Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৯ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

রাতে অফিস থেকে বের হয়ে বিমানবন্দর মোড়ে দাঁড়ান তিনি। এরপর ‘আসমানী’ নামে একটি বাস এসে তার সামনে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, এই বাস কি খিলক্ষেত যাবে? এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একজন পিঠে হাত দিয়ে তাকে তুলে নেন। গাড়িতে ওঠার পর তিনি বলেন, ‘এতো রাতেতো আসমানী বাস চলার কথা নয়। রাত ১০টার মধ্যেই তো এই রোডে এ বাস বন্ধ হয়ে যায়। আজ কেন আপনারা এ বাস চালাচ্ছেন। এ কথা বলতেই দরজা লাগিয়ে দেয় একজন। এরপর বাসে থাকা অন্য সবাই এসে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে এবং গলায় ছুরি ধরে বলে, বেশি কথা বলবি না, এমন কাউকে ফোন কর যে তিন লাখ টাকা দিতে পারবে। না দিলে তোকে মেরে নদীতে ফেলে দেবো। এরপর তার ছোটভাই তানভীরকে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়। ওই দিন রাত তিনটা পর্যন্ত আধাঘণ্টা পরপর ফোন করে টাকা চাওয়া হয়। দিতে দেরি করায় মারধর করা হয় এবং সিটের নিচে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয় আমাকে। গতকাল রোববার দুপুরে কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে গত ১৭ নভেম্বর রাতে বিমানবন্দর সড়ক থেকে অপহৃত হওয়া বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত তরিকুল ইসলাম এভাবেই সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি আবেগতারিত হয়ে পড়েন।
তরিকুল ইসলাম আরো জানান, সারারাত ঘোরার পর সারাদিন ৪টি মোবাইল সিমের মাধ্যমে ৬৫ হাজার টাকা বিকাশ করা হয়। এরপর রাত ৮টার দিকে নরসিংদীর শিবপুরের একটি ব্রিজের নিচে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেয় তারা। তার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালায় র‌্যাব-১। অবশেষে গত শনিবার রাত ১১টা থেকে ভোরের মধ্যে তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দুটি বাস জব্দ করা হয় বলে দাবি করেছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইমরান, নাটোরের নলডাঙ্গার জিহাদ আলী ও জুলহাস হোসেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের শান্ত হোসেন, ঢাকার আশুলিয়ার রকিবুল হাসান ও হাবীবুর রহমান, গাজীপুর কাশিমপুরের রাকিবুল ইসলাম, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নাঈম মিয়া এবং ময়মনসিংহ সদরের বাবুল হোসেন। তাদের সবার বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের কাজই হচ্ছে বাসে যাত্রী হিসেবে তুলে অপহরণ করা। হাত-পা বেঁধে অস্ত্র দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা। আর যেদিন মেয়েদের তোলা হয় সেদিন জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করে তারা। আবার কেউ শ্লীলতাহানির দৃশ্য ভিডিও করে। একপর্যায়ে কোনো নির্জন জায়গায় ফেলে দেয়া হয়। মেয়েদের ভয় দেখিয়ে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানালে ভিডিও করা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ফেসবুকে’ ছেড়ে দেয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বাসের মালিক জানেনই না যে, তার বাস দিয়ে অপরাধীরা অপহরণের মতো ভয়াবহ কাজ করছে। র‌্যাব জানায়, অপহরণকারী এ চক্রটি গত ১৫ নভেম্বর গাবতলী টু চান্দরা রোডে চলাচলকারী জনসেবা পরিবহনের একটি মিনিবাস ড্রাইভারকে হাত-পা বেঁধে রেখে বাস নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় চলে যায়। পরে বাসের মালিক ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বাসটিকে নিয়ে আসেন। বাসটির মালিক ইয়ার হোসেনও গতকাল র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ