মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ক্রিসমাসের আনন্দে যখন মেতে উঠেছে সারা দেশ, তখন একাকিত্বের বেদনা ফুটে উঠল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটে। নানা সমস্যায় ডুবে থাকা মার্কিন প্রশাসনের জট খুলতে না পেরে হতাশ ট্রাম্পের মঙ্গলবারের টুইট, ‘আমি নিঃসঙ্গ, একাকী বসে আছি হোয়াইট হাউসে।’
ট্রাম্পের এই টুইট নিঃসন্দেহে মার্কিন প্রশাসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের বর্তমান সম্পর্কের মতই অর্থবহ। ২০১৮ নিঃসন্দেহে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে একটা ভুলে যাওয়ার মতো বছর। মার্কিন প্রশাসনের সর্বময় কর্তার পদে আসীন হওয়ার পর এই বছরে এমন একটা দিক নেই, যা ট্রাম্পকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে।
ট্রাম্পের এই হতাশার টুইট সামনে আসার পর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয় হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। কিন্তু সেই উত্তর দেওয়ার মতোও কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে।
ট্রাম্পের একগুঁয়েমির জন্য ক্রিসমাসের আগে থেকেই বন্ধ অধিকাংশ মার্কিন সরকারি দফতর। বেতন না পেয়ে চরম বিপদের মুখে আট লক্ষ মার্কিন কর্মচারী। বেতন দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, হোমল্যান্ড সিকিওরিটি (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা), বিচারবিভাগ ও কৃষি দফতরগুলির বহু কর্মীকে। ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে নাসার মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসের কর্মীদেরও। আক্ষরিক অর্থেই ঝাঁপ বন্ধ মার্কিন প্রশাসনের।
ট্রাম্পের দাবি, মেক্সিকো সীমান্তে ৫০০ কোটি ডলার দিয়ে বানাতে হবে অত্যাধুনিক প্রাচীর। এই পরিমাণ অর্থ খরচে আবার নারাজ বিরোধীরা। সেই ঝামেলার জেরে এখনও সরকারি বাজেট পাস করাতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন। যে কারণে চরম অর্থ সঙ্কটে মার্কিন প্রশাসন। সূত্র: সিএনএন।
যদিও নিজের একগুঁয়েমি থেকে এখনও পর্যন্ত যে এক বিন্দুও নড়েননি ট্রাম্প, তা টের পাওয়া যাচ্ছে তার টুইট থেকেই। মঙ্গলবার আরেকটি টুইটে তার মন্তব্য, ‘ডেমোক্র্যাটরা ভণ্ড! সংবাদ মাধ্যম শুধু গল্প বানাচ্ছে! সেনেটররা বিদেশ নীতি বোঝে না! প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিসও কিছু জানেন না!’
কোথাও কোনও আশার আলো না থাকায় গত তিন দিন ধরে হোয়াইট হাউসে বসে বসে একের পর এক টুইট করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত তিন দিনে এখনও পর্যন্ত ৩৫টি টুইট করেছেন ট্রাম্প। শুধু সোমবারই করেছেন দশটি টুইট। আর সমস্ত টুইটেই ফুটে উঠছে ক্রোধ, হতাশা আর একাকিত্ব। একটি টুইটে তার মন্তব্য, ‘আমি এখনও ডেমোক্র্যাটদের জন্য অপেক্ষা করছি। ওরা এলেই মেক্সিকো সীমান্তের প্রাচীর বানানোর চুক্তি সেরে ফেলব।’
শুধু বাজেট পাশ করাতে না পারাই এক মাত্র ঝামেলা নয়। ট্রাম্পের চারদিকে এখন আক্ষরিক অর্থেই ঝামেলার পাহাড়। সঙ্কট দেখা দিয়েছে মার্কিন শেয়ার বাজারে, ১৯৩১ সালের পর এত খারাপ ডিসেম্বর মাস মার্কিন অর্থনীতিতে আসেনি। যদিও পুরো দায় ফেডারেল রিজার্ভের ওপরেই চাপিয়েছেন তিনি। সবার মত অগ্রাহ্য করে সিরিয়া থেকে সরিয়ে নিয়েছেন সব মার্কিন সেনা। সিরিয়ার পুননির্মাণে সউদী আরব কাজ করবে বলে টুইট করে এই রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কারণ, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নির্মম ভাবে হত্যা করার জন্য সৌদির রাজপুত্রকে তীব্র ভৎর্সনা করেছে মার্কিন সেনেট।
গত এক দশকে যে ক’টি সংস্থা চালিয়েছেন ট্রাম্প, সব কটির বিরুদ্ধেই এখন চলছে তদন্ত। তদন্ত চলছে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা ঘিরে অনিয়ম নিয়েও। তদন্ত চলছে ২০১৬ সালে তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে প্রচার নিয়েও। তার আমলে সবকটি দফতরের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তের প্রস্তাব বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা পাশ করিয়ে নিয়েছে মার্কিন সংসদে। তাই ২০১৯ তাঁর কাছে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। সিরিয়া থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন তার নিজের রিপাবলিকান দলের সহকর্মীরাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।