Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হুমকির মুখে জাহাজ ভাঙা শিল্প কর্ণফুলী মোহনায় জেগেছে চর

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলী মোহনার সীতাকুন্ড অংশে প্রায় ১০কি.মি. বিশাল এলাকা জুড়ে চর জেগেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা শিল্প। বিষয়টি সমাধানে ড্রেজিংয়ের অনুমতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, লোহার চাহিদা পূরণে জাহাজ ভাঙা শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশবাসীর কাছে এটি একটি ভাসমান লৌহ খনি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। এ লোহার উপর নির্ভর করে চলতে থাকে দেশের নির্মাণ শিল্পও। ৮০ দশক ছিলো শিপব্রেকিংয়ের স্বর্ণযুগ। ২০০০ সালে ইয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৫টির মত। আস্তে আস্তে তা বৃদ্ধি পেয়ে ইয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০টিতে। শিপব্রেকিং এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ ও জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড মালিকরা জানালেন বিভিন্ন রকম চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিগত অর্ধ শতাব্দীতে এ শিল্প ক্রমশ বিকাশ লাভ করে এবং দেশ-বিদেশে নিজেদের অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

২০১১ সালে সরকার জাহাজ ভাঙা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। আর এই শিল্প থেকে সরকার বার্ষিক ১২শ’ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করে। কিন্তু সম্প্রতি উপজেলার ফৌজদার হাট থেকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কি.মি. জুড়ে বিভিন্ন স্পটে সাগরে চর জেগেছে। ক্রমশ দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় সীতাকুন্ড শিপব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকরা নতুন করে জাহাজ আমদানি করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানালেন আরেফিন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক কামাল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি এবিষয়ে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) প্রেসিডেন্ট মো. আবু তাহেরের সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর এ অনুষ্ঠানে বিশাল এলাকা জুড়ে সাগরে চর জেগে উঠার বিষয়টি ও জাহাজ আমদানি সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম আলোচনা করা হয়। আঁকা বাঁকা হয়ে যে চর জেগে উঠেছে তা জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য বড় রকমের হুমকি। এভাবে চর জাগতে শুরু করলে সামনে জাহাজ আমদানি করে তা বীচিং করা যাবেনা। ফলে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি আবারো অনিশ্চতায়। তাই সমস্যা সমাধানে ড্রেজিংয়ের অনুমতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি।

এদিকে শিল্পপতি শওকত আলী চৌধুরী, ম্যাক কর্পোরেশনের মালিক মাস্টার আবুল কাসেমসহ ইয়ার্ড মালিক অনেকেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের লাভজনক স্ক্রাপ জাহাজ ভাঙা শিল্প ভাসমান লোহার খনির বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে মোকাবিলা করা না গেলে আগামীতে সাগরে চর বৃদ্ধি পেয়ে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে ধারণা সচেতন মহলের।

এদিকে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানালেন, স্ক্রাপ জাহাজগুলো অনেক দিন ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে এনে সীতাকুÐে বিভিন্ন ইয়ার্র্ডে নিয়ে আসতে হয় আমাকে। কিন্তু সম্প্রতি উপজেলার ফৌজদারহাট থেকে একেবারে শীতলপুর পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে চর জেগেছে। এতে কয়েকটি জাহাজ সাগরে আটকা পড়েছে। বীচিং করা যাচ্ছেনা এবং স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করা না গেলে সামনে আস্তে আস্তে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ফলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে দেশের অর্ধলক্ষ শ্রমিক বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে ১২শ’কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে পারে সরকার। শুধু তাই নয় লৌহ এবং নির্মাণ শিল্প চরম অস্থিরতা দেখা দিবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি জরুরি সমাধানে সরকারের নিকট দাবি জানালেন ইয়ার্ড মালিকগণ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাহাজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ