পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা একটি জাহাজকে গ্রহণে বাংলাদেশ অস্বীকৃতি জানিয়েছে। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পণ্য বোঝাই ওই জাহাজ গ্রহণে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে রাশিয়া। ১০ দিন ধরে স্পার্টা-৩ নামের রাশিয়ান জাহাজটি গভীর সমুদ্রে (আন্তর্জাতিক জলসীমায়) অপেক্ষা করছে। এটি মোংলা পোর্টে নোঙ্গর করতে চায়। জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল নিয়ে এসেছে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ওই রাশিয়ার জাহাজ ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়বে। এবং সেখান থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য বাংলাদেশে আনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুত্র জানিয়েছে, নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রাশিয়ার ওই আলোচিত জাহাজকে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ অটল। এ অবস্থায় জাহাজটিকে গ্রহণ না করলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্টের হুমকি দেয় রাশিয়া। অবশ্য হুমকি সংক্রান্ত রাশিয়ার পত্র (নোট ভারবাল) পাওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয় এবং কোন অবস্থাতেই যে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা (যদিও নাম ও কালার বদল করা হয়েছে) জাহাজটিকে গ্রহণ করছে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ান দূতাবাসের পাল্টাপাল্টির (টুইট-পাল্টা টুইট) মধ্যেই মোংলা পোর্ট অভিমুখে রাশিয়ান এমন জাহাজ আসার খবর দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এ সংক্রান্ত বার্তায় নড়েচড়ে বসে সরকার। শীর্ষ মহলে খবরটি পাঠানো হলে চটজলদি জাহাজটি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের জাহাজ ভীড়তে না দেয়ার বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি রাশিয়া। তারা তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণে চাপ তৈরি করে। সঙ্গে বিরক্তিও প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন না আসায় সম্পর্ক নষ্টের হুমকি দিয়ে নোট পাঠায় মস্কো। তবে ভারতের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে সুত্রের দাবি।
সূত্র জানায়, স¤প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে রাশিয়ার আলোচিত জাহাজটি মোংলা বান্দরে আসছিল। কিন্তু জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তালিকাভুক্ত জানার পর বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জাহাজটিকে বন্দরে আসতে আপত্তি জানায়। এরপর জাহাজটি ফিরে যায়। তবে রাশিয়ার এ জাহাজটি থেকে রূপপুর প্রকল্পের পণ্য দেশে আনার বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট দেশ রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প উপায় বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরসহ সব ধরনের যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে তৈরি করে সমুদ্র পথে দেশে আনা হয়। ইতোমধ্যে রিঅ্যাক্টরসহ ভারী ও গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ যন্ত্রপাতি দেশে আনা হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি জাহাজে করে মোংলা বন্দরে আনা হয়। এরপর মোংলা বন্দর থেকে পদ্মা নদী দিয়ে ঈশ্বরদী রূপপুর প্রকল্প সংলগ্ন নদীবন্দরে আনা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে রাশিয়ার জাহাজটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি রুশ কর্তৃপক্ষকেও বোঝানা হয়েছে। সব যন্ত্রপাতিই বলতে গেলে চলে এসেছে। এখন এটাতে খুব একটা সমস্যা হবে না মনে করি। তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে ভারত বা কাছাকাছি অন্য কোথাও থেকে যাতে পণ্যগুলো শিফট করে আমাদের জাহাজে দেওয়া যায়।
ওই সূত্রগুলো আরো জানায়, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি একটি মেগা প্রকল্প এবং সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প। এ কারণেই এই প্রকল্পের পণ্য আনার ব্যাপারে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। যে জাহাজটি পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে আসছিল সেটি আগে ভারতের কোচিন বন্দরে পণ্য নামিয়ে তারপর বাংলাদেশের মোংলা বন্দরের দিকে আসতে থাকে। যেহেতু জাহাজটি ভারতের বন্দর থেকে আসছিল তাই ভারতের সুবিধাজনক কোনো সমুদ্র বন্দর থেকে এর পণ্য নামিয়ে বাংলাদেশের আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আবার কাছাকাছি অন্য কোনো জায়গা থেকে বাংলাদেশের জাহাজে আনা যায় কি না- সেটাও চিন্তা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ভারত থেকে আনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলেও সূত্রগুলো জানায়।
বিষয়টি সম্পর্কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার আওতায় জাহাজটি আছে এটা আমাদের জানা ছিল না। জাহাজটি আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জানার পর আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান বাংলাদেশে কর্মরত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটস্কি। তখন বিভ্রান্তি ছিল মন্ত্রণালয়ের তাকে তলব করা হয়েছে নাকি স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি গেছেন? সেদিন বিকালে ঘণ্টাব্যাপী মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক হয় মন্টিটস্কির। আনক্লজ বিল্ডিংস্থ মেরিটাইম সচিবের দপ্তরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রাশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল অ্যান্ড ইস্ট ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালক এস বদিরুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠক নিয়ে সেদিন মুখ খুলতে রাজি না হলেও সচিব এটা স্বীকার করেছিলেন যে, রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য। ইস্যুগুলো স্পর্শকাতর বিবেচনায় এ নিয়ে দু’পক্ষই মুখ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেদিন দায়িত্বশীল একটি সূত্র দাবি করেছিল, সচিব-রাষ্ট্রদূত বৈঠকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়েই মুলত আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতায় অনেক দেশে পণ্য পরিবহনে বিঘœ ঘটছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে গভীর সমুদ্র থেকে রাশিয়ান জাহাজ ফেরত যাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এরকম জাহাজের একটি ইস্যু রয়েছে দাবি করলেও সেই সূত্র তাৎক্ষণিক তা খোলাসা করেনি।
এদিকে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহীনবাগে যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন সেটাকে তার ‘কর্মের ফল’ আখ্যা দিয়ে ২২ ডিসেম্বরই মস্কোতে ব্রিফিং করেছেন মুখপাত্র। ওই দিনে ঢাকাকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ান জাহাজকে ঢুকতে দিতে হুমকি দিয়ে নোট পাঠায় মস্কো। প্রশ্ন হচ্ছে জাহাজটি গ্রহণ করলে সমুহ বিপদের যে ঝুঁকি রয়েছে সেটা জানা সত্তে¡ও কেন মস্কো তা বাংলাদেশ অভিমুখে প্রেরণ করলো? এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মস্কো কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। উল্লেখ কয়েকদিন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে বিবৃতি, টুইট ও পাল্টা টুইট করে বাংলাদেশ প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকা অবশ্য তাদের উভয়কে এসব কর্মে নিরোৎসাহিত করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।