Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিএমপি কমিশনারের আহবান ও প্রতিশ্রুতি

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আগামীকাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণের যেমন আগ্রহ, উৎসাহ রয়েছে, তেমনি সংঘাত-সহিংসতা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি সব মহল থেকেই এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। শঙ্কার কাজ মূল কারণ হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক হারে হামলা হওয়া। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক বিরোধী দলের ওপর হামলার বিষয়টি সবার মধ্যে এক ধরনের ভয়-ভীতি সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের তরফে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তাতেও নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা ফুটে উঠেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরাস বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে বৈঠক শেষে আশঙ্কা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে চলা প্রচার-প্রচারণায় যেসব কর্মকান্ড হয়েছে, তাতে ভোটের দিন অধিক মাত্রায় সহিংসতা হতে পারে। এছাড়া দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সচেতন মহলও নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা বরাবরই করে আসছে। সবচেয়ে অক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, স্বয়ং নির্বাচন কমিশন সরকারি হাসপাতালগুলোকে জরুরি সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে, এই নির্দেশ ভোটের দিন যে সহিংসতা হবে তা অনেকটাই নিশ্চিত করে দেয়। তবে আশাবাদের বিষয় হচ্ছে, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, সব কেন্দ্র নিরাপদ থাকবে। সারাদেশের ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে যান। নির্বাচনের আগে ডিএমপি কমিশনারের এ বক্তব্য কিছুটা হলেও ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহী ও আশ্বস্ত করবে। আমরা তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাস ও সহিংস ঘটনা নিরোধে আন্তরিক হলে কারো পক্ষে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছাই যথেষ্ট। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এ বাহিনী একটু তৎপর হলে সংঘাত ও সহিংসতা অনেকাংশেই কম এবং সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। ভোটের দিন যদি এ বাহিনী সত্যিকার অর্থে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখতে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখে, তবে ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। ফলে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর হবে। এক্ষেত্রে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, দেশ ও দশের নিরাপত্তা দেয়াই পুলিশের কাজ। তারা কারো প্রতিপক্ষ নয়। জনগণের নিরাপত্তার জন্য যা ভালো তাই করছে ও করবে পুলিশ। আমরাও তার কথার সাথে একমত পোষণ করে বলছি, নির্বাচনের দিন পুলিশ তার কথা মতোই আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছা পোষণ করে দায়িত্ব পালন করবে। ভোট কেন্দ্র থেকে শুরু করে এর আশপাশের এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। কারণ জনগণ ভোট দিতে চায়। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উদগ্রীব হয়ে আছে। তারা যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে। তাদের এ অধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য পুলিশকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, নির্বাচনী প্রাচার-প্রচারণার সময় যেভাবে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, নির্বাচনের দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। তাদের এ প্রত্যাশা পূরণে পুলিশ বাহিনীকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী নামার পর যেসব এলাকা দিয়ে তাদের গাড়ি গিয়েছে বা টহল দিয়েছে, সেসব এলাকায় দুর্বৃত্তদের আনাগোণা কম হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। এর কারণ সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। পুলিশকেও অন্তত ভোটের দিন জনগণের এ আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে ভোটের পরিবেশ সংঘাতপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বলা যায়, এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়া এবং করার বিষয়টি পুলিশের নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব মহলে যে সংঘাত ও সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তা দূর করার গুরু দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীকেই নিতে হবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য যেসব বাহিনী রয়েছে তাদেরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কেবল মাঠে থাকলেই চলবে না, যেখানেই সংঘাত-সহিংস ঘটনা ঘটবে বা আশঙ্কা দেখা দেবে, সেখানে তাদের ত্বরিৎ ‘অ্যাকশন রোল প্লে’ করতে হবে। তা নাহলে জনগণের মধ্যে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। প্রমাণ করতে হবে, মাঠে যে দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে, সে দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করছে। তাদের ওপরই নির্ভর করছে একটি সংঘাতমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এ দায়িত্ব পালনের ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ সংঘাতময় হয়ে উঠবে, যা অত্যন্ত ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করবে। নির্বাচন কমিন সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ প্রস্তুত রাখার যে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে এ আশঙ্কা দূর করে দেবে। আমরা চাই না, নির্বাচনী সহিংসতায় কেউ নিহত বা আহত হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই নিক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন