পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর ভিকারুনন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবীতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। গতকাল সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্কুল পরিদর্শনে গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে ঘিরে অধ্যক্ষদের অপসারণসহ দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষিকা জিন্নাত আরাকে সাময়িক অব্যহতিসহ ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর আরেকটি তদন্ত কমিটি করে।
এদিকে, অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে মন্তব্য করাসহ ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কাউন্সিলিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চ। অরিত্রিকে নিয়ে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আদালতের নজরে আনলে আদালত এ নির্দেশ দেন। পরীক্ষায় মোবাইল ব্যবহার করে নকল করার অভিযোগে গত সোমবার অরিত্রির সামনে তার বাবাকে অপমান করলে লজ্জা ও অভিমানে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। বেইলি রোড শাখায় গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির গেটের বাইরে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ সময় তারা ‘এ কেমন শিক্ষক, যার জন্য শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়?’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেয়। শিক্ষার্থীর সহপাঠীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব ধরণের পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা চারদফা দাবি ও তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে জবাব চেয়ে শোকজ করা হয়।
এদিকে গতকাল সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভিকারুনন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে ঘিরে ধরেন। অধ্যক্ষের অপসারণ, সহপাঠী হত্যার বিচার এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তিসহ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন তারা। এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, সহকারী সচিব, মাউশির মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা স্কুলের অধ্যক্ষ ও অভিভাবকেদর সঙ্গে কথা বলেন।
অভিভাবক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সন্তানদের নিয়ে সব সময় চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। এই বাবা বলেন, সব শিক্ষকের ব্যবহার খারাপ না। তবে কিছু শিক্ষকের ব্যবহার খুবই জগন্য। তারা তুচ্ছ ঘটনায় অভিভাবকদের ডেকে এনে শিক্ষার্থীর সামনে যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করেন।
এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরো প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরে গেছে। বেশিরভাগ শিক্ষক ভর্তি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করে। বেপরোয়াভাবে চলে কোচিং বাণিজ্য। কেউ কোচিং না করলে ফেল করিয়ে দেয় বা খুবই কম নম্বর দেয়। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান। অরিত্রির সহপাঠীরা বলেন, বেশিরভাগ সহপাঠী শোকাহত ও মন খারাপ থাকায় গতকালকের (মঙ্গলবার) পরীক্ষা দিতে পারেনি। যার কারণে কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হলেও তারা পরীক্ষা নেয়। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদাউস বলেন, জিন্নাত আরার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন তিনি কোন দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের আইনানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অধ্যক্ষ বলেন, যে সব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি তারা পরবর্তীতে দিতে পারবে।
এদিকে, অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে স্কুল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী কোন কারণ ছাড়া এমনিতে মারা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাইকোর্টোর একটি বেঞ্চ গতকাল অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয় বিদারক বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়া মেয়ের সামনে বাবা-মাকে অপমান করা বাজে ঘটনার দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন অরিত্রিকে নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ আদালতের নজরে আনেন। তখন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এদিকে, হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের একটি কাউন্সিলিং কমিটি গঠন করেছেন। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটিতে একজন মনোবিদ, একজন আইনজ্ঞ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি ও একজন শিক্ষাবিদ থাকবেন। এছাড়া আত্মহত্যা ঘটনা রোধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ৫ সদস্যের একটি জাতীয় কাউন্সিলিং কমিটি গঠন এবং একটি নীতিমালা নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না,তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনিক আর হক, আনুনন নাহার সিদ্দিকা প্রমুখ।
ভিকারুননিসা নূনের অধ্যক্ষসহ ৫ জনকে লিগ্যাল নোটিশ
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ পাঁচজনকে বরখাস্ত করার জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ওই শিক্ষকদের বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনে মামলা এবং অন্য সব শাখা প্রধানদের পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ছাড়াও আরও যাদের বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে তারা হলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক জিনাত আক্তার (ইতোমধ্যে বরখাস্ত), শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তারি সুলতানা, ড. ফারহানা খানম ও মাহবুবুর রহমান মিঠু। গতকাল মঙ্গলবার অভিভাবকদের পক্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতিকে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
নোটিশে বলা হয়, গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে টিসি দেয়া যায় না। অথচ অধ্যক্ষ ক্লাসে মোবাইল আনার অপরাধে শিক্ষার্থীকে টিসি দেয়ার হুমকি, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সুযোগ না দেয়া এবং তার বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে অপমান করে বের করে দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দন্ডনীয় অপরাধ। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে অরিত্রি অধিকারী আত্মহত্যা করায় স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ওই পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি। নোটিশ প্রাপ্তির পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।