পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এবং রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামের মানুষের মধ্যে চলছে অপহরণ আতঙ্ক। ভয়ে সন্ধ্যার পর নিরাপদ স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেন ওইসব গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ। প্রতিরাতে বসতবাড়িতে সশস্ত্র ডাকাত দলের হানা অতিষ্ঠ করে তুলেছে গ্রামবাসীকে। ডাকাতিতে ব্যর্থ হলে বাড়ির গৃহস্থ কিংবা যাকে পায় ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
এব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক বলেও প্রশ্ন তুলেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সুনিদিষ্ট প্রমান সহকারে কেউ অভিযোগ অথবা মামলা না করায় সহজেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও পুলিশ সন্ধ্যার পর থেকে টহল জোরদার রেখেছে।
জানা গেছে, ২ জানুয়ারি গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ মজুম তাহের ও ফরিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে পাহাড় কেন্দ্রীক এ চক্রটি। দুইদিন পর গভীর রাতে কালির ছড়া এলাকার দেলোয়ারের বাড়িতে হানা দেয়। যদিও বা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় চক্রটি। অনুরূপ দুইদিন পর রশিদ নগর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পাহাড়তলী এলাকায় রাত ১০ টার দিকে প্রবেশ করলে স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষনিক মসজিদের মাইকে প্রচার করে দিলে পিছু হটে ডাকাতদল। প্রতিনিয়ত অপহরণ ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান কালির ছড়া এলাকার বাসিন্দা যুবনেতা জামিল উদ্দীনসহ অনেকেই। তারা আরো বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলে পূর্ব পাড়া এবং শিয়া পাড়া এলাকার শত শত নারী নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে আসেন। সরেজমিন রশিদ নগরের পাহাড়তলী, ঈদগাঁওয়ের কালির ছড়া, ভূতিয়া পাড়া, পূর্ব পাড়া, শিয়া পাড়া, অফিসের মোরা, চান্দের ঘোনা, ভাদিতলা, ভোমরিয়া ঘোনাসহ বেশ কয়েকটি পাহাড় বেষ্টিত গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি গ্রামে সন্ধ্যার পর যেন নেমে আসে অমাবস্যার রাত। এক মিনিট সময় যেন তাদের কাছে বছরের সমান হয়। আলী আকবর ফকির নামের এক বৃদ্ধ জানান, অতীতের চেয়ে এখন অনেক বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে পাহাড়ী অস্ত্রধারীরা। সুযোগ বুঝে হানা দিচ্ছে বিভিন্ন বসতবাড়িতে। চারদিন আগে তার বাড়িতেও হানা দিয়েছে বলে জানায় আলী আকবর।
এরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে অসহায় দরিদ্র লোকজনকে। ছেড়ে দিচ্ছে মুক্তিপণ নিয়ে। মুক্তিপণ দিতে দেরী হলে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চান ওই এলাকার নারী-পুরুষ।
রশিদ নগরের ব্যবসায়ী এমদাদুল হক জানান, গত দু›দিন আগেই তার এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে ১৪/১৫ জনের মুখোশ পরিহিত ডাকাত দল প্রবেশ করে। বিষয়টি স্থানীয়রা আঁচ করতে পেরে চারদিক থেকে মসজিদের মাইকে প্রচার করে দিলে পিছু হটে ডাকাতদল। পরে রামু থানাকে অবহিত করলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একদল পুলিশ।
আরকান সড়কের পুর্বে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে গহীন জঙ্গলে জীবিকার তাগিদে যুদ্ধ করা কাঠুরিয়াদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায় বাইশারী, ঈদগড়, রশিদ নগর, জোয়ারিয়া নালা, গর্জনিয়া, সদরের ঈদগাঁও, ভারুয়াখালীর উল্টা খালী ইসলামাবাদ ইউনিয়ন গজালিয়া এলাকার আনুমানিক ২০টির মত অপহরণকারী চক্রের সদস্য সক্রিয় আছে। তারা পাহাড়ী জনপদ ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালার পুর্বে, ভাদিতলার পুর্বে গহীন অরন্যে, হলহাজী ঘোনা, মুরুইঙ্গা কোনা, জইল্লার জোম, লইয়া ঘোনা, জোয়ারিয়ানালার পূর্বে বাহাতের ঝিরি, বাককলসহ বিভিন্ন পাহাড়ে সশস্ত্র ডাকাত দলের অবস্থানের কথা।
গহীন অরণ্য আর অগনিত পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে না প্রশাসন। তারা প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায় স্থান বদল করে বলে জানান অপহরণের শিকার ছৈয়দুল হক নামের এক ব্যক্তি।
স্থানীয় কালির ছড়া এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা বিগত দুই বছর আগে হলহাজী ঘোনা নামক একটি পাহাড় ঘেরাও করে পুলিশের সহযোগিতায় দুইজনকে আটক করা হয়েছিল। সেদিন গণধোলাইতে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকার লাল পুতু নামের এক ডাকাত মারা যায়। মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ঐ চক্রটির টার্গেট করে বসে কালির ছড়ার জনগণের ওপর। সেই থেকে ১০ জনের মত শ্রমিককে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে অপহৃতদের। এ প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় স্বাভাবিক চলাচল ও বসাবাস করতে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে উপরোক্ত এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে। এখানে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে বেকায়দায় পড়ছে অভিভাবক মহল।
এলাকাবাসীর দাবি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাত ও অপহরণ চক্রের সদস্যদের আস্তানা শনাক্ত করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে এগিয়ে আসারও অনুরোধ জানান এলাকার লোকজন। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানান, পুলিশ সার্বক্ষনিক টহলে আছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। গহীন জঙ্গলে একাধিক বার অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করায় সহজেই আটক করা যাচ্ছে না তাদের। তিনি অপহরণ চক্রের সদস্যদের ধরতে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করে আরো বলেন, রাত যতই গভীর হোক নিদিষ্ট স্থানে অবস্থানের সংবাদ পেলে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে অভিযানে নামবে পুলিশ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর-রামু সার্কেলের এএসপি আদিবুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নজরে আছে। এসব অপকর্মে কারা জড়িত থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্তও চলছে। জেলা পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষনিক প্রস্তুত আছে যত পরিমাণ ফোর্স প্রয়োজন হয় অভিযানে নামানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।