Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিরপুরেও গ্যালারি ফাঁকা!

কোথায় সেই টি-টোয়েন্টির ধামাকা?

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

গায়ে টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা লেবাস থাকলেও বিপিএল শুরু হয়েছে লো স্কোরিং ম্যাচ দিয়ে। এপর্যন্ত মাঠে গড়ানো ৮টি ম্যাচের মধ্যে (গতরাতের রাজশাহী ইনিংস বাদে) সর্বনিম্ন ৬৩ রানে অলআউটের ঘটনাও ঘটেছে আবার সর্বোচ্চ ৬ উইকেটে ১৯২ রানের দলীয় সংগ্রহও সাক্ষী হয়েছে এবারের বিপিএল। প্রথম সাত ম্যাচে দুইশর কাছাকাছি রান হয়েছে মাত্র দুই ইনিংসে। দুটিই ঢাকা ডায়নামাইটসের। শতরানের নিচে ইনিংস হয়ছে তিনটি। তবে এই আট ম্যাচের গড় সত্যিই শঙ্কার-১২৯.৬! টি-২০ ক্রিকেটের সঙ্গে অসম্ভব রকমের বেমানান।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের অবস্থা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চার-ছক্কার বৃষ্টি হয় না, টি-টোয়েন্টির ধামাকা মেলে না, ব্যাটসম্যানরা ধুঁকে মরেন, ম্যাচ হয় ম্যাড়ম্যাড়ে। রহস্যের জাল বিছিয়ে রাখা মিরপুরের বাইশ গজের তাই অনেক বদনাম। বিশেষ করে বিপিএল এলেই শুরু হয় উইকেট নিয়ে হাহাকার। প্রায় প্রতিদলই জানিয়ে যায় রান করা, শট খেলা কতটা কষ্ট এখানে। কিন্তু রান খরটা দুপুরের ম্যাচগুলোতে যতটা সত্য রাতে ততটা নয়। পক্ষে কথা বলতে প্রথম দিনের ছবিটিই দেবে পরিস্কার সাক্ষী। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মাত্র ৯৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স। ওই রান তুলতেও ৭ উইকেট হারিয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে চিটাগাং ভাইকিংসকে। মন্থর পিচে ব্যাটে বল আসছিল না ঠিকমতো। অথচ একই উইকেটে খানিকক্ষণ পরে শুরু হওয়া ম্যাচে মিলল ভিন্ন ছবি। চার-ছক্কার ধামাকায় ঢাকা ডায়নামাইটস করে ফেলল ১৮৯ রান। জবাবে ১০৬ রানে রাজশাহী কিংস থামলেও উইকেটের চেয়েও বেশি দায় ছিল তাদের ব্যাটসম্যানদেরই।
পরদিনগুলোতেও বদলায়নি চিত্র।
তাই ম্যাচে জয় পেলেও উইকেট নিয়ে অনেক কথাই খরচ করতে হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কোচদের। তবে ইতিহাস বলে এই সময়ে লো স্কোরিং ম্যাচ হবেই। যেহেতু পিচটা কালো মাটিতে করা, ভালো উইকেট বানানো কঠিন। শীতকাল, প্রতিদিন খেলা হচ্ছে ফলে কিউরেটরদের জন্য ভালো উইকেট বানানো কঠিন। আবার রাতের বেলা পানি দিয়ে উইকেটটা তৈরি করতে হয়, একটু কঠিনই। আমরাও আশা করি না ভালো উইকেট হবে। সব সময় লো স্কোরিং ম্যাচ হবে। তবে কুয়াশা পড়ার কারণে দিনের চাইতে রাতের ম্যাচগুলোতে রান বেশি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। রাতের ম্যাচেও যে উইকেট টি-টোয়েন্টির চিরায়ত বিজ্ঞাপনের মতো, তেমনটা নয়। রংপুরের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো দুদিনে দিন-রাতে দুই পরিস্থিতিতেই খেলেছেন। রান পেয়েছেন রাতের ম্যাচে। ৫২ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে আসার পর বলেছেন, রাতেও উইকেট যে খুব সহজ এমন না। রাতে বল স্কিড করায় ব্যাটে আসে দ্রুত। এতে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়।
বিপিএলের শুরুতেই এবার খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ছাপিয়ে আলোচনায় দুটি বিষয়-মিরপুরের উইকেট আর ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস। মিরপুরের উইকেটে লো স্কোর নতুন কিছু নয়! নতুন যেটা, ডিআরএস। বিপিএলে প্রথমবারের মতো সংযোজন হওয়া ডিআরএস নিয়ে ভালোই নাটক হচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচে! স্নিকোমিটার নেই। নেই আল্ট্রা-এজও। কিন্তু তারপরও আছে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)। তাতে আসরের তিন ম্যাচ মাঠে গড়াতে না গড়াতে এ নিয়ে উঠেছে নানা বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) মান নিয়ে। তবে এ প্রযুক্তির ব্যবহার কেন হচ্ছে না
বিপিএলের টিভি স্বত্ব কিনে নেওয়া মাত্রা ইমপ্রেস মাত্রা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টুর্নামেন্টের প্রোডাকশন এবং স¤প্রচারের দায়িত্ব তাদেরই। তবে গত বিপিএলের প্রোডাকশন নিয়ে নানা অভিযোগ থাকায় বিসিবি এবার এই দায়িত্বটি নিজেরা নেয়। প্রোডাকশনের মান ঠিক রাখতে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্যামেরা ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভালো ধারাভাষ্যকার আনা নিশ্চিত করাই ছিল উদ্দেশ্য। তবে প্রোডাকশনের যাবতীয় খরচ বহন করতে হচ্ছে টিভি স্বত্বের মালিকদের। বিসিবি তাই পারত টাকার চিন্তা না করে বিপিএলের জন্য সেরা প্রস্তাবটিই বেছে নিতে। কিন্তু আসল জায়গা যেটি, খেলাকে বিতর্কমুক্ত রাখা, সেটি বাদ দিয়ে তারা গুরুত্ব দিয়েছে স্পাইডার ক্যাম, রোবট ক্যাম, জিংক বেলের মতো অলংকারের দিকে।
চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়েছে। দেশি তারকারা তো আছেনই। খেলছেন ক্রিস গেইল, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারের মতো বিশ্ব তারকারাও। তবু দর্শকদের যেন তেমন আগ্রহ নেই। এখন পর্যন্ত একদিনও গ্যালারি ভরপুর হয়নি। গতকাল চিটাগাং ভাইকিংস-সিলেট সিক্সার্সের খেলা হয়েছে প্রায় ফাঁকা গ্যালারিতে। খেলা দেখতে মাঠে কেন আসছে না মানুষ, তার একটা কারণ খুঁজে পেয়েছেন চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছে এবারের বিপিএল। প্রথমদিন শনিবার হওয়ায় ছিল আংশিক ছুটির দিন। সেদিনও গ্যালারিতে দেখা যায়নি জম্পেশ অবস্থা। এরপর থেকে তো বাকি তিন দিনে ক্রমাগত কমছে দর্শক। বুধবার দেখা গেল সবচেয়ে কম মানুষ এসেছেন খেলা দেখতে। সব গ্যালারি মিলিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দর্শকের সংখ্যা হতে পারে বড়জোর হাজার তিনেক।
মুশফিকের কাছে গ্যালারির এই ভাটার প্রথম কারণ হিসেবে মুশফিকের মনে হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ফাঁকা গ্যালারির কথা শুনেই তাই চট করে বললেন, ‘ফাঁকা গ্যালারি তো থাকবে ভাই। এখন মোবাইলে লাইভ দেখতে পারে, বাসায় বসে বসে আরামে দেখতে পারে। যখন বাইরে কাজ করে তখন টিভিতে দেখে বা মোবাইলে দেখে। এই কারণেও হতে পারে।’ মুশফিকের দেওয়া পরের কারণ অবশ্য বেশ মজার, ‘আর সারা বছর এত আন্তর্জাতিক খেলা এত হয় যে দর্শকরা ভাবে এখন একটু বিশ্রাম নেই পরে আন্তর্জাতিক খেলা হলে দেখব।’
উইকেট নিয়ে সমালোচনা আছে এবং হয়তো থাকবেও। কিন্তু এ উইকেটে খেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে ব্যাটসম্যানরা শট খেলতে পারেন না বলে টি-টোয়েন্টিতে ভালো মানের ব্যাটসম্যান বের হয় না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আইসিসির টি-২০ ক্রিকেটে প্রবর্তন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টি-২০ লিগের গোড়াপত্তন করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল, সেই দর্শক টেনে আনাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিসিবির সামনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ