পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবাদিকদের জন্য একটি নীতিমালা জারি করেছে। নির্বাচনের দিন সাংবাদিকরা কী করতে পারবেন, আর কী করতে পারবেন না, নীতিমালায় তার একটি নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নীতিমালাটি সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গোলযোগ হলে সাংবাদিকরা যাতে তা প্রকাশ ও প্রচার করতে না পারেন কিংবা এসবের কোনো সাক্ষ্য না থাকে, সে উদ্দেশ্যেই ইসি এই নীতিমালা করেছে বলে পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকদের ধারণা। তাদের মতে, নীতিমালাটি স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নীতিমালায় এই প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ বা বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের মোটর সাইকেল ব্যবহারের জন্য কোনো স্টিকার দেয়া হবে না। এর অর্থ দাঁড়ায়, সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় এই যানটি ব্যবহার করতে পারবেন না। ইতোপূর্বে কোনো নির্বাচনে সাংবাদিকদের মোটর সাইকেল ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ ছিলনা। একথা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা থাকার কথা নয় যে, নির্বাচনের দিনে দ্রুত সংবাদ সংগ্রহের জন্য মোটর সাইকেলের মতো উপযোগী আর কোনো যান নেই। সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরা এখনো মোটর সাইকেলই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন। দূর ও দুর্গম এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য মোটর সাইকেলের বিকল্প নেই। নির্বাচনের সময় স্টিকারযুক্ত মোটর সাইকেলের অব্যবহারের কোনো অভিযোগ না থাকলেও এবার মোটর সাইকেল ব্যবহারে বিধিনিষেধ কেন আরোপ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এবং এটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই যে করা হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিধিনিষেধের ফলে সাংবাদিকরা দূরবর্তী কোনো ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, জালভোট প্রদান, ভোট প্রদানে বাধাদান বা গোলযোগের খবর সংগ্রহে সন্দেহাতীতভাবেই ব্যর্থ হবেন। ইসি কি এই ব্যর্থতাই নিশ্চিত করতে চায়?
এর আগে কোনো নির্বাচনেই ভোটকক্ষ ও ভোটকেন্দ্রের ছবি তুলতে সাংবাদিকদের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয়নি। এবার নীতিমালায় ছবি তোলার ব্যাপারে পূর্বাহ্নেই প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কেনো এই বাধ্যবাধকতা সে প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। এই বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে বস্তুত ভোটকক্ষকে একটা ‘নিষিদ্ধ এলাকায়’ পরিণত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভোটের ‘গোপন কক্ষে’র ছবি তোলা বা ধারণ করা যাবে না। কোনো অনিয়ম বা ঘটনা ঘটার সময়ই সাংবাদিকরা ছবি তোলেন বা ধারণ করেন। কেউ বলতে পারেনা, অনিয়ম বা ঘটনাটি কখন ঘটবে। সে ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদন নেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। আবার অনিয়ম বা ঘটনা ঘটার সময় অনুমোদন নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। তাছাড়া ওই সময় প্রিজাইডিং অফিসার যে দ্রতই অনুমোদন দেবেন তারই বা নিশ্চয়তা কি? বলা হয়েছে, ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে। এই ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বলতে ইসি কি বুঝিয়েছে, তা বোধগম্য নয়। কে এই নিরাপদ দূরত্ব নির্ধারণ করবেন, সে প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। নীতিমালা বলা হয়েছে, একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা একসঙ্গে একই ভোট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। অতীতে একই ভোটকক্ষে একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশ ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত করেছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। তারপরও এই নিষেধাজ্ঞা কেন? এটা না বুঝার কিছু নেই, নির্বাচনের দিন ভোটপর্ব অনিয়ম ও নিরুপদ্রবমুক্ত অর্থাৎ মসৃন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু সে কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত করা কিংবা সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশন করার পেশাগত দায়িত্ব পালনে অন্তরায় সৃষ্টি করার কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ সমর্থণযোগ্য হতে পারে না।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচন কমিশনও সেটা মনে করছে না। সে কারণেই সবকিছু আড়াল করার একটা চেষ্টা তার মধ্যে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র দিতে নির্বাচন কমিশনের দীর্ঘসূত্রতার কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। এ নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষন সংস্থা এনফ্রেল (দ্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন) এক বিবৃতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন কমিশন পরিচয়পত্র দিতে বিলম্ব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা দিতে গড়িমসি করায় সংস্থাটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন বাতিল করেছে। সংস্থার পক্ষে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষকদের কাজ করতে বাধা দেয়ায় স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বলা বাহুল্য, পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নির্বাচনকে অনিয়মক্ত ও স্বচ্ছ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। অন্যদিকে সাংবাদিকদের সক্রিয়তাও অনুরূপ সহায়তা দেয়। নির্বাচন কমিশন কমিশনকে বুঝতে হবে, কখনই সাংবাদিকরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং তাদের তথ্য-সংবাদ নির্বাচন কমিশনকেই দায়িত্বপালনে সহায়তা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এও মনে রাখতে হবে, এখন আর কোনো কিছু আড়াল করে রাখার উপায় নেই। সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করলেই কোনো কিছু অগোচরে থেকে যাবে, সেটা মনে করা যাবে না। কোনো না কোনো মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়ে পড়বেই। পরীক্ষিত ও বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমে প্রকৃত তথ্য ও খবর উঠে না এলে গুজবের জন্ম হয়, সেটাও নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, নির্বাচন কমিশন তার নীতিমালায় যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করবে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের পথ উন্মুক্ত করে দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।