Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তি চেয়ে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

পরীক্ষা অনুষ্ঠিত : গভর্নিং বডির পদত্যাগে অভিভাবকদের আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ভিকারুননিসার ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ‘প্ররোচণার’ অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে এবার আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বেইলি রোডের স্কুলের প্রধান শাখার মূল ফটকের সামনে ‘ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী এ আন্দোলন করে। তারা শিক্ষক হাসনা হেনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। এদিকে, টানা তিন দিনের আন্দোলন শেষে গতকাল শুক্রবার যথারীতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাসে পরীক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি ছিল। অন্যদিকে, গতকালও গভনিং বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছে অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীরা ব্যানারে ‘নিরাপরাধ হাসনা হেনা আপার নিঃশর্ত মুক্তিসহ সসম্মানে ফিরিয়ে আনার দাবি’র বিষয়টি প্রকাশ্যে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ‘দোষীদের বিচার করতে গিয়ে নির্দোষের শাস্তি কেন?’, ‘সুষ্ঠু বিচার চায়’, ‘অরিত্রী আমাদের বোন-শিক্ষক হাসনা হেনা আমাদের মা’, ‘নির্দোষের নিঃশর্ত মুক্তি চাই’সহ বিভিন্ন ধরণের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রিয় শিক্ষকের মুক্তির দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, হাসনা হেনা ম্যাডাম অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত নয়। তাকে অন্যায়ভাবে দায়ী করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কেউ তার নাম বলেননি। তিনি পরিস্থিতির শিকার। গত বৃহস্পতিবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা।
ভিকারুননিসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া মালিহা তাবাসসুম বলেন, হাসনা হেনা ম্যামের ক্লাস যারা করেছে তারা কখনোই ম্যামকে নিষ্ঠুর বলতে পারবে না। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই বুঝিয়ে দিতেন। প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মালিহা।
প্রাক্তন আরেক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে খুব কম শিক্ষকই আছেন যাদের ক্লাসে আমরা পুরোপুরি মনোযোগী হতে পারতাম। কেবলমাত্র ম্যামের ক্লাসেই ছাত্রীরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে থাকতো। প্রাক্তনদের ভাষ্য, ম্যামের বাংলা ক্লাস অসাধারণ। যারা ওনার ক্লাস পেয়েছে তারা আজীবন তাকে মনে রাখতে বাধ্য।
ভিকারুননিসায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
টানা তিনদিনের আন্দোলন শেষে গতকাল শুক্রবার থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৫ ডিসেম্বরের স্থগিত হওয়া ৯ম ও ৭ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে যথারীতি পরীক্ষা দিলেও গেটের বাইরে গভর্নিং বডির সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, বর্তমান বডির কাছে তাদের সন্তানরা নিরাপদ নয়।
গতকাল ৭ম ও ৯ম শ্রেণির পরীক্ষা ছিল। বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ভেতরে প্রবেশ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৩টায়।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মুসতারি সুলতানা বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর স্থগিত হওয়া বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯ম শ্রেণির বায়োলজি এবং ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি হয়েছে। একইভাবে বসুন্ধরা, ধানমন্ডি ও আজিমপুর শাখায় ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়।
এই শিক্ষক আরও বলেন, আজ শনিবার একই সময়ে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯ম শ্রেণির উচ্চতর গণিত ও ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হবে। অন্যান্য শাখাগুলোতেও একই সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া গত ৬ ডিসেম্বরের স্থগিত হওয়া পরীক্ষা ১১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের সকল শাখার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে।
এদিকে, নির্ধারিত সময়ে সন্তনরা যথারীতি পরীক্ষায় অংশ নিলেও বিদ্যমান গভর্নিং বডির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকরা। অভিভাবকরা বলেন, অযোগ্য গভর্নিং বডির সদস্যদের থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের হাতে আমাদের সন্তানরা নিরাপদ নয়। কয়েকতজন অভিভাবক বলেন, বর্তমান গভর্নিং কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তারা অতিদ্রুত বর্তমান কমিটির সকল সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ বিষয়ে, গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, বডির চেয়ারম্যান ছাড়া সকল সদস্যই নির্বাচিত। তাদের পদত্যগের প্রস্তাবটি পরবর্তী সভায় উঠানো হবে। সেই প্রস্তাবে কেউ রাজি থাকলে পদত্যাগ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, গভর্নিং বডি পদত্যাগ করলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এমনটি নিশ্চিত নয়। বরং সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিটি পরবর্তী সভায় তোলা উচিত।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বাবাকে অপমান করার অভিযোগে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে আসামী করে অরিত্রীর বাবা পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। পরে উত্তরা থেকে শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ