পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের জেরে ইসির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকটি হতে পারেনি। ড. কামাল হোসেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে সিইসি তাতে দ্বিমত প্রকাশ করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তিক্ত বাক-বিতন্ডা হয় এবং বৈঠকটি বয়কটে রূপ নেয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠক থেকে বেরিয়ে যায়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বৈঠকসূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফে তার প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় পুলিশের হামলার বিবরণ পেশ করা হয়। ‘ড. কামাল হোসেনও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য প্রদানের একসময়ে কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ সর্বত্র লঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের লোকজন আইসিইউতে। মারধর করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। একপর্যায়ে সিইসি জানতে চান, কোথায় পুলিশ বাধা দিচ্ছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে? তিনি তাদের সেখানে নিয়ে যেতে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বলেন। সিইসি বলেন, পুলিশ স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখছে। আপনাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। তখন ড. কামাল সিইসির উদ্দেশে বলেন, সিইসি হলেন বিচারকের ভূমিকায়। বিচারক সাক্ষ্য নেবে, নিজে সাক্ষী হবে না। কিন্তু সিইসি হিসেবে আপনি পুলিশের পক্ষ নিচ্ছেন। চলেন, আপনাদের নিয়ে যাবো।
এক পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রক্ষায় সিইসিকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। কামাল হোসেন বলেন, প্লিজ দেশটাকে বাঁচান, আপনার হাতে ধরি, প্রয়োজনে পা ধরব। এক পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, কিছু পুলিশ সদস্য জানোয়ারের মত আচরণ করছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সিইসি নুরুল হুদা। তিনি কামালের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি পুলিশকে জানোয়ার বলছেন কেন? আপনি জানোয়ার বলতে পারেন না’। এ সময় ড. কামাল হোসেনকে লক্ষ্য করে সিইসি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি নিজেকে কি মনে করেন’? জবাবে কামাল হোসেন বলেন, তাহলে আপনি কি চান আমরা চলে যাবো? সিইসি বলেন, যান। তখন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বৈঠক ত্যাগ করেন।
ইসির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বির্ধারিত বৈঠকটির এরূপ দুঃখজনক পরিণতির জন্য প্রকৃতপক্ষে কে দায়ী, সিইসি না ড. কামাল হোসেন, বর্ণিত রিপোর্টটির উদ্ধৃতাংশ থেকে পাঠকবর্গই তা নির্ধারন করবেন। আমাদের বলার কথা শুধু এটুকু যে, কারো বা কোনো পক্ষেরই ধৈর্য হারানো ঠিক নয়। অভিযোগকারী কিছুটা উত্তেজিত হতে পারেন, ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু অভিযোগের প্রতিকারকারী একই রকমভাবে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হতে পারেন না। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিইসির কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন যথাযথ প্রতিকার পাওয়ার আশায়। সিইসির উচিৎ ছিল, ধৈর্যের সঙ্গে অভিযোগগুলো শোনা এবং অত্যন্ত সংযত ভাষায় বক্তব্য রাখা। তার ওইভাবে মেজাজ হারিয়ে ফেলা উচিৎ হয়নি। আমরা এ বিষয়ে বেশি কিছু না বলে এখানে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের একটি অভিমত উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিকবিদদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের প্রত্যুত্তর দেয়া সমীচীন হয়নি।
বিশেষ করে নির্বাচন যখন একেবারেই দোরগোড়ায়। এ সময় কমিশনের এ ধরনের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। হয়তো নানা জায়গা থেকে কমিশনের ওপর চাপ থাকতে পারে। এ ধরনের নাজুক সময়ে অত্যন্ত ধৈর্যশীল থাকতে হয়।
নবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং নাটোর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ‘যারা নৌকায় ভোট দেবেন, তারাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন’। এই বক্তব্যে উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যদি শুরু থেকে অভিযোগ আমলে নিত তাহলে এধরনের পরিস্থিতি নাও হতে পারত। কাজেই এ সময়ে এসে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল পদে যারা আছেন তাদের ধৈর্য হারালে চলবে না। তারা যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক কীভাবে আচরণ করতে হবে সেটা তাদের জানা উচিৎ। আমাদের মতো দেশে নির্বাচন নিয়ে যেহেতু তুলকালাম ঘটে, সেখানে ধৈর্যশীল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
কথায় বলে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। সিইসি অনেকবারেই হেরেছেন। আরও একবার হারলেন। তার নিশ্চয়ই স্মরণ থাকার কথা, তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত। তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রধান সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন করা। নির্বাচনকে যদি খেলার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে সেই খেলায় নির্বাচন কমিশন হলো রেফারি। খেলায় নিরপেক্ষ থাকা রেফারির সবচেয়ে বড় শর্ত এবং কর্তব্য। নির্বাচনের খেলায় রেফারি হিসেবে নির্বাচন কমিশন কোনো দলের প্রতি অনুরাগ বা কোনো দলের প্রতি বিরাগ পোষণ করতে পারে না। সবার প্রতি সমআচরণ তার কাছে প্রত্যাশিত।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, কে এম নুরুল হুদা নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত। এই কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, দু’একটি ব্যতিক্রম বাদে তার সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ সব নির্বাচনে বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, জাল ভোটের উৎসব ও ভোট ডাকাতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তা রুখতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। খুলনা, গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, দেশবাসীর তা অজানা নেই। অথচ প্রতিটি নির্বাচনকেই ইসি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হিসাবে সনদপত্র দিয়েছে। এসব নির্বাচন সম্পর্কে সরকার বা সরকারি দল যে অভিমত দিয়েছে, নির্বাচন কমিশন হুবহু সেই অভিমতই দিয়েছে। সরকারের নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবেই যেন নির্বাচন কমিশন নিজের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করেছে। এখন সরকারি দল-মহল বাদে কোনো মহলই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে বিশ্বাস করে না। তারা শুরু থেকেই এই নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অজ্ঞাবাহী বলে মনে করেছে। আর আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কাক্সিক্ষত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। এই অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা অপনোদনের যথেষ্ট সুযোগ থাকা বা পাওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করেনি। অবাধ, সুষ্ঠু, ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা নির্বাচন কমিশনের সব চেয়ে বড় দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সিইসি এক সময় বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সেটা করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। তফসিল ঘোষণার পর তা করা হবে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, সিইসি পূর্ব প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গেছেন। তফসিল ঘোষণার পর প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ, মারামারি, হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে এ সব আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা উৎসব করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। পক্ষান্তরে বিরোধী দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা মাঠেই নামতে পারেনি। তাদের ওপর সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকরা চড়াও হয়েছে। তাদের প্রচারণায় বাধাদান কিংবা হামলা করেছে। বিএনপির নির্বাচনী মনিটরিং সেল ও কেন্দ্রীয় দফতরের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর ২৪ দিনে ধানের শীষ প্রতীকের ২৮ জন প্রার্থী সরকারি দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন। একাধিক প্রার্থী পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। একই সময়ে সারা দেশের ৩০০ আসনে ২০৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৩৪৭ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছে। বলাবাহুল্য, এরপরও হামলার ঘটনা থামেনি। অনেকই মনে করেছিলেন সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। কিন্তু তা হয়নি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, সেনা মোতায়েনের প্রথম দিনে অন্তত ১৭ জেলায় ২১ আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের গাড়িবহর, গণসংযোগ ও নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২২৬ জন আহত হয়েছে।
সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের বেপরোয়া হামলার পাশাপাশি চলেছে পুলিশের মামলা ও গ্রেফতার অভিযান। পুলিশের আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি দলের মারমুখী কর্মী-সমর্থকদের মত। পুলিশ ক্ষেত্র বিশেষে হামলায় সহযোগিতা করেছে ছত্রছায়া দিয়ে। ক্ষেত্র বিশেষ তাদের মত হামলায় অংশ নিয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলা ও গ্রেফতারের সংখ্যা যে কতো তার সঠিক হিসাব দেয়া মুশকিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গত সোমবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর তার সাত হাজার কর্মী-সমর্থক গ্রেফতার হয়েছে। একজন ওসির নৌকায় ভোট চাওয়ার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ রকম ওসি বা পুলিশ কর্মকর্তা আরো অনেক থাকার কথা। এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এক শ্রেণীর দলবাজ পুলিশের এ ধরনের আচরণ, ভূমিকা এবং বিরোধীদলীয় কর্মী-সমর্থকদের ওপর দমননীতি অনুসরণের প্রেক্ষাপটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি দলের উগ্র ও হামলাবাজ, কর্মী-সমর্থক এবং পুলিশের এক শ্রেণীর সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে যে, তারা বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যেতে বারন করছে। হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের পাশাপাশি এ ধরনের হুমকি-ধামকিতে অনেক এলাকাতেই মানুষ রীতিমত ভীত-সস্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবস্থায় এই প্রেক্ষাপটে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে হবে? নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ যে অনুপস্থিত, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ সিইসি নির্বাচনের পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চত হয়েছে, দেশে নির্বাচনের সুবাতাস বইছে ইত্যাকার বিভ্রান্তিজনক কথাবার্তা লাগাতার বলেছেন। অন্যদের কথা বাদ দিলেও খোদ নির্বাচন কমিশনেই তার এসব মন্তব্য-বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমতের অস্তিত্ব রয়েছে। সিইসির এই একচোখা দৃষ্টিভঙ্গী ও মনোভাব অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
নির্বাচনকেন্দ্রিক সন্ত্রাস-সহিংসতা এবং পুলিশের মামলা, গ্রেফতার, দমন-পীড়নসহ বৈরী ভ‚মিকা ও আচরণ নির্বাচনের পরিবেশকে রীতিমতো ভীতিকর করে তুলেছে। ভোটারদের মধ্যে তৈরি করেছে ত্রাস ও আতঙ্ক। এ অবস্থায় তারা ভোট দিয়ে যেতে পারবে কি না, নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবে কি না, সে শঙ্কা অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ। যেখানে বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের নিরাপত্তা থাকে না, তাদের হামলার শিকার হতে হয়, গ্রেফতার হতে হয়, সেখানে তাদের কর্মী-সমর্থকরা হামলা গ্রেফতারের সম্মুখীন হবে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এ অবস্থা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ইসি, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে একজোট হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, তাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন একটি তামাশায় পরিণত হয়েছে।
বিরোধী দল, পর্যবেক্ষক মহল এমন কি ভোটারাও একমত যে, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ প্রায় সর্বাংশে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তাদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও আচরণই এর প্রমাণ বহন করে। আশা ছিল, সেনা মোতায়েন হলে এ অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। বরং ক্রমাগত পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আর শেষাবধি এই অবনতি অব্যাহত থাকলে নির্বাচন হয়ে উঠতে পারে সম্পূর্ণ একতরফা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধীদল অংশ না নেয়ার ওই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলে সে নির্বাচন একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। এবারের নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক হলেও একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সমূহ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ আশঙ্কা সত্য হয়ে উঠলে দেশের গণতন্ত্রের ধারা ব্যাহত হবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা নেমে আসবে, এমন ধারণা সব মহলেই প্রবল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দিকের বিচারে দেশ জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের জন্য একটা বিরাট পরীক্ষা। দলীয় সরকারের অধীনে বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হবে কি না, টিকে থাকবে কি না, সেটা এই নির্বাচনে নির্ণিত হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত থাকাবে কি না, তার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে কি না, সেটাও নির্ধারিত হবে। উন্নয়নের স্লোগানের আড়ালে গণতন্ত্র হারিয়ে যাবে কি না, তার ফায়সালা হবে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ওই মালিকানা নবায়ন হয়। মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছে। যার মানে দাঁড়ায়, রাষ্ট্রের মালিকানাও হারিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের ওপর তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কি না, সেটাও নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনেই কেবল এসব প্রশ্নের মীমাংসা হতে পারে। যেহেতু নির্বাচনের পরিবেশ অনুক‚ল নয়, সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত নয়, যাদের নিশ্চিত করার কথা, সেই সরকার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনও ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে আছে সুতরাং জনগণকেই জেগে উঠতে হবে। ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরাতে তাদের ভ‚মিকা নিতে হবে। বাধা আছে, ভয় আছে, শঙ্কা আছে। এসবই সত্য। কিন্তু তাদের এসবে তোয়াক্কা করলে চলবে না। নির্বাচনের দিন দলে দলে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক, তা অতিক্রম করে তাদের ভোট দিতে হবে। নিজেদের প্রতিনিধি ও পছন্দের সরকার বেছে নেয়ার এ সুযোগ হারালে চলবে না। জনগণ জেগে উঠলে, অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়বদ্ধ হলে কোনো শক্তিই তাদের মোকাবেলায় টিকে থাকতে পারবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। কাজেই, তারা ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে, জনগণের অধিকার ও ক্ষমতার প্রতিষ্ঠাকে সহজতর করে তুলবে, আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। সময় খুব বেশি নেই। যা কিছু করার এর মধ্যেই করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।