Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টি-টোয়েন্টির অংক মিলবে তো?

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

নিজেদের পছন্দের সংস্করণ ওয়ানডে সিরিজে শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের এক ভয়াল স্মৃতি দিয়ে। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচেই লজ্জার মুখে পড়তে পড়তে বেঁচেছে বাংলাদেশ। সিনিয়রদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং ধ্বসের পর সেই লজ্জা থেকে দলকে রেকর্ড গড়া জুটিতে বাঁচান আফিফ-মিরাজের মতো নবীনরা। শেষ ম্যাচে এসে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে তো হেরেই গেল তামিম ইকবালের দল। মাঝের ম্যাচটিতে নিজেদের সেরা ছন্দের প্রদর্শনী দেয়াতেই যা একটু মুখ রক্ষা। স্বাগতিক শিবির সিরিজ জেতে ঠিকই, তবে কষ্ঠে-শিষ্ঠে। এবার টি-টোয়েন্টির। যেখানেও ঢের এগিয়ে ‘নবীন’ আফগানিস্তান। আর বাংলাদেশ যেন এখনও মাঝ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে টি-টোয়েন্টির সরল অংক মেলাতে। টি টোয়েন্টিতে পরিসংখ্যান ও কাগজে কলমে এগিয়ে থাকা আফগানদের বিরুদ্ধে অ্যাসিড টেস্টে আজ মাঠে নামবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাহিনী। মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা ৩টায় হবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি।
ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সের দিকে তাকালে ভক্ত-সমর্থকরা হতাশই হবেন। শেষ ৮ টি-টোয়েন্টির একটিতেও জয় নেই। নিকট অতীতের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হয়ে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাছাইপর্বে দুই ম্যাচ জিতলেও মূলপর্বের সবকয়টি ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা।
টি-টোয়েন্টি আফগানদের প্রিয় ফরম্যাট- এ বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে আফগানরা অবস্থান করছে বাংলাদেশের ঠিক উপরেই। ২৩২ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে ৮ নম্বরে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট আফগানদের চেয়ে ঠিক ১ কম; ২৩১। বাংলাদেশ আছে র‌্যাংকিংয়ের নয়ে। র‌্যাংকিংয়ের মতো মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে আফগানরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুদল এখন পর্যন্ত ৭ বার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে আফগানদের ৪ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ২ বার। অপরটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত।
বাংলাদেশের ২ জয়ের দুটিই দেশের মাটিতে। প্রথম জয়টি ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মিরপুরের মাঠে আগে ব্যাট করে সাকিব আল হাসানের বোলিং জাদুতে ৭২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল আফগানদের ইনিংস। জবাবে ১২ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়টি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। আফগানদের চার জয়ের তিনিটিই ভারতের মাটিতে। দেহরাদুনের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের একটিতেও জয় পায়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাটিতেও রশীদ খান-মুজিবদের জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
টি-টোয়েন্টির জন্য তাদের আলাদা কজন ক্রিকেটারই আছেন। বাংলাদেশের চেয়ে র‌্যাংকিং কিংবা পাওয়ার হিটিংয়েও এগিয়ে দেশটি। বাংলাদেশে সেই অর্থে টি-টোয়েন্টির প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান নেই। সাব্বির রহমান, শামীম হোসেনদের দিয়ে নিষ্ফলা চেষ্টাও করা হয়েছিল। তবে এবার বিপিএল দিয়ে আলো কেড়েছেন মুনিম শাহরিয়ার। বরিশালের হয়ে খেলা এই মারকুটে ওপেনার জায়গা পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। তাকে দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টায় বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ১৪৪ রানের। আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ ১৬৭। আফগানিস্তানের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস ৭২ রানের। অন্যদিকে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ইনিংসটি ১৩৪ রানের। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও আফগানরা সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবদের সঙ্গে। দুদলের লড়াইয়ে ১৩৮ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। রান সংগ্রহের দিক দিয়ে রিয়াদের ঠিক পরেই আছেন আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী। তার সংগ্রহ ১২৫ রান। ১২৩ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে সাকিব আল হাসান। সেরা পাঁচে বাকি দুজন আফগানিস্তানের সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম।
ব্যক্তিগত সেরা ইনিংসটিও মোহাম্মদ নবীর দখলে। তার ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই দুদলের লড়াইয়ের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ইনিংসটি সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৭০ রানের। দুদলের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ উইকেট আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশীদ খানের। ১২ উইকেট নিয়ে শীর্ষে থাকা রশীদকে অনুসরণ করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। তার সংগ্রহ ৮ উইকেট। আফগানদের পক্ষে সেরা বোলিং রেকর্ড রশীদ খানের। ১২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এই লেগস্পিনার। বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৩৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসান বল হাতেও বেশ ভুগিয়েছেন আফগানদের। ৮ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট শিকার আফগানদের বিপক্ষে সাকিবের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স।
র‌্যাংকিংয়ে কাছাকাছি থাকা বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দুদলের সিরিজে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। মিরপুরের স্পিননির্ভর সেøা পিচে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন আফগান স্পিনাররা। দুদলেরই বোলিং স্পিননির্ভর হলেও বোলিং বিচিত্রে এগিয়ে আছে আফগানরাই। তবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে। আজও যদি ব্যাটাররা জ্বলে উঠে ব্যর্থ হয় তবে আফগানদের বিরুদ্ধে ভুগতে হতে পারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি-টোয়েন্টির অংক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ