Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহীতে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:৩৫ পিএম

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মেয়র গ্রুপের সংঘর্ষে চঞ্চল কুমার সুজন (৪২) নামে এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছে। সংঘর্ষে আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আওয়ামী লীগের তিনজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
নিহত চঞ্চল কুমার তাহেরপুর পৌরসভার হলদারপাড়ার নরেন চন্দ্র পিয়নের ছেলে। তিনি পৌরসভা যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য।
ঘটনায় পর থেকে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ শনিবার সকালে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে জামগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসেছিলেন। তিনি ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এ সময় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে মেয়রের প্রতিপক্ষ এমপি এনামুল হকের সমর্থক সহকারী শিক্ষক গুলবার হোসেন মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে মেয়রের লোকজন গুলবার হোসেনকে ভিডিও করার কারণ জানতে চায়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মেয়রের লোকজন শিক্ষক গুলবার হোসেনকে মারধর শুরু করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এমপি এনামুল হকের সমর্থক আর্ট বাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন তাহেরপুর বাজারে গিয়ে মেয়রের সমর্থক যুবলীগ কর্মী চঞ্চল কুমারকে পেয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় আক্রমণকারীরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। তাদের হামলায় কাউছার হোসেন (৪৫) নামে মেয়রের সমর্থকও একজন শিক্ষকও আহত হন।
এদিকে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়রের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী তাহেরপুর বাজারে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শুরু হয় ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া। এ সময় মেয়রের লোকজনের সামনে এমপির লোকজন টিকতে না পেরে পিছু হটে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এমপির লোকজনের ছুরিকাঘাতে আহত যুবলীগ কর্মী চঞ্চল কুমারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সোয়া চারটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে জানান, পুলিশের সামনে তাঁর লোকজনের ওপর এমপি এনামুল হকের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় হামলা করেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য এক চরমপন্থি ক্যাডারের নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে বলে দাবি করেন মেয়র কালাম। শিক্ষক গুলবার হোসেনের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোপনে ভিডিও ধারণ করা নিয়ে তার লোকজনের সঙ্গে শিক্ষকের বাকবিতণ্ডা হয়েছে মাত্র। তাকে কেউ মারধর করেনি।’
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বাক্কার মৃধা মুনসুর রহমান বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে দলে গ্রুপিং থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে দলীয় এক কর্মীকে হত্যা করে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, ‘তাহেরপুরে সংঘর্ষের খবর পাওয়ার মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাহারা দেওয়া হয়েছে।’
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংঘর্ষ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ