Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টঙ্গী মাঠে হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

টঙ্গী ইজতেমা মাঠে হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিম নাসিমগংদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বাদজুমা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু সংখ্যক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন স্থানে মুসল্লিরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে। কামরাঙ্গীরচরে খেলাফত আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ। রামপুরায় সা’দ বিরোধীরা মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদের নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা শোয়াইব ইবরাহিম, মাওলানা হারুনুর রশিদ, মাওলানা কাবির হোসাইনসহ প্রমুখ।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সমাবেশে বক্তাগণ, হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফ, নাসিম গংদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ওয়াসিফ, নাসিম গংদের কাকরাইলের শুরা থেকে বহিষ্কার ও টঙ্গী ময়দান কাকরাইলের ওয়াসিফ বিরোধী শুরার হাতে হস্তান্তরের দাবী করেন। বক্তারা আগামী ইজতেমা প্রথম ধাপ জানুয়ারি মাসের ১৮ ১৯, ২০ তারিখ এবং দ্বিতীয় ধাপ ২৫, ২৬, ২৭ তারিখে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফ, নাসিম ও হামলার সাথে সরাসরি জড়িত কেউ এখনো গ্রেফতার হয়নি। প্রশাসনের এই নিরব ও রহস্যজনক ভ‚মিকায় দেশের আলেম সমাজ ও তাওহীদি জনতা হতবাক। তারা বলেন, এনিয়ে পরবর্তীতে যদি কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব সরকার এবং প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, নগরীর নিউ মার্কেটস্থ বায়তুন নূর চত্বরে প্রতিবাদ সভা করে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা। খÐ খÐ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে খুলনা নগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসা থেকে মুসল্লিরা চত্বরে এসে জড়ো হয়। এ সময় সমাবেশ থেকে বাংলাদেশে সাদ ও ওয়াসিফপন্থীদের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানানো হয়। কওমী উলামা পরিষদ খুলনার সভাপতি ও দারুল উলুম মাদরাসা মোহতামিম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুশতাক আহমদ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘টঙ্গীতে সাদ ও ওয়াসিফপন্থীরা তাবলীগ জামায়াতের কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রæত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। হামলাকারীদের সকল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, মুফতি নাসির উদ্দিন কাশেমী, খাদেমুল ইসলাম মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা শেখ মোঃ. আব্দুল্লাহ, মুফতি গোলামুর রহমান, মুফতি আবুল হাসান, মুফতি আজিজুর রহমান, মাওলানা মুশহুদ হোসাইন, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া প্রমুখ। প্রতিবাদ সভা শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদী শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বিক্ষোভকারীরা হামলাকারী নরসিংদী সান্দপন্থী আমির মীর মহসিনসহ সকল হামলাকারীদেরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ¯েøাগান দিয়েছে। মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন নরসিংদী জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা আলী আহমদ হোসাইনী এবং মহাসচিব মাওলানা ইসমাঈল নুরপুরী। পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী নরসিংদী শহর শহর এলাকার বিভিন্ন মসজিদের হাজার হাজার মুসল্লী নরসিংদী পৌরসভা চত্বরে সমবেত হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভ এ সংগঠিত হয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে নরসিংদী রেল স্টেশন চত্বরে এসে সমবেত হয়। এখানে বক্তৃতা করেন মাওলানা আব্দুল বারী, মাওলানা রবিউল্লাহ, মাওলানা অলিউল্লাহ, মাওলানা সলিমুল্লাহ, মাওলানা ইলিয়াস শেরপুরী ও মাওলানা মুজিবুর রহমান প্রমুখ। বক্তাগণ অবিলম্বে হামলাকারীদেরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, একটি ইজতেমা মাঠে নিরীহ ও মুসল্লিদের ওপর হামলা কোন ক্রমেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এর পেছনে আরো কোন ইসলামবিরোধী শক্তি জড়িত রয়েছে বলে ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করে। কোন মুসলমান জেনে শুনে এভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর হামলা করতে পারে না। হামলাকারীদের হাত থেকে বৃদ্ধ যুবক এবং শিশু কেউই রক্ষা পায়নি। মাদরাসার শিশু ছাত্রদেরকে অমানবিক ভাবে হয়েছে। সাধারণ অপরাধীরাও এ ধরণের হামলা করতে পারে না। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেত্রকোনার সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা ও কওমী মাদরাসা ছাত্র শিক্ষকদের উদ্যোগে বাদ জুমা জামিয়া মিফতাহুল উলূম মাদরাসা প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে জেলা শহরের বারহাট্টা রোড, তেরী বাজার, ছোট বাজার, মোক্তার পাড়া হয়ে নেত্রকোনা সদর উপজেলা পরিষদ মসজিদের মাঠে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে সাদপন্থী ওয়াসিফ, নাসিম, আশরাফ গংদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জামিয়া মিফতাহুল উলূমের মুহ্তামিম মাওলানা আবুল কাসেম, মুফতী তাহের কাসেমী, মাওলানা আব্দুল বারী, মাওলানা নাজিম উদ্দিন, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মুফতী গোলাম রব্বানী, গাজী আব্দুর রহিম প্রমূখ।
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, টঙ্গীর কলেজ গেটে জোবায়ের পন্থীদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, মাওলানা সা’দ এবং তার অনুসারীদের ইজতেমা ময়দানে এবং বাংলাদেশের মসজিদ গুলোতে ঢুকতে দেয়া হবে না। সা’দ ও তার অনুসারীরা সন্ত্রাসী। এ দেশে তাদের ঠাই নেই। সমাবেশ চলাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী শত শত যানবাহন দু’দিকে আটকা পড়ে। মহাসড়কের উপর সমাবেশ চলাকালে প্রায় সোয়া এক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পূর্ব ঘোষিত জোবায়েরপন্থী স্থানীয় আলেম মুফতি মাওলানা মাসুদুল করিমের নেতৃত্বে বাদ জুম্মা অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সর্ব মাওলানা মুফতি মাসুদুল করিম, ইউনুস সাঈদী, জাকির হোসেন,আবুবকর কাসেমী, আনোয়ার হোসেন ফরিদি, জাহাঙ্গীর হোসেন কাসেমী, মোসাদ্দেকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন, মিজানুর রহমান, কেরামত আলী, মুফতি ইয়াকুব আলী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, টঙ্গীর পশ্চিম থানায় হামলাকারী সা’দ পন্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত দোষীদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে বিচারের দাবী জানান তারা। সা’দ পন্থী সন্ত্রাসী ওয়াসিকুল-নাসিমদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে সা’দ অনুসারীদের কোন জায়গা নেই। আলেম ওলেমাদের নির্দেশেই বিশ^ ইজতেমা পরিচালিত হবে। বাংলাদেশকে আলেম শূন্য করতে মাওলানা সা’দ ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। তার এই হীন প্রচেষ্টা নৎসাত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে কোন সা’দ বাহিনী থাকবে না। আলেম ওলামাদের নেতৃত্বেই থাকবে তাবলীগ জামাতের বিশ^ ইজতেমা।
তারা বলেন, শাপলা চত্ত¡র এবং টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আলেম ওলেমারা রক্ত দিয়েছে। দাবি আদায়ে রাজপথে আরো রক্ত দেয়া হবে। গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির ও সাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মুফতী মাসুদুল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি আরো বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, এই ষড়যন্ত্রেও হোতাদের প্রতিহত করতে হবে। এ দেশের কোন মসজিদে তাদের ঢুকতে দেয়া হবে না। সাদ পন্থীরা তাবলীগের নামে ইসলাম বিরোধী ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে দ্বীনের ক্ষতি করছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিক্ষোভ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ