পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান বন্দরনগরী এবং সমৃদ্ধ শিল্পনগরী চট্টগ্রাম। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীও বলা হয়। অথচ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় চট্টগ্রাম ক্ষমতাহীন। হতাশার সুরে বলা হয় ‘নিধিরাম সর্দার’। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প-কারখানা, ব্যাংক-বীমা রাজস্বসহ যাবতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিপিং, রেলওয়ে, আমদানি-রফতানিসহ চট্টগ্রামের অতীত আর বর্তমানের গুরুত্বের সাথে যুক্ত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজেকর্মে ঢাকার মুখাপেক্ষী থাকতে হয় চট্টগ্রামকে। মামুলি কোনো সিদ্ধান্তের জন্যও ফাইলের পেছনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম আর ঢাকায় দৌঁড়াদৌড়ি করতে গিয়েই নানামুখী হয়রানি পোহাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ী ‘রুটিন মাফিক’ সকালের ফ্লাইটে ঢাকায় যান। বিভিন্ন দপ্তরে ফাইলের পেছনে ছোটাছুটি করে ফিরেন সন্ধ্যার ফ্লাইটে। অনেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুইটি অফিস সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সময় ও আর্থিক অপচয় ঘটছে সীমাহীন। সবার কথা হলো, রাজধানী ঢাকায় হবে নীতিগত সিদ্ধান্ত। এখন খুচরা মামুলি কাজের জন্যও ঢাকার দিকে কেন তাকিয়ে থাকতে হবে? প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এমনকি মিয়ানমারসহ পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমনটি উদ্ভট নজির মিলবে না।
ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ-শিল্পায়ন সংক্রান্ত কাজে হাত দিলেই অহেতুক বিলম্বিত ও ব্যাহত হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া। আর্থিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঢাকামুখী ক্ষমতা উপভোগের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের সামগ্রিক শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের ওপর। অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারাচ্ছে চট্টগ্রাম। একসময় চট্টগ্রামের খ্যাতিমান শিল্পপতি একে খান পুত্র সাবেক শিল্পপতি এ এম জহিরুদ্দীন খান বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম আগের চট্টগ্রাম নেই। এটি ছোট্ট-গ্রামে পরিণত হচ্ছে। তার এই উক্তিই যেন আজ সত্যি হতে চলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন, আমদানি-রফতানি, শিপিং, ব্যাংক-বীমা, কর ও রাজস্ব সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে চট্টগ্রামে ক্ষমতাহীন করে রাখা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর ঢাকামুখী রশি টানাটনিতে নামকরা অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের হেড অফিস অথবা কর্পোরেট অফিস চট্টগ্রাম থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ইউনিলিভার (বাংলাদেশ) লিঃ, রেকিট বেনকিজার (সাবেক রেকিট কোলম্যান), গ্লাক্সো স্মিথক্লিন, বার্জার ও জেমস ফিনলে ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইউজিসি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম গতকাল (সোমবার) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় ক্ষমতায়নের প্রয়াস আমরা দেখছি না। অথচ বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে বিকেন্দ্রীকরণের প্রচেষ্টা ছিল। বর্তমানে ব্যাংক-বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিপিং, বাণিজ্যিক, রাজস্ব, বিনিয়োগ অর্থাৎ চট্টগ্রামের সব প্রতিষ্ঠানের বেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ঢাকায় কেন্দ্রীভূত। বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ ক্ষমতা ঢাকায় হেড অফিসে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। ক্ষমতা কেন্দ্র্রীভূত করার এই যে প্রবণতা সেটি অসুস্থ প্রবণতা। এর কোনো মানে হয়না। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির স্বাথেই এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এদিকে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে হলেও বন্দরের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত শিপিং দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। এতে করে যে কোনো সিদ্ধান্ত পেতে শিপিং-পোর্ট খাতের ব্যবসায়ীদের রাজধানী ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে। দেশের সমগ্র আমদানি-রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। অথচ আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা ইপিবিসহ সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের নেই। দেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। তবে কোনো ব্যাংক-বীমার হেড অফিস চট্টগ্রামে আজও স্থাপন করা হয়নি।
একই অবস্থা বিনিয়োগ বোর্ড, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বেপজা, বিএসটিআই, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, শিল্প দপ্তরসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের। শতবর্ষ প্রাচীন তদানীন্তন আসাম বেঙ্গল-রেলওয়ের সদর দপ্তর ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত হয় সিআরবি চট্টগ্রামে। অথচ পরবর্তী সময়ে রেলওয়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। দেশের প্রথম ইপিজেড স্থাপিত হয় চট্টগ্রামে। তখন চট্টগ্রামেই বেপজার সদর দপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তাও পরে চলে গেছে ঢাকায়। তৎকালীন পাকিস্তান আমলেও চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যাংক-বীমার হেড অফিস ছিল।
এরশাদের শাসনকালে জিএম ও ডিজিএম পর্যায়ের পদস্থ কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা অর্পণসহ চট্টগ্রামে বিনিয়োগের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হয়। বর্তমানে ব্যাংক-বীমা ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক ও লিজিং প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ, শিল্প, আমদানি-রফতানি, রাজস্ব সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রামের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়নের পরিবর্তে ক্ষমতার ব্যাপক অবনমন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বরাবরই অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীরা ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন ঢাকায়। সেখানেও ‘পিং পং বল’-এর মতো জটিলতা এবং হয়রানি পোহাচ্ছেন তারা।
এদিকে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট মির্জা আবু মনসুর এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, চট্টগ্রামে ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও লিজিং ফার্মগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর-শিপিং সম্পর্কিত কাজের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। অথচ চট্টগ্রামের এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। অথচ চট্টগ্রাম থেকে ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক ও রাজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রদানে অক্ষম হলে দেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়বে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সেই তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে অল্প কয়েকটি ব্যাংক-বীমা ছিল। তখন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের (পরবর্তী সময়ে পূবালী ব্যাংক) হেড অফিস চট্টগ্রামেই রাখা হয়। রেলওয়ের সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে। অথচ আজ দেশে ৪২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে কোনো একটিরও হেড অফিস চট্টগ্রামে রাখা হয়নি। প্রবীণ এই শিল্পপতির অভিমত, দেশে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উজ্জ্বল সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হলে অবিলম্বে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও তিনটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, কয়েকটি বীমা ও লিজিং প্রতিষ্ঠান, শিপিং দপ্তর, বিনিয়োগ বোর্ড, শিল্প দপ্তরের হেড অফিস এবং রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্য পর্যায়ের কর্মকর্তা রেখে অফিস রেখে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত ক্ষমতায়ন তথা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।