পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সঠিক কাজ করেছেন। অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রত্যাহার পরিকল্পনা করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সিরীয় জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সঠিক অংশীদারদের সহযোগিতায় তা সম্পন্ন করতে হবে। ন্যাটো দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর অধিকারী তুরস্ক হচ্ছে একমাত্র দেশ যার এ কাজ সম্পন্ন করার ক্ষমতা ও অঙ্গীকার আছে।
তুরস্ক হল প্রথম দেশ যে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ২০১৬ সালে সিরিয়ায় স্থল সৈন্য মোতায়েন করে। আমাদের সামরিক অভিযান ন্যাটোর সীমান্তে গ্রুপটির প্রবেশ রোধ করেছে এবং তুরস্ক ও ইউরোপে তাদের সন্ত্রাসী হামলা চালানোর ক্ষমতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী রাক্কা ও মসুলে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এ সময় বেসামরিক জনগণের প্রাণহানির প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন বা দৃষ্টি দেয়া হয়নি। কিন্তু তুরস্ক ও তার সহযোগী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির যোদ্ধারা তা করেনি, তারা তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের নির্মূল করতে তাদের শক্ত ঘাঁটি আল বাব শহরের দরজায় দরজায় লড়াই করেছে।
আমাদের এ পদক্ষেপ শহরের মূল অবকাঠামোর প্রায় সবটাই অক্ষুন্ন রাখে যার ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই শহরের জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। আজ সেখানে শিশুরা স্কুলে ফিরেছে, তুর্কি তহবিলে পরিচালিত একটি হাসপাতালে অসুস্থদের চিকিৎসা করা হচ্ছে এবং নতুন ব্যবসা প্রকল্পগুলো কর্মসংস্থান ও স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। এই স্থিতিশীল পরিবেশই শুধু সন্ত্রাস থেকে মুক্তি দিতে পারে।
তুরস্ক সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে পরাস্ত করতে সংকল্পবদ্ধ। কারণ, তুর্কি জনগণ উগ্রবাদী সহিংসতার সাথে ভীষণভাবে পরিচিত। ২০০৫ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আল কায়েদা তুরস্কে সমন্বিত হামলা চালালে বহু তুর্কি নিহত হন। অতি সম্প্রতি তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসীরা আমাদের নাগরিক, তাদের জীবনযাত্রা এবং অংশগ্রহণ মূলক ও মধ্যপন্থী দৃষ্টিভঙ্গিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। কয়েক বছর আগে এ সন্ত্রাসী গ্রুপটি আমাকে ‘বিশ্বাসঘাতক শয়তান’ বলে অভিহিত করেছিল। আমরা এই সন্ত্রাসীদের হামলায় ইরাক ও সিরিয়া থেকে আশ্রয়ের জন্য তুরস্কে আসা খ্রিস্টান ও ইয়াজিদিদের মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখেছি।
আমি আবার বলছি, সন্ত্রাসীদের জন্য কোনো বিজয় নেই। তুরস্ক তার নিজের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য যা করণীয় তা করা অব্যাহত রাখবে। সামরিকভাবে বলতে গেলে, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়ায় সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়েছে। তবে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে, বাইরের কিছু শক্তি জঙ্গি গ্রুপটির অবশিষ্টাংশকে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। এ সন্ত্রাসী গ্রুপটির বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। যেখানে এ গ্রুপটির জন্ম সেই ইরাকের শিক্ষা হচ্ছে অপূর্ণাঙ্গ বিজয় ও বেপরোয়া পদক্ষেপ আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে যা তারা সমাধান করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজ সেই একই ভুল করতে পারে না।
তুরস্ক উগ্রবাদের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে ব্যাপক পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, নাগরিকরা যেন নিজেদের সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন মনে না করে এবং সন্ত্রাসীরা যেন স্থানীয়দের দুর্দশার সুযোগ নিতে না পারে। সাধারণ মানুষ যেন স্থিতিশীল ভবিষ্যতের ছবি দেখতে পায়। প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে সিরীয় সমাজের সকল অংশের সমন্বয়ে একটি স্থিতিশীল বাহিনী সৃষ্টি করা। বহুমুখী বাহিনীই শুধু সিরীয় নাগরিকদের সেবায় আসতে এবং দেশের বিভিন্ন অংশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে। এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই যে, সিরীয় কুর্দিদের নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
যুদ্ধকালীন অবস্থায় বহু তরুণ সিরীয়র জন্যই পিওয়াইডি/ওয়াইপিজির (পিকেকের সিরীয় শাখা যাকে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র যাদের সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে গণ্য করে) সাথে যোগ দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ওয়াইপিজি জঙ্গিরা শিশুদের যুদ্ধে নিয়োজিত করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর আমরা শিশু সৈনিকদের তাদের পরিবারের সাথে একত্র করার জন্য একটি ব্যাপক বাছাই প্রক্রিয়া চালাব। অন্যদিকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সাথে সম্পর্ক নেই এমন যোদ্ধাদের নয়া স্থিতিশীলতা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সকল সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে আরেকটি অগ্রাধিকার। সিরিয়ার যেসব এলাকা ওয়াইপিজি বা তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে সেগুলো তুরস্কের নজরদারিতে জনগণের নির্বাচিত পরিষদ দ্বারা শাসিত হবে। সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিরা স্থানীয় সরকারে তাদের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য হবেন। উত্তর সিরিয়ায় কুর্দি প্রধান অংশগুলোতে স্থানীয় কাউন্সিলগুলো প্রধানত কুর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। তবে অন্য সকল গ্রুপের সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তুর্কি কর্মকর্তারা পৌর বিষয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও জরুরি সেবা বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।
তুরস্ক তার বন্ধু ও মিত্রদের সহযোগিতা ও সমর্থন চায়। আমরা জেনেভা ও আস্তানা শান্তি আলোচনায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আমরা একই সঙ্গে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করতে সক্ষম। আমরা সিরিয়ায় তাদের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করব। এখন সকলের জন্য ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর শত্রু ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসের অবসান ঘটাতে এবং সিরিয়ার অখন্ডতা রক্ষায় একসাথে কাজ করার সময় এসেছে। ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তুরস্ক স্বেচ্ছায় এ কঠিন ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে। আমরা আশা করছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সাথে থাকবে।
(তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের লেখা এ নিবন্ধটি ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।