Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাইড শেয়ারিং বাইক বিড়ম্বনা

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ইন্টারনেট অ্যাপ ব্যবহার করে মটরবাইক ও টেক্সিক্যাব ভাড়া করে দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা আমাদের নাগরিক জীবনে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা। ইতিমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে রাইড শেয়ারিং সিস্টেম। প্রতিদিন শত শত নতুন বাইকার এবং প্রাইভেট কার চালক এই মাধ্যমের সাথে যুক্ত হচ্ছে। দ্রুত ক্রমবর্ধনশীল রাইড শেয়ারিংয়ে নানাবিধ নতুন নতুন সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। মফস্বল থেকে আসা একশ্রেনীর বাইকার পাঠাও, উবারসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়ে অনভ্যস্থ রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ী চালনা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা এবং শেয়ারিং অ্যাপের বিধি-বিধান ও রেজিস্ট্রেশনের বাইরে গিয়ে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। কোটি মানুষের নগর জীবনে অপ্রতুল যানবাহনের ঝক্কি ঘোচাতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বেশ ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির পাশাপাশি এসব প্রাসঙ্গিক সমস্যাও সৃষ্টি হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রাইড শেয়ারিংয়ে বেপরোয়া বাইক ও গাড়ী চালনা বা চালকদের নিয়ম বহিভর্‚ত আচরণে ভুক্তভোগীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায় না। রাইড শেয়ারিংয়ে বেপরোয়া বাইক চালনার কারণে প্রায়শ: ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে আরোহীরা। ঢাকায় যানজটের দুর্ভোগ থাকলেও ব্যক্তিগত বাইক চালকদের দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনা খুব কমই ঘটে। রাইড শেয়ারিং বাইকারদের সমাগম বৃদ্ধির পর থেকে গত দুই বছরে রাইড শেয়ারিংয়ে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়েছে। অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকের প্রাণহানী ঘটেছে এবং বহু মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়েছে। মূলত: অদক্ষ ও বেপরোয়া বাইকার ও গাড়ী চালকদের কারণে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হলেও ভুক্তভোগী কেউই কোনো ক্ষতিপুরণ পায়নি। দুর্ঘটনা রোধ ও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
এক সময়ে রিক্সার শহর ঢাকা এখন রাইড শেয়ারিং বাণিজ্যের কারণে বাইকের শহরে পরিনত হয়েছে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপে যুক্ত হয়ে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার বাইকার রাজধানীতে ভীড় করছে। একদিকে ঢাকায় কর্মজীবীদের যানবাহন সংকট অন্যদিকে সারাদেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত লাখ লাখ বেকার তরুণ স্বাধীন কর্মসংস্থানের সহজ উপায় হিসেবে যেনতেন একটি মোটরবাইক নিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়ে পড়ছে। রাইড শেয়ারিংয়ে গত এক বছরে ৮২ হাজার নতুন মোটর বাইকের নিবন্ধন হয়েছে বলে গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়। এসব নিবন্ধিত বাইকারের বাইরেও নানাভাবে রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বাইকার। এ কারণে প্রায়শ অ্যাপে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের নম্বরের সাথে বাস্তবিক চালকের গাড়ীর নম্বরের অমিল দেখা যায় বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। বেপরোয়া, অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোন স্থানীয় অফিস না থাকা এবং ভার্চুয়াল ফর্মে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় রাইড শেয়ারিং সম্পর্কে ব্যবহারকারিদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। ব্যস্ত রাস্তায়, ফুটপাথে, ফ্লাইওভারে হাজার হাজার মোটরবাইক যাত্রী পরিবহণে লিপ্ত হওয়ায় বাইকাররা নগরীতে এখন নতুন বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনিতেই রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যমান আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেনা, সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং নীতিমালা শিথিল করার কারণে বেপরোয়া বাইক চালকদের দৌরাত্ম্য ও স্বেচ্ছাচারিতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকার নাগরিক দুর্ভোগের প্রধান ক্ষেত্রই হচ্ছে গণপরিবহনের সংকট, বিশৃঙ্খলা, যানজট ও নিরাপত্তাহীনতা। জরুরী প্রয়োজনে ট্যাক্সিক্যাব বিশ্বের সব শহরেই সাধারণ মানুষের একটি অপরিহার্য অবলম্বন। প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও আইনগত সুরক্ষার অভাবে ঢাকা শহরে ট্যাক্সি ক্যাব ও সিএনজি চালকরা শুরু থেকে অদ্যাবধি নিয়ন্ত্রণহীন ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই নিয়ম ও বিধি বিধানের অনুগামী রাইড শেয়ারিং অ্যাপ খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যাপক চাহিদার সুযোগে অনেক অযোগ্য, অদক্ষ ও আনাড়ি চালক ও ফিটনেস বিহিন বাইক ও কার রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়েছে। পাঠাও, উবারসহ নতুন নতুন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ যুক্ত হলেও এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। কোম্পানীগুলোর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ব্যবস্থার পাশাপাশি যাত্রীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাইকার ও গাড়ী চালকদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আচরণগত বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। নীতিমালার যে সব শর্ত শিথিল করলে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। সাধারণ যাত্রীদের রাইড শেয়ারিং নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে ঢাকার সামগ্রিক গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।



 

Show all comments
  • আবিদ রহমান ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:৪৩ পিএম says : 0
    আমরা সচেতন হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা কি সচেতন? এখানে রাইড শেয়ারিং সঠিক জায়গায় আছে, তাদের কোন দোষ নাই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। দোষ দেয়ার অনেক জায়গা আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবা ভালো। আজকে রাইড শেয়ারিং আছে বলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এটা কি ভালো নয়? আমরা ভালো কে ভালো বলিনা খারাপ গুলি সুন্দর রংচং করে উপস্থাপন করি। এই মানুষিক তা পাল্টাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাইড শেয়ারিং বাইক বিড়ম্বনা

আরও পড়ুন