পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকারের কাছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশার ফর্দ (তালিকা) অনেক দীর্ঘ। বিগত দশ বছরে দুই মেয়াদে মহাজোট সরকারের আমলে চট্টগ্রামের মানুষজন চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ মেলাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অতৃপ্ত, আবার অনেক বিষয়েই সন্তুষ্ট অথবা আশাবাদী। নতুন বছর ২০১৯ সালে এসে মহাজোটের নতুন সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে উঠতে শুরু করেছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা দুঃসহ পানিবদ্ধতা। যা ৬০ লাখ নগরবাসীর কাছে পরিণত হয়েছে ‘দুঃখের বারমাইস্যা’। এই সঙ্কটের একটা স্থায়ী বা টেকসই সমাধান চায় চট্টগ্রামবাসী।
প্রতিবছর বর্ষাকাল পঞ্জিকার হিসাবে আসতে না আসতেই ১২০ বর্গমাইলের চট্টগ্রাম মহানগরী এবং আরও এর দ্বিগুণ আয়তনের শহরতলীসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। আর বৃষ্টির সাথে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি একাকার হয়ে বন্দরনগরীর প্রধান সড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলি পর্যন্ত কোমর থেকে বুক সমান পানিতে থৈ থৈ করে। তখন আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় নৌকা নিয়ে চলাচল করতে হয় কর্মমুখী অগণিত লোক, শিক্ষার্থীদের। নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, পরিবহন ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক, কল-কারখানা অচল হয়ে পড়ে। দৈনিক লোকসান গুণতে হয় কোটি কোটি টাকার। আগ্রাবাদ হালিশহর ছাড়াও চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, ষোলশহর, চান্দগাঁও, মোহরা, পতেঙ্গা, সাগরিকা ও বিভিন্ন এলাকা এক পশলা বৃষ্টিপাত হলেই তলিয়ে যায়।
‘পানিই জীবন পানিই মরণ’। এ কথাটার মর্ম চট্টগ্রাম নগরবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। উঁচু-নিচু সমতল পাহাড়-টিলা নদ-নদী সাগর হ্রদ উপত্যকায় ঘেরা প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম। গরমকালে উঁচু এলাকায় খাবার পানির তীব্র কষ্ট। অন্যদিকে লোনা পানির বিস্তারের ফলে মহানগরী ও শহরতলীর বিরাট এলাকায় সারাবছরই মানুষকে লবণাক্ত পানি পান করতে হয়। সুপেয় পানি সহজে মিলে না। আবার বর্ষা মৌসুমে পানিই ‘আপদ’ হয়ে দেখা দেয়। জোয়ারের সাথে বৃষ্টির পানি যোগ হয়ে নগরীর বিশাল এলাকা ডুবে যায়।
বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদী-ঘেঁষা চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবেই জোয়ার-ভাটার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নগরী। কিন্তু মানুষের অপরিণামদর্শী ও আগ্রাসী হাতে মোহনার দিকে কর্ণফুলী ভরাট হয়ে গেছে। নদীর সাথে যুক্ত অর্ধশতাধিক খাল, ছরা, ঝরণা বেদখল, ভরাট ও দূষণের কারণে নগরীতে বৃষ্টির পানি নামার পথই অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। দিনে-রাতে জোয়ার-ভাটায় পানি আটকে থাকে অনেক জায়গায়। ভারী বৃষ্টিতে নগরীর ছিন্নভিন্ন পাহাড়-টিলাগুলো বেয়ে ঢলের সাথে কাদা-পানি-বালি ও অসহ্য দুর্গন্ধময় ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে বসতঘর, দোকান-পাট, হাট-বাজার, গুদাম, আড়ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা সয়লাব হয়ে পড়ে। গত ৫ বছর যাবত কয়েক বছর যাবত দেখা যাচ্ছে, শুধু ভরা বর্ষাকালেই নয়; প্রাক-বর্ষায় ও বর্ষাত্তোর সময়েও বছরের ৪ থেকে ৬ মাস জোয়ার-ভাটায় ডুব-ভাসি করছে চট্টগ্রামের ‘নাভি’ আগ্রাবাদসহ বিরাট এলাকা। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা চিত্র পাল্টে গেছে।
গতবছর বর্ষায় দফায় দফায় ভয়াবহ পানিবদ্ধতার কবলে পড়ে আগ্রাবাদ এবং সওদাগরী পাড়া খ্যাত দেশের প্রধান পাইকারি ও ইন্ডেন্টিং বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আছদগঞ্জ। ব্যবসায়ীরা বলেন, ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ সালের সাইক্লোনেও এতবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। চিটাগাং চেম্বার ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এর দ্রুত সমাধান চেয়েও নিরাশ হয়েছেন। চাক্তাই খালের আমূল সংস্কার ও কর্ণফুলী মোহনায় নাব্যতা বৃদ্ধিতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ তারা সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি জানিয়ে আসছেন। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চাটগাঁর নাগরিক মহল বলছে, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সেবাদানকারী সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় জরুরি। সমন্বয়ের অভাবে এখন কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী। নগরীর খালসমূহ পুনরুদ্ধার ও পানিবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণে ৬ হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প সিডিএ’র মাধ্যমে সরকার গতবছর গ্রহণ করেছে। এর বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনসহ সকল সংস্থাকে সম্পৃক্ত এবং সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। অন্যথায় চট্টগ্রাম বসবাসের আরও অযোগ্য হয়ে পড়বে। শিল্পায়ন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি সিংহভাগ রাজস্ব আহরণ মুখ থুবড়ে পড়বে।
চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতার সমস্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে মর্মে সতর্ক করে বিশেষজ্ঞগণ চান শহর রক্ষা বাঁধ। অন্যথায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ঘন ঘন ডুবে যাওয়া এবং লাখ লাখ মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির অবসান হবেনা। তারা বলেন, পরিকল্পিতভাবে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। যথেষ্ট উঁচু করে সেই বাঁধ হতে হবে বাঁধ-সড়ক তথা মেরিন ড্রাইভওয়ে কাম এমব্যাঙ্কমেন্ট। সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সুইচ গেইট থাকতে হবে, যাতে জোয়ার-ভাটার পানির স্বাভাবিক নিয়মে আসা-যাওয়া হতে পারে। এর পাশাপাশি মহানগরীতে বৃষ্টি ও জোয়ারে পানিবদ্ধতার সঙ্কট নিরসনের জন্য দু’টি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এক. মহানগরীর বেদখলকৃত ও হারিয়ে যাওয়া সকল খাল-ছরা ভূমির দলিল-ম্যাপ-খতিয়ান (আর.এস, পি.এস, বি.এস) ইত্যাদি অনুসারেই পুনরুদ্ধারের জন্য অনতিবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সংস্কার করতে হবে। তাহলেই বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি প্রকৃতির আপন নিয়মে বঙ্গোপসাগরের দিকে নিষ্কাশিত হবে। দুই. পরিকল্পিত বাঁধ-সড়কের কাছাকাছি পর্যাপ্ত সংখ্যক জলাধার, পুকুর, ঢোবা রাখতে হবে। বেদখলে হারিয়ে যাওয়া নগরীর জলাশয়গুলো উদ্ধার ও সংস্কার করতে হবে। এরফলে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি শহরের উপকূলীয় এলাকাগুলো অতিক্রম করে আসার আগেই কিংবা পাহাড়-টিলা বেয়ে পানি নেমে পানি জমে থাকার জন্য জলাধার গড়ে উঠবে। এই দু’টি ব্যবস্থায় নদী, খাল-ছরা, নালা-নর্দমা ও জলাশয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীর পানি ধারণ এবং বহনের ক্ষমতা বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নগরীতে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা বর্তমানে অকার্যকর। একে ঢেলে সাজাতে হবে। স্থায়ী শহর রক্ষা বাঁধ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সেবাদানকারী সংস্থা, বিভাগসমূহ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। একে প্রযুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।