নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের টেস্ট অভিষেকটা বাংলাদেশের আশানুরূপ হয়নি। তবে প্রকৃতির নয়নাভিরাম মায়ার জালে ঘেরা ভেন্যুটির ওয়ানডের অভিষেক হলো স্বপ্নের মত এক জয় দিয়ে। ‘জয়’ না বলে ‘প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে’ বললেও হয়ত ভুল হবে না। ১১.৩ ওভার হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় তো সেই কথাই বলে। এই জয়ের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজও বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।
বিশ্বকাপের আগে এমন প্রভাব দেখানো জয় বাংলাদেশকে নিয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। কি ব্যাটে, কি বলে- দুটি জয়েই কোন পর্বে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারেনি উইন্ডিজ। প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি। কালও রেখেছেন অবদান। তবে বল হাতে কাল বিষাক্ত কেউটের মত ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার সঙ্গে যোগ দেন বাকিরাও। পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করেও তাই দুই’শর আগেই আটকে যায় উইন্ডিজ।
পরে চায়ের দেশে ওঠে তামিম-সৌম্য ঝড়। ১৯৯ রানের লক্ষ্যে ২০২ রানের পথে ১০১ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থেকে যান তামিম। সৌম্য ঝড় থামে ৮১ বলে ৫টি করে ছক্কা-চারে ৮০ রান করার পর। তাড়াহুড়ো না করলে হয়ত তামিমের সঙ্গে মুশফিক নয়, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতেন সৌম্যই। তামিমের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে কিমো পলের বলে যখন সৌম্য বোল্ড হয়ে ফেরেন জয় তখন ২৩ রান দূরে। উদ্বোধনী জুটিতে এদিন আসে ৪৫ রান। ৩৩ বলে ২৩ রান করে পলের বলে মিড অনে পাওয়েলকে ক্যাচ দেন লিটন।
এর আগে ছিল টাইগার বোলিং লাইন-আপের সামনে হাসফাস খেতে দেখা যায় ক্যারিবীয়দের। বুক চিতিয়ে লড়তে পারেন কেবল শেই হোপ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তার অপরাজিত সেঞ্চুরির কাছেই হার মেনেছিল বাংলাদেশ। কালও করলেন অপরাজিত শতক। তাদের ইনিংসে পরের সর্বোচ্চ ১৯, মার্লন স্যামুয়েলসের। টপ অর্ডারে যখনই হোপ কোন সতীর্থকে নিয়ে জুটি গড়তে গেছেন তখনই আঘাত হেনেছেন মিরাজ। এক’শ রানের আগেই তারা হারায় ৫ উইকেট। যার মধ্যে স্যামুয়েলসের উইকেটটি নেন সাইফউদ্দিন, বোল্ড করে। বাকি চারটিই মিরাজের শিকার। সব মিলে ১০ ওভারে এক মেডেনসহ ২৯ রানের খরচায় নিয়েছেন উইকেট চারটি নেন মিরাজ। যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও। গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। এতদিন ওটাই ছিল ওয়ানডেতে মিরাজের সেরা বোলিং।
মিরাজের বোলিং কোটা শেষ হওয়ার পর কার্যকরী ছিলেন সাকিব ও মাশরাফি। দুজনেই তুলে নেন দুটি করে উইকেট। মুস্তাফিজ উইকেট না পেলেও করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করেও তাই উইন্ডিজ করতে পারে ৯ উইকেটে ১৯৮ রান। সাকিবকে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা হোপ অপরাজিত থাকেন ১৩১ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ১০৮ রান করে।
ম্যাচ ও সিরিজসেরা বেছে নিতে কোন কষ্ট হয়নি নির্বাচকদের। ব্যাট হাতে হোপ দারুণ নৈপূণ্য দেখালেও ম্যাচজয়ী খেলাটা তো খেলেছেন মিরাজই। ম্যাচসেরাও তাই এই বোলিং অলরাউন্ডার। তবে তিন ম্যাচে দুই অপরাজিত শতকে ২২২ রান করা হোপই হয়েছেন সিরিজ সেরা।
ম্যাজ জয়ের কারণ হিসেবে দলের বোলার ও ব্যাটসম্যানদের তো কৃতিত্ব দিয়েছেনই, টস ভাগ্যকেও বড় করে দেখছেন মাশরাফি। টার্নিং উইকেটের কথা ভেবে বল বেছে নেন টাইগার দলপতি।
বিশ্বকাপের আগে এটিই ঘরের মাঠে বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে। দেশের মাটিতে মাশরাফিরও সম্ভব্য শেষ ওয়ানডেও এটি। ইংল্যান্ডে বিশ্বজয়ের মিশনে নামার আগেই এই জয় তাই টাইগার দলকে বাড়তি প্রেরণা দেবে। তবে তার আগে এখন সাকিবদের মাথায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সফরকারীদের বিপক্ষে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই সংস্করণে থাকবেন না মাশরাফি। তবে ওয়ানডে সিরিজ জয় দলের জন্য টি-টোয়েন্টিতে প্রেরণাদায়ী হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ওয়ানডে দলপতি, ‘আমি মনি করি টি-২০তেও আমরা ভালো করব।’ তবে সাকিব-তামিমদের এটাও মনে করে দিয়েছেন ম্যাশ, ‘এটা ভুলে গেলে চলবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ হলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং টি-২০তে তারা সবসময় ভালো দল।’
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ৩য় ওয়ানডে
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট
টস : বাংলাদেশ (বোলিং)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস রান বল ৪ ৬
হেমরাজ ক মিঠুন ব মিরাজ ৯ ১৭ ২ ০
হোপ অপরাজিত ১০৮ ১৩১ ৯ ১
ব্রাভো বোল্ড মিরাজ ১০ ২৬ ১ ০
স্যামুয়েলস বোল্ড সাইফউদ্দিন ১৯ ৩২ ২ ০
হেটমায়ার এলবি ব মিরাজ ০ ৬ ০ ০
পাওয়েল ক মুশফিক ব মিরাজ ১ ৯ ০ ০
চেস ক সৌম্য ব সাকিব ৮ ২০ ০ ০
অ্যালেন ক মিঠুন ব সাকিব ৬ ১৭ ০ ১
পল বোল্ড মাশরাফি ১২ ২২ ০ ০
রোচ এলবি ব মাশরাফি ৩ ৮ ০ ০
বিশু অপরাজিত ৬ ১২ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ৪, ও ৬, পেনাল্টি ৫) ১৬
মোট (৯ উইকেট, ৫০ ওভার) ১৯৮
উইকেট পতন : ১-১৫ (হেমরাজ), ২-৫৭ (ব্রাভো), ৩-৯৬ (স্যামুয়েলস), ৪-৯৭ (হেটমায়ার), ৫-৯৯ (পাওয়েল), ৬-১৩৩ (চেস), ৭-১৪৩ (অ্যালেন), ৮-১৭১ (পল), ৯-১৭৭ (রোচ)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ১০-১-৩৩-০, মিরাজ ১০-১-২৯-৪, সাকিব ৯-০-৪০-২, মাশরাফি ৯-১-৩৪-২, সাইফউদ্দিন ৯-০-৩৮-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৪-০।
বাংলাদেশ (লক্ষ্য ১৯৯) রান বল ৪ ৬
তামিম অপরাজিত ৮১ ১০৪ ৯ ০
লিটন ক পাওয়েল ব পল ২৩ ৩৩ ৫ ০
সৌম্য বোল্ড পল ৮০ ৮১ ৫ ৫
মুশরফিক অপরাজিত ১৬ ১৪ ২ ১
অতিরিক্ত (নো ১, ও ১) ২
মোট (২ উইকেট, ৩৮.৩ ওভার) ২০১
উইকেট পতন : ১-৪৫ (লিটন), ২-১৭৬ (সৌম্য)।
বোলিং : রোচ ৩-০-১৬-০, চেস ৮-০-৩২-০, পল ৭-০-৩৮-২, স্যামুয়েলস ৪-০-২৫-০, বিশু ৯-০-৪৮-০, অ্যালেন ৪-০-২২-০, পাওয়েল ৩.৩-০-২১-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মেহেদী মিরাজ (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : ৩ ম্যাচে বাংলাদেশ ২-১এ জয়ী।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : শেই হোপ (উইন্ডিজ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।