পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একাদশ জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তত বাড়ছে। বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় হামলা, সংঘর্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মামলা, গ্রেফতার এমনকি বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর প্রার্থীতা স্থগিতসহ কয়েক প্রার্থীর কারাগারে থাকার বিষয়গুলো জনমনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনী মাঠের সর্বিক পরিস্থিতি যখন এমন, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ক্রমাগত বলে চলেছেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে’, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে’ এবং সর্বশেষ বলেছেন, ‘দেশে নির্বাচনের সুবাতাস বইছে’। যদিও গত সপ্তাহে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, নির্বাচনে প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু নেই। জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তার কথা সত্য নয়। এর জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আমার কথা অসত্য, একথা বলে সিইসি একজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বে আঘাত হেনেছেন। দুইজনের এই পারস্পরবিরোধী বক্তব্য ও বিতর্ক নির্বাচন কমিশনের ভেতরকার অবস্থা উন্মোচিত করেছে। ওদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রগুলোতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন বিষেশজ্ঞরাও এ নিয়ে প্রতিদিন শঙ্কা প্রকাশ করে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখছেন। নির্বাচনের সার্বিক এই পরিস্থিতিকে অনেকটা দেখে না দেখার মতো করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে বারবার বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, তার এ কথার সাথে অনেকটা সুর মিলিয়ে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ আছে, সেরকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। তার এ বক্তব্যও নির্বাচনী যে পরিস্থিতি তার সাথে সাংঘর্ষিক বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, আইজিপি একজন সজ্জন ও ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। তার উচিত বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বক্তব্য দেয়া। তা না হলে, তার এ বক্তব্যকে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের সাথে মানুষ তুলনা করবে।
বলা বাহুল্য, নির্বাচনের যে পরিবেশ এখন বিরাজমান তা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। একটি শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব দলের জন্য যে সমান সুযোগ থাকা প্রয়োজন তা এখনও অনুপস্থিত। নির্বাচনকালীন এ সময়ে প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা ও হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অধিকমাত্রায় মামলা ও গ্রেফতার নির্বাচনের পরিবেশকে সংঘাতপূর্ণ ও ভীতিকর করে তুলছে। অনেক জায়গায় বিরোধী দলের প্রার্থীদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে যে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো দূরে থাক ভয় ও আতঙ্কে মাঠেই নামতে পারছে না। প্রায় প্রতিদিনই তাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে জামিন নিতে আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। যারা গ্রেফতার হচ্ছে তাদের অনেককে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ থেকে প্রার্থীও বাদ যাচ্ছে না। আবার আদালতের আদেশে অনেকের প্রার্থীতাও আটকে যাচ্ছে। এক হিসেবে আদালতের আদেশে বিএনপির ১৭ প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ২ প্রার্থীর নির্বাচন করা আটকে গেছে। নির্বাচনের সার্বিক এ পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয় বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সাবেক এক নির্বাচন কমিশনার তার এক মন্তব্য প্রতিবেদনে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে লিখেছেন, বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা আসছে। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের বাধার অভিযোগ আসছে। এবারের মতো প্রার্থীদের ওপর এত হামলা আগে কখনো হয়নি। সারাদেশে বিরোধী প্রার্থীর সমর্থকদের আটক ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রার্থীদের ওপর এসব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এটি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এমন চলতে থাকলে চূড়ান্তভাবে ক্ষতির শিকার হবেন ভোটাররা। তারা ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়বে। শুধু নির্বাচনী পর্যবেক্ষকই নন, দেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এএফপি তার এক প্রতিবেদনে বলেছে, হুমকি বাড়ায় বিরোধীরা আত্মগোপনে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতির কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বিদেশিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বাংলাদেশে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তার আগে নির্বাচন কমিশনের সচিব দেশি পর্যবেক্ষকদের ‘মূতির মতো দাঁড়িয়ে’ ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। ভোটকেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ার কথাও বলেছে নির্বাচন কমিশন। দেখা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচন অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত করার প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে যত ধরনের পদক্ষেপ, তার সবই নেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের এ পরিবেশ কি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা বহন করে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রতিনিয়ত নির্বাচনের যে সুষ্ঠু পরিবেশের কথা বলছেন, বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল নেই। একজন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এখন এ ধারণা বদ্ধমূল, আগামী নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে হতে যাচ্ছে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তার কথাবার্তা ও আচার-আচরণে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব প্রতীয়মাণ হচ্ছে। একইভাবে আইজিপিও বক্তব্য দিয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্বাচনের চলমান পরিবেশে পুলিশের ভূমিকা যে সমালোচিত হচ্ছে, তা তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, তার যে ভাবমর্যাদা ও সুনাম, এর সাথে তার বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার এ বক্তব্যে অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা আরও প্রশ্রয় পাবে, যা নির্বাচনের পরিবেশকে আরো অসমতল করে তুলতে পারে। তাই আশা করব, আইজিপি তার বক্তব্য সংশোধন করে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে পুলিশ বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে নির্দেশ দেন। বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মনোযোগী হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।