Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আর্থ-রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আজ বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন। দেশের আর্থ-রাজনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়া খুবই জরুরি। যদি তা না হয়, তবে দেশ এক গভীর সংকটে পড়বে। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনিতেই নির্বাচন সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরে বিনিয়োগে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি কেমন হয়, তা দেখার জন্য। তাদের মধ্যে এ অশঙ্কা কাজ করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কাজেই আগেভাগে বিনিয়োগ করলে তাদেরকে ক্ষতির শিকার হতে হবে। তাদের এই মনোভাবের কারণে অর্থনীতিতে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। অর্থনীতির গতি কমছে। দেশি বিনিয়োগকারীরা বসে আছেন হাত গুটিয়ে। এমনিতেই বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগের হার খুবই কম। আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না, উল্টো অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে দেশের এক নম্বর রপ্তানি খাত গার্মেন্টের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা যথেষ্ঠ শঙ্কায় রয়েছে। তাদের মূল শঙ্কা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে। এ শঙ্কা দূর হবে তখনই, যখন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে। এর ব্যতিক্রম হলে দেশ যে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। সরকার হয়তো বরাবরের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে দমাতে চেষ্টা করবে, তবে তা যে বিনিয়োগকারীদের আরও ভীত করে তুলবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
দুই.
বাংলাদেশ সম্ভাবনার দেশ, এ নিয়ে কারো মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। দেশ অর্থনীতিতে এশিয়ার টাইগার হবে, এমন কথা বহুবার বলা হয়েছে। এশিয়ার টাইগারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনার সব উপাদান এখানে বিদ্যমান। তবে সম্ভাবনা থাকলেই তো হবে না, সম্ভাবনাকে সঠিক উদ্যোগের মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এ সম্ভাবনাকে কতটা কাজে লাগাতে পারছি? কাজের চেয়ে কথা বেশি বলছি কিনা? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, নানা সমস্যার কারণে অফুরন্ত সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ দুর্বলতা কাটানো যাচ্ছে না। এর মূল কারণই হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠার আশঙ্কা। এ কথা সবাই জানেন, অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ ব্যবসা-বাণিজ্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং তা গতিশীল থাকার মধ্যেই অর্থনীতির উন্নতি নিহিত। সরকার কি অর্থনীতির অন্যতম মূল স্তম্ভ শিল্প-কারখানার বেহাল এ চিত্রের কথা জানে না? নিশ্চয়ই জানে। জেনেও তা এড়িয়ে অর্থনীতির উন্নতির কথা বলা কতটা সমীচীন? ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে এ ধরনের কথা বলা কি বলা উচিত? বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার কল-কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দিতে পারছে না। এদিকে মনোযোগ আছে বলেও মনে হয় না। অথচ সরকার গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিদ্যুত উৎপাদনের রেকর্ডের কথা বলে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে দুটির দামও বৃদ্ধি করেছে। যদি বিনিয়োগের চিত্রের দিকে দৃষ্টি দেয়া যায় তবে দেখা যাবে, সেখানে করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বলতে কিছু নেই। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। বিদেশি বিনিয়োগের কথা বাদই দেয়া যাক। দেশি বিনিয়োগও আশানুরূপ হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, দেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোতে অলস টাকা জমছে। এ টাকা আবার ঋণের নামে লুটপাটও হয়ে যাচ্ছে। এ কথা কে না জানে, অর্থ বৃদ্ধির একমাত্র উপায় লেনদেন। স্তূপ করে জমিয়ে রাখলে তা কখনো বাড়ে না। যে অর্থ কাজে লাগানো হয় না বা কাজে লাগানোর পথ থাকে না, সে অর্থ অচল টাকার মতোই অর্থহীন। অর্থনীতির প্রধান মেরুদণ্ড যে কৃষি, সে ক্ষেত্রটি কি ভালো আছে? এ ক্ষেত্রের যে চিত্র দেখা যায়, তা খুবই করুণ। অথচ সরকার বাম্পার ফসলের উৎপাদনের কথা বলে কৃতিত্ব নেয়। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া নিয়ে যে কৃষক মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে, হতোদ্যম হয়ে পড়ে, এ বিষয়টি বলে না। আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি, কৃষক ধান, আলুসহ অন্যান্য ফসল ফলিয়ে, বিক্রি করতে গিয়ে লাভ করা দূরে থাক, উৎপাদন খরচও পাচ্ছে না। ফলে অনেক কৃষককে রাস্তায় ধান, আলু ফেলে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কৃষকের এসব সমস্যা সমাধান না করেই সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলে ক্রেডিট নিতে থাকে। আবার চাল আমদানিও করে। এমন দ্বৈত নীতির কারণে কৃষকের হতাশ হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে! বছরের পর বছর ধরে যদি কৃষককে হতাশায় ডুবে থাকতে হয়, তাহলে উন্নতি হবে কীভাবে? অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে বলেছেন, কৃষকের এই হতাশার প্রতিক্রিয়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে ক্রমেই স্থবির করে দিচ্ছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এ কথাটিও সার্বজনীন নয়। এটি আপেক্ষিকতার ঘেরাটোপে বন্দি। এই আপেক্ষিকতা আবার আকাশ-পাতাল ব্যবধানের মধ্যে অবস্থান করছে। ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা যারা বলেন এবং যারা অঢেল অর্থসম্পদের মালিক, তাদের ক্ষেত্রেই কেবল কথাটি প্রযোজ্য। কেনাকাটায় তাদের সমস্যায় পড়তে হয় না। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুনের দাম কেজি প্রতি দশ-বিশ টাকা বাড়লেও তাতে তাদের অসীম অর্থ ভাণ্ডারে টান পড়ে না। তারা হয়তো ঠিকমতো জানেও না, এক সপ্তাহ আগে জিনিসপত্রের দাম কত ছিল, আর এখন কত? অন্যদিকে এ কথা বলা হয় না, সাধারণ মানুষ আগে যে টাকায় যে পরিমাণ জিনিসপত্র কিনতে পারত, এখন তা তারা কিনতে পারছে না। এক কেজির জায়গায় তাদের আধা কেজি কিনতে হচ্ছে। বাঁচতে হলে তো তাদের কিনতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি স্বাচ্ছন্দ্যে চলার মতো করে কিনতে পারছে? এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা কি অনেকটা সত্যের অপলাপ নয়?
তিন.
বাংলাদেশে সম্পদ ও সম্ভাবনার কমতি নেই। অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে। তা নাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ‘উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে অবৈধ অর্থের প্রবাহ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও অনেক অর্থই বিদেশে পাচার হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি অঢেল সম্পদ না থাকতো, তাহলে এতো অর্থ পাচার হতে পারত না। অর্থনীতিবিদরা এই অর্থ পাচারের কারণ সম্পর্কে বিনিয়োগ পরিস্থিতির স্থবিরতা ও সুশানের অভাবকে দায়ী করেছেন। তারা একথাও বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান থাকলে অর্থ পাচার বেশি হয়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এ দুটোরই তীব্র অভাব রয়েছে। এখন যে হারে অর্থ পাচার হচ্ছে, তার মূল কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এর ফলে কোনো উদ্যোক্তাই বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ তারা জানেন না কখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। ফলে যেভাবেই হোক তারা তাদের অর্থের নিশ্চয়তার জন্য বিদেশমুখী হয়ে পড়েছেন। দুঃখের বিষয়, যে অর্থ আমাদের দেশেই বিনিয়োগ হতে পারত এবং অর্থনীতি গতিশীল হতো, সে অর্থে অন্য দেশের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠছে। দেশগুলো তাদের অর্থের বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কীভাবে অর্থ এসেছে, এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। এমনকি তারা অর্থের তথ্য গোপন রাখে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যেভাবেই সংশ্লিষ্ট দেশে অর্থ পাচার হোক না কেন, এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ তাদের দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে এবং তাদের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে- এটাই বড় কথা। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ দূরে থাক উল্টো বানের পানির মতো অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এক তথ্যে দেখা গেছে, দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের এখন পছন্দের জায়গা সিঙ্গাপুর, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়া মালয়েশিয়া, কানাডা ও আমেরিকায়ও অর্থ পাচার করা হয়। আর সুইস ব্যাংক তো আছেই। কয়েক বছর আগে সুইস ব্যাংক জানিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশিদের ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। মালয়েশিয়া তো দেশের অনেক ধনকুবেরদের সেকেন্ড হোম। বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ করতে দেশটি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সেকেন্ড হোম প্রকল্পও চালু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজারের বেশি জন ইতোমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত তারা সেখানে পাচার করা আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কানাডায় বাংলাদেশি ধনকুবেররা অর্থ পাচার করে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছেন। কানাডার সরকারও তাদের বেশ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। সেখানে নাগরিকত্ব ছাড়া এমনিতেই ছয় মাস বসবাস করা যায়। এজন্য ব্যাংক হিসাব ও বাড়ি কেনার সুযোগ দেয়া হয়। সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে সেখানে দেশি-বিদেশি ভেদাভেদ করা হয় না। আমেরিকায়ও সম্পত্তি কেনা সহজ। ফলে দেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে স্বজনদের নামে বা নিজ নামে পাচারকারীরা বাড়ি কিনতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকার আবাসন খাতে বাংলাদেশিরা প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে বলে এক তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে তো বিদেশিদের বিনিয়োগকৃত অর্থের করই দিতে হয় না। এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, বাংলাদেশে অর্থ বিনিয়োগের কোনো সুষ্ঠু ও অনুকূল পরিবেশ না থাকার কারণেই প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ পাচার হওয়া অর্থ দেশে বিনিয়োগে উৎসাহমূলক পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে পাচার হওয়া অর্থের স্রোত অনেকটাই রোধ করা যেত। এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, সেই সাথে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ, সুগম যাতায়াত ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের এশিয়ার টাইগারে পরিণত হওয়া অসম্ভব কিছু ছিল না। এসব ব্যবস্থা না করে কেবল মুখে মুখে বাংলাদেশ বিশ্বে অর্থনীতির রোল মডেল বলে কথার ফুলঝুরি ছড়াতে থাকলে এক সময় তা রাখাল বালকের গল্পের মতো পরিহাসে পরিণত হতে বাধ্য।
চার.
বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে, এ কথা কেবল সরকার বললে হবে না, সাধারণ মানুষও যাতে বলতে পারে, এ ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। যে সরকার সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থবিরতার উপর দাঁড়িয়ে উন্নতির নিশান উড়ায়, তার প্রতি জনসাধারণেরও আস্থা কমে যায়। সরকার যে এ কথা জানে না, তা মনে করার কারণ নেই। সাধারণ মানুষ যদি বলে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, তা যথাযথভাবে না নেয়ার কারণেই অর্থনীতি মন্দাবস্থার কবলে পড়েছে, তবে তা বেশি বলা হবে না। আমরা দেখেছি, সরকার পদক্ষেপ নিলেও তা অদক্ষতা ও দুর্নীতির কবলে পড়ে ভেস্তে যাচ্ছে। অর্থাৎ অর্থনীতির ক্ষেত্রে সুনীতির তীব্র সংকট রয়েছে। এ সংকট বছরের পর বছর চলতে থাকলে উন্নতি ঐ নির্দিষ্ট একটি গণ্ডিতেই আবদ্ধ হয়ে থাকবে। অর্থনীতির কাক্সিক্ষত উন্নতি না করে একটা সময় যদি বলা হয়, আমরা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ কথা সবাই জানেন, অর্থনীতিকে গতিশীল করার প্রথম শর্তই হচ্ছে, ঐকমত্যের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ কথা অনস্বীকার্য, যতদিন না রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন তার কুফল অর্থনীতিকে গ্রাস করে যাবে। সরকার মারমার কাটকাট প্রক্রিয়ায় হয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সাময়িকভাবে দাবিয়ে রাখতে পারবে। তবে তা কখনোই দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভব নয়। প্রতিপক্ষকে দাবিয়ে রাখার এ প্রবণতা বিনিয়োগের পরিবেশকে কোনোভাবেই নিশ্চিত করবে না। বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি যদি সুষ্ঠু না হয়, তবে দেশ যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে, তা অতি সাধারণ মানুষও জানে। আর বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিতভাবেই জানে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এজন্য যাদের সামর্থ্য আছে তারা অর্থ পাচার করে বিদেশ নিয়ে যাচ্ছে, যাদের সামর্থ্য নেই তারা মুখ থুবড়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে রয়েছে। দেশের অর্থনীতির এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে অবশ্যই অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতির বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। দাবিয়ে রাখার রাজনীতি থেকে বের হয়ে সমঝোতার রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা খুবই প্রয়োজন। তা নাহলে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ ও অস্থিতিশীলতা শুরু হলে, তার দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে। সরকার যদি অতীতের মতোই প্রতিপক্ষকে দমন ও নিয়ন্ত্রণের পন্থা অবলম্বন করে, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে, যা দেশকে এক গভীর সংকটের মধ্যে ফেলে দেবে। আজকের ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আশংকিত রাজনৈতিক সংকট মোচনের পথ উন্মুক্ত হবে। গণরায়ভিত্তিক সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত হলে সব ক্ষেত্রে সুশাসন ও ন্যয়বিচার কায়েমের সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠবে। অর্থনীতি ও উন্নয়নে সুবাতাস প্রবাহিত হবে। প্রত্যাশার এই পটভূমিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। এক্ষেত্রে জনগণকেই মূল ভূমিকা নিতে হবে। ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে, ভোট দিতে হবে- গণরায় ভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠায় এর বিকল্প নেই।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই
আরও পড়ুন