পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নৌকায় ভোট না দেয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে একজন গৃহবধূকে মারধর ও ধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ৩০ ডিসেম্বর রাতের। আর এই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা আওয়ামী লীগ সমর্থক। ভোটের দিন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার অপরাধে তাকে গণধর্ষণ করা হয়।
ঘটনাটি যখন ঘটে ঠিক তখনই, যখন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নৌকা প্রতীকের দল আওয়মী লীগ। ২৯৯টি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জোটগতভাবে ২৮৮ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা লাভ করেছে তারা। হ্যাটট্রিক জয়ের রেকর্ড গড়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। দেশের জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিপুল প্রত্যাশা রেখে অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে। তারা আশা করে, নতুন সরকার তাদের প্রত্যাশা পূরণে অবিচল থাকবে। নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
জাতির এই আনন্দের মুহূর্তেই ন্যাক্কারজনক এক ঘটনার জন্ম হলো সুবর্ণচরে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ওই গৃহবধূকে পাংখার বাজার ১৪ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে হুমকি দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থক। পরে রাত ১২টায় তারা গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। দরজা খুললেই স্থানীয় সন্ত্রাসী মোশারেফ, সালাউদ্দিন, সোহেল, হেঞ্জু মাঝি, বেচু, আবুল কালামের ছেলে সোহেল, জসীম, আবু, স্বপন, আনোয়ার, বাদশা আলম, হানিফ, আমির হোসেনসহ ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী ওই গৃহবধুকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য গালাগালি করে এবং তার স্বামী ও ছেলে-মেয়েকে বেঁধে ফেলে। পরে অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় এবং সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে।
আমাদের দেশে বিচার হয় শুধু সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলে। সাংবাদিকরা যদি কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করেন তাহলেই ত্বরিৎগতিতে হাতকড়া পরানো হয়। নেয়া হয় রিমান্ডেও। এইতো বছরের প্রথম দিন মঙ্গলবার ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লাকে। নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সঠিক ও তথ্যভিত্তিক না হওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন খুলনার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী। ওইদিন দুপুরেই খুলনা প্রেসক্লাবের বাইরে থেকে সাংবাদিক হেদায়েৎ হোসেন মোল্লাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সাংবাদিক পরিচয় থাকা সত্তে¡ও তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক হেদায়েৎকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অথচ, এদেশের কত ব্যাংক লুটকারী, হত্যা মামলার আসামী, মাদক সম্রাট আর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে। আইনের মারপ্যাঁচে পার পাচ্ছে তারা।
আমি সুবর্ণচরের ওই গৃহবধূর ধর্ষণের বিচার চাই না, চাইব না। কারণ, আমি সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার চেয়ে পাইনি। বিচার চেয়ে পাইনি তনু হত্যাকাণ্ডের, বিচার পাইনি মিতুসহ আরো শত হত্যাকাণ্ডের। বিচার তো দূরের কথা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত কারা বা কেন হত্যা করা হলো সেই ক্লুও উদ্ঘাটন করতে পারেনি আমাদের তদন্তকারীরা। অতীতের রেকর্ড বলে, এ ঘটনার বিচার না পাওয়ারও আশঙ্কা বেশি। তাই, এ গৃহবধূর গণধর্ষণের বিচার চাইব না। শুধু জানতে চাইব। এই গণধর্ষণে লজ্জা কার? লাজ্জা কি শুধু ওই ধর্ষিত গৃহবধুর পরিবার আর স্বজনদের? নাকি আপনার-আমার? নাকি এই রাষ্ট্রের?
লেখক: সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।