পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামজুড়ে শিল্পায়নের এখন সুবর্ণ সময়। শিল্পবান্ধব অবকাঠামো সুবিধার ফলেই বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের এই সুবর্ণ সময়। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহের সুবাদে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনের পথে। চীনা সহায়তায় বাংলাদেশ এমনকি এই অঞ্চলে প্রথম কোনো নদ-নদীর তলদেশে টানেল তথা কর্ণফুলী নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এরপর শিগগিরই শুরু করা হবে টানেলের মূল কাজ।
রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাহাজীকরণের লক্ষ্যে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সম্প্রসারিত করে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনায়োরায় চীনের সহায়তায় বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে শংখ নদীর তীরে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও স্থাপন করা হবে শিল্পাঞ্চল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাগোয়া মিরসরাইয়ে বিস্তীর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ চলছে। বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল ও শিল্পজোনসমূহ সম্পন্ন হলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য শিল্পপ্লটের অভাব দূরীভূত হবে। বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ আশাবাদী, এ অঞ্চলে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে খরা কেটে যাচ্ছে। রফতানিমুখী শিল্প, কল-কারখানার সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যের পথে ঘুরে দাঁড়ানোর বাঁকে এসে গেছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম। চীন সরকারের সহায়তায় চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে এবং চীনা কোম্পানির কারিগরি সহযোগিতায় দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের বাস্তব কাজ শুরু হয়ে গেছে। এরফলে সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার জুড়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে যাবে।
মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাইকার মহাপরিকল্পনা অনুসারে এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে গতবছরের ১৮ আগস্ট থেকে। বর্তমানে দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রাম অঞ্চলে জোগান দেয়া হচ্ছে। এলএনজির উৎস থেকে গ্যাস সচল করেছে চট্টগ্রামের দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কিংবা উৎপাদনে যেতে না পারা শতাধিক শিল্প-কারখানা। এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি পেলে চলতি বছরেই চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ ৫০০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হবে। আরও ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস যাবে জাতীয় গ্রিড হয়ে ঢাকায়। এমনটি আশ্বাস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক সাড়ে ৪শ’ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুতের চাহিদা ৮শ’ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার একশ’ মেগাওয়াট।
সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে গ্যাস-বিদ্যুতচালিত শিল্প-কারখানায় উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। শিল্পায়নে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে হাজার হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া শিল্পের প্লট অর্থাৎ স্থান সঙ্কট সমাধানের জন্যও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানামুখী প্রচেষ্টা চলছে। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির জোরালো দাবি ও দেন-দরবারের ফলে মিরসরাইতে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এটি সম্পন্ন হলে শিল্পপ্লটের অভাব থাকবে না। দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী প্লট বা স্থান সঙ্কটের কারণে থমকে থাকে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের গতি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা বিনিয়োগে বিশেষ অর্থনৈতিক অর্থনৈতিক ও শিল্পজোনে অবকাঠামো স্থাপনের কাজ চলছে। তবে কাজের গতি এখনও ধীর।
বৃহদাকার, মৌলিক ও মাঝারি শিল্প, কল-কারখানার আদিস্থান বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। দেশের প্রথম ইপিজেডসহ বেশ কয়েকটি শিল্পাঞ্চল রয়েছে এখানে। যার অবস্থান উত্তরে মিরসরাই থেকে দক্ষিণে আনোয়ারা-পটিয়া, পূর্বে চন্দ্রঘোনা ও রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। শিল্প-কারখানার মধ্যে রয়েছে কাগজকল, রেয়ন শিল্প, সারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানা, গার্মেন্টস শিল্প, পাটকল, বস্ত্রকল, সূতা কল, কার্পেট কারখানা, কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল, সিমেন্ট শিল্প, চা শিল্প, চামড়া, স্টিল ও আয়রন শিল্প, জাহাজ-নির্মাণ ও মেরামত শিল্প, শিপব্রেকিং ইয়ার্ড-ভিত্তিক শিল্প-কারখানা, খাদ্য শিল্প, ভেজিটেবল অয়েল, দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধন কারখানা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিঃ (ইআরএল) এবং হিমায়িত খাদ্যসহ শতাধিক ধরনের শিল্প কারখানা।
নগরীর কালুরঘাট, নাসিরাবাদ, পাহাড়তলী হয়ে সীতাকুন্ড পর্যন্ত বিশাল শিল্প এলাকায় ২০টির মতো পাটকল, বস্ত্রকল, কার্পেট মিলসহ ভারী কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নামিদামি অনেক শিল্প-কারখানার জায়গায় নির্মিত হয়েছে এমএস রড তৈরির (স্টিলস রি-রোলিং) মিলস। শিল্প কল কারখানার সূতিকাগার বৃহত্তর চট্টগ্রাম অনেকাংশেই হারায় ঐতিহ্য। ছোট হয়ে আসে শিল্প-কল-কারখানার বৃহৎ জগত। এবার বন্ধ কল-কারখানার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। খুলছে বিনিয়োগের দ্বার।
এর পেছনে প্রধান কারণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্পখাতে চাহিদার বিপরীতে গ্যাস, বিদ্যুতের মারাত্মক ঘাটতি, শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী স্থান সঙ্কট। তদুপরি রয়েছে বিদেশী হরেক পণ্যের সর্বগ্রাসী চোরাচালান। চট্টগ্রামকে বিনিয়োগের ‘আদর্শ স্থান’ বলা হলেও দীর্ঘদিন ধরে নেই বড় আকারের বিনিয়োগ। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব সরকারের বিভিন্নমুখী উন্নয়নের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা, শিল্পজোন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম তার শিল্প-কারখানার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের পথে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এরফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।