Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসুন, ভোট দিন

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রহিত হওয়ার ফলে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই সর্বেসর্বা। আমাদের সংবিধান তাকে সে ক্ষমতা দিয়েছে। যেহেতু দলীয় সরকার এবং সংসদ বহাল লেখেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে আইনগত ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনের মাঠে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা যেন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনের মাঠকে নিজেদের অনুুকুলে নিয়ে নিতে না পারে, সে জন্যই নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্বয়ং যদি তার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সত্তা বিকিয়ে দিয়ে সরকার ও সরকারীদলের আজ্ঞাবহের ভ‚মিকায় অবর্তীণ হয়, তাহলে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আশা করা যায়না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খান মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃতে গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনের পরিবেশ,দখলবাজি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশীবিদেশী সব মহল থেকেই বেশ জোরালো প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ হলেও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল খুবই বিতর্কিত ও অনাকাঙ্খিত। বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনে প্রকাশ্য দখলবাজি, ভোট ডাকাতি, প্রার্থীদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং বের করে দেয়ার অসংখ্য অভিযোগের পরও নির্বাচন কমিশনের দায়সারা ভূমিকা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের সাফাই গাওয়া ইত্যাদি কারণে এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগনের আস্থা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। সেই সাথে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার একটি গণদাবীর প্রেক্ষিতে অনেক প্রতিত‚লতা সত্তে ও মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারার একটি পরিবেশ পাবে বলে আশা করেছিল। তফসিল ঘোষনার পর মাসাধিককাল পেরিয়ে গেছে, গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতার, সরকারী দলের ক্যাডারদের বেপরোয়া আক্রমনের মুখে এখনো বিরোধিদলের অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচনের প্রচারনায় নামতেই পারেনি। নির্বাচনের মাত্র ৫দিন আগে সেনাবাহিনী নামবে বলে ঘোষণা দেয়ায় জনগন আশা করেছিল, সেনাবাহিনী মাঠে নামলে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হবে। ২৬ ডিসেম্বরেও নির্বাচনের মাঠ পুরোপুরি ভারসাম্যহীন, একতরফা, রক্তাক্ত ও সন্ত্রাস কবলিত। এহেন বাস্তবতায় বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে অনভিপ্রেত ও অসৌজন্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন। দেশের প্রায় সর্বত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকরা পুলিশি বাঁধায় অথবা সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের হাতে যখন মার খাচ্ছে অথবা গৃহবন্ধী হয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে তখনো প্রধান নির্বাচন কমিশনার চোখে ঠুলি এঁেট বলছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে, কোথাও কোন সমস্যা নাই।
মঙ্গলবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মেজর(অব:) আখতারুজ্জামানসহ সারাদেশে অন্তত ২০জন ধানের শীষের প্রার্থী সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকারী দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নস্যাৎ করছে। বিএনপি সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রকাশ্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব হুমকি ও বেপরোয়া আক্রমনের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ ও ইসির করণীয় সম্পর্কে মঙ্গলবার ইসির সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বৈঠকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা এখন ওপেন সিক্রেট যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারী দলের লাঠিয়ালের ভূমিকায় রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-সমর্থকরা যখন প্রতিদিনই পুলিশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তখন ইসির কোনো ভ‚মিকাই দেখা যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরও নির্বাচনে ন্যুনতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা দূরাশা মাত্র। নির্বাচন কমিশন, প্রিজাইডিং অফিসার, রির্টানিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন এবং নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন সম্ভব নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিরোধীদল উপযুক্ত দিক-নির্দশনা দিতে অনেকাটই ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সর্বশেষ বলেছে, সেনাবাহিনী মাঠে নামলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তা হয়নি। এমত ক্ষেত্রে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তারাই ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার নির্বাচিত করবে। চলমান বাস্তবতায় হুমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে জনগনকে নির্বাচনের জয়পরাজয়ের নিয়ামক শক্তি হয়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের পরামর্শ : আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসুন, ভোট দিন, আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন