই তাদের হতাশা ধরা পড়ে। তাদের বেঁচে থাকার আর কোনও প্রয়োজন নেই বলেও অনুভব করে থাকে। কেউ কেউ কোন কোন সময় নিজেকেই দোষী বলে মনে করে, এতে হাতাশার পরিমান ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান সমাজের কাছে নিজেকে অনুপযুক্ত বলে মনে করার সঙ্গে সঙ্গে তারা কোনও ধরনের উৎসাহজনক কাজেও অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে না। এ ধরনের মহিলারা কোনও কাজে মনযোগ দিতে পারে না। কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এ ধরনের রোগে আক্রান্ত মহিলাদের ঘুমও ঠিকমত হয় না। হতাশাগ্রস্ত মহিলারা কোনও ক্ষেত্রেই প্রাণ খুলে হাসতে পারে না। আর এ দীর্ঘদিনের হতাশার ফলস^রূপ তাদের স^াস্থ্যও ভেঙে পড়ে। তাদের জৈবিক ইচ্ছে বাসনাও ক্রমে নেতিবাচক হয়ে পড়ে।
যৌবনের প্রথম পর্যায়ে বহুসংখ্যক যুবতীর মধ্যে হতাশা দেখা যায়। জীবনে আসা পরিবর্তনসমূহে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। অন্যদিকে ৪০ বছরের পরে মহিলারা এমনিই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ হতাশার সঙ্গে হরমোনজণিত কারণের কথাও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।
মনোবিজ্ঞানীরা এ হতাশাকে মারাত্মক ব্যাধি বলে অভিহিত করেছেন। এ হতাশা শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে আত্মহননের ইচ্ছাও প্রকাশ করতে পারে বলে তাঁরা জানান। হƒদপিন্ডে নানা রোগের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ষ্ট্রোক পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। একইভাবে হতাশাজনিত রোগ গর্ভধারণের ক্ষমতাও নাশ করে দিতে পারে।
সাংসারিক নানা সমস্যার কারণেই মহিলাদের মধ্যে হতাশাজনিত ব্যাধির জš§ হতে পারে। বহু মহিলারাই তাদের জীবন যাত্রা নিম্নমানের বলে মনে মনে অনুভব করে থাকেন এবং তার ফলেও হতাশা দেখা দিতে পারে। বহু সময় এদের পরিবারের মানুষ তাদের একটু আলাদা দৃষ্টিতে দেখে এবং তার প্রভাব স^াভাবিকভাবেই তাদের ওপর পড়ে। ডায়াবেটিস বা অতিমাত্রায় কাজের চাপও কোনও কোনও সময় হতাশার জš§ দিতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যে কোনও ঘটনাই একজন পুরুষের চেয়ে একজন নারীকে দ্বিগুণভাবে প্রভাবিত করে। পুরুষরা যেহেতু বেশিরভাগ সময়েই ঘরের বাইরে থাকে তাই তারা যে কোনও ঘটনা ভুলে থাকতে পারে।
কিন্তু বেশিরভাগ মহিলাদের যেহেতু একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে হয়, তাই যে কোনও ঘটনা তাদের বেশি প্রভাবিত করে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এ ব্যাধি মূলত শহর অঞ্চলেই বেশি দেখা যায়। পিছিয়ে পড়া গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের ঘরোয়া কাজের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয় বলে তাদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা কম দেখা যায়।
হতাশা দূর করার উপায়ঃ হতাশা আসলে একটা রোগ, তা দুর্বলতা নয়। এ রোগে আপনি নিজেকে আক্রান্ত বলে অনুভব করলে নিজের সবচেয়ে আপনজনকে প্রথমে তা বলে ফেলা উচিত। আপনি যাকে ঘনিষ্ট বা উপযুক্ত বলে মনে করেন তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারেন। এতেও যদি কোনও ফল লাভ না হয় তখন উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসককে কোনও কথা খুলে বলতে সংকোচ করতে নেই। মানুষের জীবনে এমন কিছু কথা থাকে, যেগুলো খুলে বলতে অনেকেই দ্বিধাবোধ করে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে কোনও কথাই রাখ-ঢাক না করে খুলে বলা উচিত। তখন একজন চিকিৎসক উপযুক্ত চিকিৎসার পথে পা বাড়াতে সক্ষম হবেন। চিকিৎসকরা হতাশাজনিত রোগের উপশমের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন।
ওষুধের সঙ্গে কিছু কাজ নিজে নিজে করা উচিত। দুঃখ ও বেদনাদায়ক ঘটনা যে কোনও মানুষের জীবনে ঘটে এসব ঘটনাকে সহজভাবে গ্রহণ করে নেওয়া উচিত। আর এভাবে করতে পারলেই মনে কোনও ধরনের হতাশাজনিত রোগের সৃষ্টি হবে না। বন্ধু-বান্ধবী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময় বন্ধু-বান্ধবীদের আচরণের ফলেও হতাশা দেখা দেয়। বই পড়াটা একটা ভাল অভ্যাস। নিয়মিতভাবে বই পড়লে একটা অন্য জগতের সন্ধান পাওয়া যায়। তাই অবসর সময়ে যখন নিজেকে একা অনুভ‚ত হয় তখন হতাশা আপনাকে গ্রাস করতে পারে। তাই সে সময় বই পড়তে পারেন। এতে শুধু হতাশা দূর হবে না। অনেককিছু জানতে ও শিখতে পারবেন এবং মনটাও সুস্থ থাকবে।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগ

১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন