পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
0 শপথ নেননি ঐক্যফ্রন্টের সাতজনসহ এরশাদ ও সৈয়দ আশরাফ
0 নতুন এমপিদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার
0 সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা চ‚ড়ান্ত হয়নি
একাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত ২৮৯ জন এমপি শপথ নিয়েছেন। গতকাল সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে তাদের শপথ পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অসুস্থতা-জনিত কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সাতজন এমপি শপথ গ্রহণ করেননি। শপথ গ্রহণের পর নবনির্বাচিত এমপিরা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন।
নতুন এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারপরও শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংসদ ভবন জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সংবিধান ও কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। দ্বিতীয় ধাপে তিনি (স্পিকার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ২৫৬ জনের শপথবাক্য পাঠ করান। তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) দুইজন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের দুইজন, তরিকত ফেডারেশনের একজন, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) একজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত তিনজন শপথ নেন। চতুর্থ ধাপে জাতীয় পার্টির ২১ জন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ শেষে সকলেই শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) একাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৮টি আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নাম এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সংবলিত গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করে। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্বাচনের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় ওই আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি পেয়েছে পাঁচটি আসন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি তিনটি আসন, গণফোরাম দুটি (এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং উদীয়মান সূর্য নিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ দুটি, জাসদ দুটি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন একটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটি আসন লাভ করেন।
জাতীয় সংসদ ভবনে শপথ অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ১১টা। কিন্তু সকাল থেকেই নির্বাচিত এমপিরা একে একে সংসদ ভবনে আসতে থাকেন। নির্ধারিত সময়েই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ গ্রহণ করে শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করার পর প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত অন্য সদস্যরাও তাকে অভিনন্দন জানান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।
সংসদ সচিবালয় জানায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী নির্বাচিত ২৯৮ জন এমপির মধ্যে চারটি ধাপে ২৮৯ জন শপথ নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নিতে পারেননি। তিনি বুধবার স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে শপথের জন্য সময় চেয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের গতকাল বিকেলে শপথ গ্রহণের কথা থাকলেও তিনি পরে স্পিকারের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই তিনি শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন। আর নির্বাচিত হলেও শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাতজন সংসদ সদস্য।
এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সৈয়দ আশরাফ সাহেব শপথের জন্য সময় চেয়েছেন। উনি দেশে ফিরে আসার পর শপথ নিতে চান। এমনিতেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথের জন্য ৯০ দিন সময় পাবেন বলে তিনি জানান।
শপথবাক্যে নির্বাচিত এমপিরা আইন মেনে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দেশের আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছেন। শপথ গ্রহণকালে এমপিরা নিজ নিজ নাম উচ্চারণ করে স্পিকারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকেনÑ ‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব, আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব, এবং সংসদ-সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দেবো না। শপথ পাঠ করানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে এমপিদের প্রথম সারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডান পাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর বাঁ পাশে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ নাসিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক। আর মাঝে নাজমুল হাসান পাপনের পাশে ছিলেন নতুন দুই আলোচিত সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ও শেখ তন্ময়। শপথ শেষে সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটারিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা-চক্রের আয়োজন। এরপর সংসদ সচিবের দফতরে রক্ষিত সংসদ সদস্যদের রেজিস্ট্রার খাতায় তারা স্বাক্ষর করেন। এদিকে শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংসদ ভবন ও চারপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ওই এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। সংসদ ভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। আর এই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও পুরো সংসদ ভবন জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অভ্যন্তরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবনকে নতুন রূপে সাজানো হয়। সকাল থেকে সংসদের মূল ভবনের প্রধান গেট থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সামনে এমপিদের স্বাগত জানাতে দেখা যায় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
এদিকে শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি সভায় সর্বসম্মতক্রমে সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিরোধী দলের নেতা কে হচ্ছেন তা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তর দল জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। দলটির নেতারা জানান, তারা বিরোধী দলে থাকতে চান না; মহাজোটের শরিক হিসেবে সরকারি দলেই থাকতে চাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমপিরা ৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি বসে সংসদের প্রথম অধিবেশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট পহেলা জানুয়ারি প্রকাশ হওয়ায় ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ অধিবেশন বসবে। আর যে দিন অধিবেশন বসবে সেই দিন থেকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হবে। প্রেিেসডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়ানোর পর সংসদ অধিবেশন আহবান করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।