পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধ্বস পরাজয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপি গঠনের পর সবচেয়ে বড় পরাজয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় তারা। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন থাকলেও সেটিকে কাজে লাগাতে না পারায় দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ত্যাগী ও নির্যাতিতরা। নির্বাচনের পরদিন থেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত, দলে কোনঠাসা থাকা নেতার এবং তৃণমূলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। দায়িত্বে থাকা সিনিয়র নেতাদের যেসব জায়গায় ব্যর্থতা রয়েছে তা তুলে ধরেন। ফলে দলে একধরণের অস্থিরতাও তৈরি হয়। তাই এই ক্ষোভ প্রসমনে এবং দলকে আরও শক্তিশালী, গতিশীল করতে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এজন্য ভোটের পর থেকেই স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় নেতারা পৃথক পৃথকভাবে সিরিজ বৈঠক করছেন। প্রতিটি বৈঠকে নেতাদের সাথে স্কাইপিতে লন্ডন থেকে যুক্ত হচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুনছেন নেতাদের পরামর্শ এবং তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মতামতও দিচ্ছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের পর দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাইকমান্ড। যদিও দলের চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি থাকায় জাতীয় কাউন্সিল সম্ভব হবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে শূন্য থাকা পদগুলো পূরণ করা হবে। পাশাপাশি বিএনপির জেলা-উপজেলা কমিটিগুলোতে কাউন্সিলের মাধ্যমে ভোটাভোটিতে যোগ্য, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে। একই সময়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, শ্রমিক দলের মতো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও পুনর্গঠন করবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে না পারলে দল কখনোই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকে না। যেটি এবার সকলে অনুভব করেছেন। আর সেই তৃণমূল নেতৃত্ব নির্বাচনে বাণিজ্য ও পকেট কমিটি করার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই এবার কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। যেখানে কাউন্সিলররা তাদের ভোটে নেতা নির্বাচিত করবেন। এর ফলে একদিকে যেমন ত্যাগী, যোগ্য নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। অন্যদিকে কমিটি গঠনে বানিজ্য ও পকেট কমিটি নির্ধারণের কোন সুযোগ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, যে কোন জায়াগায় একটি কমিটি উপর থেকে চাপিয়ে দিলে যে ফল আসবে তার চেয়ে অনেকগুণে ভাল ফল আসবে যদি কর্মীরা তাদের নেতা নিজেরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে।
নেতারা মনে করছেন- দল পুনর্গঠন হলে ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতারা মূল্যায়িত হবেন। হতাশা কেটে যাবে, নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হবেন। নতুন নেতৃত্ব আসলে গতিশীলতা ফিরবে। তখন আন্দোলনে নামতে পারবেন তারা। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য কারাগারে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তার মতামত গ্রহণ করবেন।
দল পুনর্গঠনের এই আভাস ইতোমধ্যে দলের নীতি নির্ধারণী নেতারা দিয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের ভাইদের মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আমাদের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতাকে কারাগার থেকে বের করে আনতে হবে। সেজন্য আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনতে হবে। এখন আমাদেরকে জনগণকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, হতাশার কোনো জায়গা নেই। এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে। কমিটি ঘোষণার সময়ই ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার মারা গেছেন। ফলে বর্তমানে পাঁচটি পদ ফাঁকা। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের শিলংয়ে আছেন।
এছাড়া দলটির ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির হারুনার রশিদ খান মুন্নু, ফজলুর রহমান পটলসহ সাতজন মারা গেছেন। ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে কমিটি ঘোষণার পরপরই পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং ইনাম আহমেদ চৌধুরী। নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি কমিটি ঘোষণার পরই ফাঁকা। নির্বাহী কমিটির সাতটি আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মধ্যে দুটি ফাঁকা। সহ-যুববিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও যুববিষয়ক সম্পাদকের পদটি এখনো ফাঁকা। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন। নির্বাহী কমিটির সদস্য নুর মোহাম্মদ মন্ডল দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
এদিকে ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বেচ্ছাসেবক দলেরও একই অবস্থা। কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের আরও বেহাল অবস্থা। এসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের দাবি অনেক আগে থেকেই করে আসছেন নেতাকর্মীরা।
দল পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভাবছে না বিএনপি। তবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। কেননা স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষিত ও ত্যাগী প্রবীণ নেতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদেরও স্থায়ী কমিটিতে স্থান দিতে চায় দলটি। একইসঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, দলের ভাইস-চেয়ারম্যানসহ নির্বাহী কমিটির ফাঁকা পদও পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের নেতারা মনে করছেন, দল গোছানোর কাজ শেষ না করেই শেষ পযন্ত নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ফলে জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া থমকে যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল পুনর্গঠন করতে হবে। হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হাজার হাজার নেতাকর্মীর পুনর্বাসন করতে হবে। প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করবেন। সর্বোপরি কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা যারা ব্যর্থ হয়েছি নতুনদের জন্য আমাদের সরে যেতে হবে। তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এখন দলকে পুনর্গঠন ও নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে অভয় দিতে হবে। তাদের মাঝে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের যাদের বয়স হয়েছে তারা সরে যাবো। কিন্তু এই দলটিকে তো রাখতে হবে। দুই তিন মাসের মধ্যে আবারো দল পুনর্গঠন করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।