পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজশাহী অঞ্চলে আত্মহত্যার প্রবনতা উদ্বোগজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিগত বছরে এ অঞ্চলে আড়াইশো জনের বেশী নারী পুরুষ কিশোরেরা আত্মহত্যা করেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে দেড়শো জনের বেশি। এরমধ্যে রাজশাহীতে ২০১৮ সালে করেছে ৪৫ জন আর চেষ্টা চালিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬ জন। যার মধ্যে রয়েছে ২০জন কিশোর।
এ তথ্য শুধুমাত্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এর বাইরে রয়ে গেছে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো। যার প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া গেলে এর সংখ্যা হবে আরো উদ্বেগজনক। এর আগের বছর ২০১৭ সালে নারী পুরুষের আত্মহত্যা সংখ্যা ছিল ২৩৩। এরা আত্মহত্যা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আত্মহত্যার মত জীবন বিনাশী মারাত্মক এই প্রবনতা ক্রমশ বাড়ছে। আত্মহত্যা করে মারা যাওয়াদের অধিকাংশের বয়স কুড়ি থেকে চল্লিশ বছরের মধ্যে। মেয়েদের বয়স পনের থেকে পঁচিশ। এ তালিকায় কিশোরদের মধ্যে বয়স রয়েছে তের থেকে আঠারোর মধ্যে। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে ঘুমের ঔষধ, বিষপান, হারপিক পান করে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, ছাত্রী, ছাত্র, স্কুল, কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী,গৃহবধুরা আত্মহত্যার তালিকায় বেশী রয়েছে।
কারন হিসাবে জানা যায়, পারিবারিক ঝগড়া, প্রেমিক প্রেমিকার মান অভিমান, সংসারের অভাব অনটন, বেকারত্ব, পরকীয়ার, পারিবারিক নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা, পরকীয়া, ছেলেমেদের পছন্দমত বিয়ে না হওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, নৈতিক অবক্ষয়, প্রাত্যিহিক জীবনের অস্থিরতা, মাদকাশক্ত।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেম ভালবাসার টানাটানি ছাড়াও ভালমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না পাওয়া, ফলাফল ভাল না হওয়া, স্বপ্নভঙ্গ, আশা ভঙ্গের মনোনবেদনায় ভেঙ্গে পড়ে অভিমানে আত্মহত্যার চরম পথ বেছে নেবার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। আত্মহত্যার প্রবনতাকে উদ্বেগজনক বলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের ডাক্তার মামুনুর রশিদ অভিমত ব্যক্ত করেন। তার মতে, ক’বছর আগেও রাজশাহীসহ সারা দেশে আত্মহত্যার খবর খুব একটা বেশী জানা সম্ভব ছিল না। আর এখন পত্রিকার পাতা উল্টোলেই এমন খবর চোখে পড়বে। যা আমাদের সমাজের সচেতন মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এনামুল হক গতকাল বিকেলে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন সর্বত্র আজ নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে। যার কারনে বিপথগামী হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু থেকে মধ্য বয়েসীরা। অবাধ ইন্টারনেট, হাতের মুঠোয় পর্ণো, ভারতীয় আকাশ সাংস্কৃতির চরম আগ্রাসন গোটা সমাজকে গ্রাস করেছে। পারিবারিক বন্ধন আলগা হয়ে যাচ্ছে। অবাধ মেলামেশা, মাদকাশক্ত আর হতাশা বিষন্নতায় ভরে যাচ্ছে চারিদিক। আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এসব কারনে আত্মহত্যা বাড়ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবনতা কম নয়। একজন শিক্ষিকা ও বেশ কজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা বেদনাদায়ক। যা উদ্বেগের বিষয়।
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চালু করেছে কাউন্সিলিং। যাতে শ’দুয়েক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। তবে এটি আরো সমন্বিত হওয়া প্রয়োজন। আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে মনস্তাত্বিক কারনে।
আত্মহত্যার প্রবনতা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। তা কমিয়ে আনতে সমাজের মানুষদের ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ. প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রন প্রয়োজন। এর বাইরে ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলের সিরিয়াল মারাত্বকভাবে প্ররোচনা যোগাচ্ছে আত্মহত্যার দিকে। আকাশ সাংস্কৃতির আগ্রাসনের লাগাম টেনে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে।
রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেন, প্রায় প্রতিদিন দু’তিনজন করে আত্মহত্যার প্রচেষ্টার রোগী ভর্তি হয়। তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আর আসেনা। তাদের কাউন্সিলিং করা প্রয়োজন। বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।
নারী শিশু নির্যাতন আত্মহত্যার মত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েল ফেয়ার (লফস) এর কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন লাকী বলেন, আমাদের সমাজে নারী শিশু নির্য়াতন, ধর্ষণ, খুন আত্মহত্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। প্রতি বছরে জরিপে দেখা যাচ্ছে এসব ঘটনা বাড়ছেই। সামাজিক অবক্ষয়, আকাশ সাংস্কৃতির আগ্রাসন এসব অপকর্মে সহায়ক হচ্ছে। উৎসাহিত করছে। যা নিয়ন্ত্রন খুবই প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।