Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে

মো. এমদাদ উল্যাহ | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:১১ এএম

দশ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব স¤প্রসারণ ঘটেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞরা তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক এই উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কাজ করছে- ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি পেশাজীবীর সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা, আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার এবং জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ। এগুলো হলো, অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ই-গর্ভমেন্ট এবং তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের দারিদ্র্র্য, প্রশাসনিক জটিলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মন্থর গতি প্রভৃতি দূরীকরণের জন্য আইসিটি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। আইসিটি স¤প্রসারণ ও ব্যবহার জনসাধারণের নাগালের মধ্যে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া উন্নত দেশসমূহ ইতোমধ্যে আইসিটির সফল ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সকল ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, অধিকতর উন্নত জনসেবা প্রদানের জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশে সকল পর্যায়ের সরকারি দপ্তরে আইসিটি ভিত্তিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় মোট ১২৯৫.৯২ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল জুলাই ২০১৩ হতে ডিসেম্বর ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ২০১৩ সালের জুলাই হতে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সকল জেলা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কার্যালয়ে আইসিটি নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ, আইসিটি নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, জনপ্রশাসনে আইসিটির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সম্পদের অপচয় রোধ এবং জনসেবার মান উন্নয়ন, সমন্বিত ন্যাশনাল ই-সার্ভিস সিস্টেম করে সরকারের কার্যক্রম অটোমেশন ত্বরান্বিত করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে বিকেআইসিটি থেকে ৩,২৭৬ জনকে, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীন সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় দেশে-বিদেশে ৪,৯৮১ জনকে, ‘বাড়ি বসে বড় লোক’ কর্মসূচির অধীনে ১৪ হাজার ৭৫০ জনকে বেসিক আইসিটি, স্কিল এনহ্যান্সমেন্ট ও ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা: ১. মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে দিয়ে উন্নত জীবন ধারার সূচনা করবে। ২. হতাশাগ্রস্থ শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত মানুষের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। ৩. প্রশাসনিক অবকাঠামো, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে গতিশীল করবে। ৪. দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। ৫. মানুষের কাছে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। ৬. তথ্য জানা এবং তথ্য পাওয়ার অবাধ সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। ৭. নতুন নতুন কর্মসংস্থান ও সামাজিক ব্যবসা ক্ষেত্র তৈরি হবে।
বাস্তবায়নে সমস্যা: অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার অভাব, ইংরেজিতে অজ্ঞতা, শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব, কুসংস্কারসহ নানা রকম সামাজিক সমস্যা।
সমস্যা সমাধানের উপায় : ১. স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। ২. ইংরেজি শিক্ষায় দক্ষতা বাড়াতে হবে। ৩. প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপকার উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। ৪. দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ৫. শিক্ষিত মহিলাদের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে হবে। যাতে করে তারা সন্তানদের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষদের যেসব চাকরি জনপ্রিয়: দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাসহ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি জানান দক্ষদের জন্য নিত্য নতুন পদ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে যেসব পদে চাকরি হচ্ছে- আইটি ম্যানেজার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, ডাটা এনালাইজার, কল সেন্টার এজেন্ট, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার, মাল্টিমিডিয়া অথার, এনিমেটর, হার্ডওয়ার টেকনেশিয়ান, মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়েব ডেভেলপার, প্রোগ্রামার, নেটওয়ার্ক এডমিন।
বাস্তবায়িত প্রকল্প সমূহ: ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়তায় রূপ দিতে ও সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্যই ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে ৪-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের বাস্তবায়িত বেশ কয়েকটি প্রকল্প হলো-
সচিবালয় এবং বিসিসিতে নিরবচ্ছিন্ন ওয়াই-ফাই স্থাপন: তথ্য আদান-প্রদান জ্ঞান অর্জন, বৈদেশিক যোগাযোগ, জনসেবা প্রদান এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রধান উপকরণ। বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনেক আগে থেকেই নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের প্রয়োজন ছিল। ইনফো-সরকার প্রকল্প সচিবালয়ে ৫০৬টি এটি, ৬৫টি পিওই সুইচ, ৭টি এগ্রিগেশন সুইচ, ২টি অ্যাক্সেস কন্ট্রোলার এবং সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি স্থাপন করেছে।
৮০০ ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম স্থাপন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের সকল উপজেলার সাথে জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সরাসরি কথোপকথনের জন্য এবং একসাথে একাধিক উপজেলায় বার্তা অথবা তথ্য প্রেরণ, সভা অথবা অনুষ্ঠান সম্পন্নের উদ্দেশ্যে ইনফো-সরকার প্রকল্প থেকে স্থাপিত ইন্টার্নেট কানেক্টিভিটির উপর ভিত্তি করে ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। ৮০০টি নির্ধারিত স্থানে আইটি নেটওয়ার্কের উপর ৭৬৮ কেবিপিএস থেকে ২ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথসহ ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। এই ৮০০টি সিস্টেমকে মূলত সকল মন্ত্রণালয়, ৪৮৭টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, দেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পিটিআই, টিটিসিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অফিসসমূহে স্থাপন করা হয়েছে।
২৫ হাজার জন কর্মকর্তার মাঝে ট্যাবলেট পিসি বিতরণ: ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি কর্মকর্তাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। সরকারি সেবাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিয়ে, দুর্নীতিমুক্ত একটি জবাবদিহিতামূলক স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামোই বললে দিতে পারে দেশের ভাগ্য। এই প্রকল্পে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কানেক্টিভিটি প্রাপ্ত ১৮ হাজার ১৩০টি অফিসে ব্যবহারের জন্য একটি করে এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পর্যন্ত পদের বিপরীতে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তার পদের বিপরীতে, বিভিন্ন অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদের বিপরীতে ট্যাবলেট পিসি বিতরণ করা হয়েছে।
ই-এগ্রিকালচার কার্যক্রম স¤প্রসারণ: তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য সেবা বিতরণের উদ্দেশ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে দেশব্যাপী গ্রাম পর্যায়ে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক ২৫৪টি কৃষি তথ্য ও যাগাযোগ কেন্দ্র (এইসিসি) ইতোপূর্বে স্থাপন করা হয়েছে। ইনফো-সরকার প্রকল্প থেকে আরও ২৫৪টি এআইসিসি কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে দেশের ৪৮৭টি উপজেলায় এর কার্যক্রমকে বিস্তৃৃত করে ই-কৃষির স¤প্রসারণের হাত ধরে কৃষি উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তনে ইনফো-সরকার প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যমে আগামীদিনে সারা বিশ্বে যে ২ মিলিয়ন প্রোগ্রামারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। এছাড়া সাইবার হয়রানি রোধে একটি সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় একটি হেলপলাইনও চালু করা হয়েছে। ০১৭৬৬৬৭৮৮৮৮ নাম্বারে ফোন করে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক সাইবার হয়রানি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সেবা ও সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারছে।
লেখক : সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তথ্য ও যোগাযোগ


আরও
আরও পড়ুন