Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুরে পদ্মায় নাব্যতা সংকটে লোকসানে পণ্যবাহী নৌযান ডুবচড়ে আটকা পড়ছে কার্গো ও জাহাজ

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২৩, ৬:২২ পিএম

শুস্ক মৌসুমে ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে

ফরিদপুরে পদ্মায় নাব্যতা সংকটে লোকসানে পণ্যবাহী নৌযান
ডুবচড়ে আটকা পড়ছে কার্গো ও জাহাজ। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাট ও পদ্মাচড় এলাকায় গিয়ে জাহাজ কার্গো ডুবচড়ে আটকা পড়ার এই দৃশ্য দেখা যায়।
ডুবচড়ের কারনে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো , বলগেটও বড় ট্রলার চলাচল ব্যাহত হচ্ছে আটকা পড়ছে চড়ে। দরদুরান্ত হতে আসা এসব পণ্যবাহী জাহাজ নৌ বন্দরে ভিড়তে না পারছে না। ফলে নৌ বন্দরের শুঙ্ক আদায়ও কমে গেছে। অন্যদিকে, এসব নৌযান হতে পণ্য খালাস করতে অতিৱিক্ত মাশুল গুনতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযানগুলো নাব্যতা সংকটের কবলে পড়ে সিএন্ডবি ঘাটের বন্দরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে এই দুরাবস্থা চরমে পৌঁছেছে। নাব্যতা সংকট রক্ষায় কমপক্ষে ১০/১৫ স্হানে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ছে। তবে খননের কাজ পরিকল্পিত ভাবে করা না হলে, অল্প দিনের মধ্যেই নৌচ্যানেলগুলো নতুন বালু এসে ভারাট হয়ে যাবে বলে ঘাটের ছোট ও মাঝারি নৌযান মালিকরা মনে করেন।

দক্ষিণবঙ্গ সহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়ীক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌ বন্দরটি শত বছরের প্রাচীন। ২০১৭ সালে

সরকার এটিকে তৃতীয় শ্রেণির নৌ বন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ

বিভিন্নস্থান হতে নৌ পথে এই বন্দরে পন্য আনা নেওয়া করা হয়। ফরিদপুরের সোনালী আঁশ খ্যাত পাট এই বন্দর হয়েই চট্টগ্রাম বন্দর
দিয়ে বহিঃবিশ্বে রফতানি হয়।

এছাড়া সিলেট থেকে কয়লা চট্টগ্রাম থেকে সিমেন্ট, রাজশাহী হতে বালু, ভারতের গরু ও চাল সহ চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জ, কমলঘাট, মিরকাদিম থেকে এই নৌ
পথেই চাল আমদানি হয়।
নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে প্রচুর সিমেন্টবাহী জাহাজ ও কার্গো এই বন্দর হতে খালাস করা হয়।

কিন্তু বর্তমানে
নদীতে নাব্যতা না থাকায় এবং অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় এসব পন্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছেনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌবন্দরে ভীড়তে না পেরে অনেক দুরে ডিক্রীচর, ভূঁইয়াবাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, পিয়াজখালী ঘাট, হাজিগঞ্জের চরহাজীগঞ্জের এলাকা,

চরন্দ্রাসনের এমপিডাঙী ও গোপালপুর সহ বিভিন্নস্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো বলগেট ও বড় ট্রলার নদীর তীরে ভীড়ানো রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ মেঘনা ঘাট হতে আগত সিমেন্টবাহী জাহাজের মাস্টার মো. সাকিল সেখ গনমাধ্যম কে বলেন চড়ে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে ১২ হাজার বস্তা সিমেন্ট আনছি।

কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই বলে ৮ হাজার বস্তা সিমেন্ট আনতে হয়েছে। ৪ হাজার বস্তা সিমেন্ট কম আনতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ফরিদপুর ঘাটে আসতে প্রায় দুই কিলোমিটার চরের অস্তিত্ব মিলছে।৩ দিনের পথ আসতে ৫ দিন লেগে গেছে।
তিনি আরো।বলেন, এতে আমাদের পণ্যের তাড়াও কমে গেছে। নৌবন্দরে ভীড়তে পারলে প্রতি বস্তা হতে ১৪ টাকা করে বাড়তি পেতাম। কিন্তু এখন এই তাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি টিলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারণে তাদের স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ভাড়াও বেড়ে গেছে। এছাড়া জানমালের
নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। পথে পথে চাঁদাবাজদের হানা।

এমবি শতনীড় নামে আরেকটি জাহাজের মাস্টার মো. কামাল গনমাধ্যম কে বলেন, নাব্যতা না থাকায়, জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ডুবো চড়ে ঠেকে যায়। চুকান আটকে যায়। এতে চালু অবস্হায় জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, অন্তত গড়ে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু সেখানে কোথাও কোথাও দুই-তিন হাত পানি রয়েছে।

এখন জরুরি দরকার ড্রেজিং করা। পরিকল্পিত ভাবে ড্রেজিং না করলে, পুনরায় পলি পড়ে আবার গভীর করা জায়গা ভরে যায়।পদ্মায় কেনো নাব্যতা আসছে না কেন? এর কারণ জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্তরা (নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক) তারা বলেন,ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন পলি ও বালু এসে ভরে যায়। পানিতে প্রচুর পলি থাকায় এই অবস্হার সৃষ্টি হয়েছে।

ফরিদপুর নৌবন্দরের পন্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আঃ হাকিম গনমাধ্যম কে বলেন, প্রায় ৮ হাজার কুলি শ্রমিক এই নৌ বন্দরে কাজ করতো। এর মধ্যে,
অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও রয়েছেন। জাহাজ কার্গো না আসায় তারা বেকার হয়ে পড়ছেন। কাজ পাচ্ছে না। পদ্মা ট্রান্সপোর্ট এর মালিক রহমান গনমাধ্যম কে জানান, বছরের ৫ মাস এখানে পানি কম থাকে বলে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়। ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট হতে শুল্ক আদায়কারী বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বন্দরে জাহাজ, কার্গো বলগেট, বড়
ট্রলার ভিড়তে না পারায় তাদের শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। তিনি জানান, আগে ঘাটটি ইজারা দেয়া হতো। তবে এখন সরাসরি
বিআইডব্লিউটিও এর লোকেরা শুল্ক আদায় করেন।

এ্যাপারে, বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্ট পোর্ট অফিসার মাসুদ কামাল বলেন, নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেলে ড্রেজিং কাজ চলছে। তবে এই ঘাটটি এখনও পথটি বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই ঘাট পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করলে এই সংকট কেটে যাবে।

গনমাধ্যমের সাথে কথা হয় ঘাটের কুলি শ্রমিকদের জনৈক প্রবীণ নেতা মোঃ তারা মিয়া (৬০) এর সাথে তিনি জানান,এই ঘাটে ১১ টি কুলি সেক্টরে প্রায় ৮ হাজার কুলি শ্রমিক ছিল।

পদ্মার যৌবন থাকা অবস্হায় এই বন্দের প্রতিদিন ৩/৪ শত নৌযান ভীরত। এখন নাব্যতা সংকটের কারনে সপ্তাহ ১০/১৫ বলগেট ৩/৪ টি জাহাজ আসে। কাজ নেই। তাই কমপক্ষে ৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে।

একটি বিষয় ঘাট শ্রমিক ও ট্রান্সপোর্ট মালিকরা দুঃখ করে বলছেন, সরকার এই ঘাটটি থেকে বছরে প্রায় দেড়কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেন। অথচ নিজস্ব কোন শৌচাগার নাই। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ