এডিট করা যাবে পাঠানো মেসেজ! অতি প্রয়োজনীয় ফিচার আনছে হোয়াটসঅ্যাপ
অ্যাপেল কিংবা টেলিগ্রামের মতো অ্যাপগুলিতে মেসেজ পাঠিয়ে দেয়ার পরও তাতে কোনও ভুল থাকলে এডিট করা
টেন মিনিট স্কুল রবির সাথে যুক্ত হয়ে হয়েছে রবি-টেন মিনিট স্কুল (ফেসবুক পেজঃ fb.com/10minuteschool/। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অনলাইন এডুকেশন প্লাটফর্ম। এ টেন মিনিট স্কুলের ফাউন্ডার আয়মান সাদিক বর্তমান তরুণ সমাজদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ উদ্যোগ বাংলাদেশ ছাড়াও সারাবিশ্ব হতে অর্জন করেছে অনেক অনেক অ্যাওয়ার্ড। তরুণদের মনে টেন মিনিট স্কুল নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নের উত্তরগুলো উঠে এসেছে তার সাথে আড্ডাতে। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মোঃ ইকরাম।
দৈনিক ইনকিলাবঃ টেন মিনিট স্কুল শুরুর গল্পটা, স্বপ্নটা সম্পর্কে পাঠকদের জানার আগ্রহ অনেক। তাই তাদের জন্য টেন মিনিট স্কুল শুরুর গল্পটা শেয়ার করবেন কি?
আয়মান সাদিকঃ শুরুর গল্পটা যদি বলতে হয় তাহলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকের প্রসঙ্গ চলে আসবে! আমি মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। সেখান থেকে হুট করেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিবিএ তে চলে আসায় ক্লাসের পড়া বুঝতেও বেশ ঝামেলায় পড়তে হচ্ছিলো সে সময়টায়। সাহায্য নিলাম ইন্টারনেট থেকে। অনলাইন এডুকেশন প্লাটফর্ম তৈরির আইডিয়াটা মূলত সেখান থেকেই আসা। আর আমি মেন্টরসে অ্যাডমিশনের ক্লাস নিতাম। পড়ানোর প্রতি ভালোলাগার শুরুটাও সেখান থেকেই। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে কোচিং করতে আসতো। অনেক অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে এ ছেলে-মেয়েগুলো শহরে আসে! দুঃখজনক হলেও ব্যাপারটা সত্য যে আমাদের দেশের সবকিছুই মূলত শহরকেন্দ্রিক বলা যায় ঢাকাকেন্দ্রিক! এটা ছিল একটা প্রতিবন্ধকতা। আর অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। এমন অনেক শিক্ষার্থীও আসতো একটা সময় আমার কাছে যাদের পরিবার কোচিং এর পুরো ভর্তি ফি এর খরচাটুকুও বহন করতে অক্ষম। ঢাকায় থাকা-খাওয়া তো পরের কথা। আমি এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম যে, এই ছেলে-মেয়েগুলোকে যদি আবার তাদের গ্রামে ফিরে যেতে হয় তাহলে ওদের এই স্বপ্নগুলো চিরকালের মতো শেষ হয়ে যাবে। তো তখন থেকেই মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাওয়া শুরু করে যে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভৌগলিক অবস্থান আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা যাতে কোনোভাবেই বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় সেটা নিয়ে কিছু করা গেলে কেমন হয়? আর, সেই থেকেই একটা ফ্রি অনলাইন এডুকেশনাল প্লাটফর্ম তৈরী করার স্বপ্ন দেখার শুরু।
আরও পড়ুন: বইমেলা’২০১৯ এ প্রকাশিত আয়মান সাদিকের সর্বাধিক বিক্রিত বই ভাল্লাগেনা
দৈনিক ইনকিলাবঃ টেন মিনিট স্কুল এর বর্তমান অবস্থান কী?
আয়মান সাদিকঃ রবি-টেন মিনিট স্কুল বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অনলাইন এডুকেশন প্লাটফর্ম। আমরা রোজ প্রায় আড়াই লক্ষ শিক্ষার্থীকে অনলাইনে পড়াচ্ছি। দেশের প্রায় ২৯০০ স্কুলে আইসিটি ডিভিশনের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব আছে। সেসব ল্যাবে আমাদের টেন মিনিট স্কুলের কনটেন্ট দেখানো হয়। আমাদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে টেন মিনিট স্কুল লাইভ নামে যেটার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৩ লক্ষের বেশি। এবং এটা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্টুডেন্ট কমিউনিটি।
দৈনিক ইনকিলাবঃ এখানে সব কিছুই ফ্রি। তাহলে এত খরচ, এত সময় ব্যয় কিভাবে করছেন? অর্থাৎ জানতে চাচ্ছি, সব কিছুই ফ্রি দেখছি, তাহলে ইনকাম কিভাবে আসে?
আয়মান সাদিকঃ বেশ পরিচিত একটা প্রশ্ন আমার জন্যে এটা! তোমরা যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজক, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছো তারা স্পন্সর শব্দটার সাথে আশা করি পরিচিত। একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করা বেশ খরচসাপেক্ষ। স্পন্সররাই মূলত এই ব্যয়টা বহন করে। ওদের এই সহায়তায় পুরো বিষয়টা গুছিয়ে আয়োজন করা হয়। আমাদের টেন মিনিট স্কুলের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা একই। আমাদের অর্থায়নটাও মূলত স্পন্সররাই করে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাবঃ শুরুর দিকের প্রতিবন্ধকতা কী কী ছিলো? সেই সব প্রতিবন্ধকতাগুলোকে কিভাবে পার হয়ে এসেছেন? কোনো ধরনের হতাশা কাজ করতো কি?
আয়মান সাদিকঃ একদম শুরু দিকের কথা যদি বলতে হয় তাহলে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো মূলত বাস্তবিক ধারণার অভাব। রবি-টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইট বানানোর জন্যে দু-দুবার দু-দুটো সফটওয়্যার কোম্পানীর সরণাপন্ন হয়েছিলাম। দূর্ভাগ্যবশত দু-দুবারই বোকা বনতে হয়েছিলো। তখন এ বিষয়গুলো নিয়ে তেমন পরিষ্কার ধারণা না থাকার কারণে এ ধরণের ঝামেলায় পড়তে হয়েছিলো। আর পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশীকে পুরো বিষয়টা সম্পর্কে বোঝাতেও রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে। হতাশা একেবারেই কাজ করতো না বললে মিথ্যা বলা হবে। হাল ছাড়ার কথা ভাবি নি কখনো! আর আমি অনেকের সমর্থন, সহযোগীতা ও ভালোবাসা পেয়েছিলাম একদম শুরু থেকেই। তাই হতাশাও তেমনভাবে জেঁকে বসতে পারে নি। সবার সমর্থনই মূলত হতাশা কাটিয়ে ওঠার নিয়ামক ছিলো। তবে, হ্যাঁ! এখন, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবকিছু বেশ ভালোভাবেই চলছে।
দৈনিক ইনকিলাবঃ শুরুর কত দিন পর আপনার এ প্রজেক্ট হতে ইনকাম এসেছে? সেটা কোন পন্থাতে এসেছে?
আয়মান সাদিকঃ সত্যি বলতে এ প্রজেক্টটা শুরুর মূল উদ্দেশ্য ছিলো মূলত শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। দারিদ্র্যতা কিংবা ভৌগলিক অবস্থান যাতে কোনোভাবেই শিক্ষাগ্রহনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে না দাঁড়ায় সেটাই ছিলো মূল লক্ষ্য। আয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে টেন মিনিট স্কুলের যাত্রা শুরু হয় নি। যারা টেন মিনিট স্কুলকে একদম শুরুর দিক থেকেই ফলো করে আসছো তারা নিশ্চয়ই জানো যে আমাদের ইউটিউবের ভিডিওগুলোতে প্রথম আড়াই বছর কোনো অ্যাড দেখানো হতো না। এর কারণটা সত্যি বলতে আমরা তখনো জানতাম কী করে অ্যাড মনিটাইজ করতে হয়! মনিটাইজেশন শুরু করার পর একটু আধটু উপার্জনের শুরু হয় ইউটিউব থেকে। তবে, এখান থেকে আসা অর্থের পরিমাণ আমাদের অপারেশন কস্ট এর ১% ও না। আর আমরা প্রায় সময়ই বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্যে অ্যাপ বানিয়ে দিই। সেটাও আমাদের একটা উল্লেখযোগ্য আয়ের উৎস। আমাদের মূল অর্থায়ন মূলত স্পন্সররাই করছে এখনো পর্যন্ত।
দৈনিক ইনকিলাবঃ নতুন যারা কোনো কিছু শুরু করতে চায়, কিন্তু হয়তো শুরুর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারনে অনেক স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারেনা। আপনি শুরুর দিকে এ বাঁধাটাকে কিভাবে পার হয়েছেন?
আয়মান সাদিকঃ অর্থনৈতিক বাঁধা নতুন কিছু শুরুর ক্ষেত্রে একটা বড় সীমাবদ্ধতা এটা অস্বীকার করাটা অসম্ভব! সেজন্য আমি বলবো ছাত্রাবস্থা থেকেই উপার্জনের শুরু করাটা বেশ জরুরি। আমার কথা যদি বলি আমি পড়াতে ভালোবাসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই স্টুডেন্ট পড়াতাম। এমনকি আমার রবি-টেন মিনিট স্কুলের একদম শুরুর দিকের ফান্ডিংয়ের খরচাটুকু পুরোটাই আমার উপার্জনের টাকা থেকেই করা। তাই, সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ হলো, নিজেদের দক্ষতা আর আগ্রহের জায়গাটা খুঁজে বের করো। সেটার পেছনে সময় আর শ্রম দাও। উপার্জন করা শুরু করো। স্বপ্ন দেখলেই হবে না। সেটাকে সত্যি করার জন্যে কাঠ-খড়ও পোড়াতে হবে। নতুন কিছু করতে গেলে বাঁধা আসবে, সেটাকে জয় করার জন্য প্রস্তুতি নাও। শুভকামনা রইলো তোমাদের সবার জন্যে।
দৈনিক ইনকিলাবঃ টেন মিনিট স্কুলের ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় অর্জন রয়েছে। সেগুলো পাঠকদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।
আয়মান সাদিকঃ সবচাইতে বড় অর্জন হলো দেশের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অগাধ ভালোবাসা, সম্মান আর নির্ভরতা! উল্লেখযোগ্য অন্যান্য অর্জনের মধ্যে কুইন্স ইয়ং লিডার অ্যাওয়ার্ড, ফোর্বস থার্টি আন্ডার থার্টি, আইসিটি অস্কার খ্যাত অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ড, মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস খ্যাত গ্লোমো অ্যাওয়ার্ড অন্যতম! এছাড়াও আরো বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে রবি-টেন মিনিট স্কুলের ঝুলিতে!
দৈনিক ইনকিলাবঃ এ প্রজেক্টে এখন কত জন টিম মেম্বার রয়েছে? তাদের সাথেও আমাদের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।
আয়মান সাদিকঃ সব মিলিয়ে ৫৮ জনের বেশ বড় একটা টিম আমাদের। টিম না বলে পরিবারই বলা উচিত। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এখানে সবাই স্টুডেন্ট। গত তিন বছরে আমি চেষ্টা করেছি সব ট্যালেন্টেড ছেলেমেয়েদের কিভাবে একটা ছাদের নিচে আনা যায়। এ দিকটায় আমি সফল বলতেই হবে!
দৈনিক ইনকিলাবঃ টেন মিনিট স্কুল নিয়ে ভবিষ্যতে আর কী কী পরিকল্পনা করছেন? যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে একটু শেয়ার করলে খুশি হবো।
আয়মান সাদিকঃ খুব শীঘ্রই প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পুরো সিলেবাসের সবগুলো কনটেন্টসহ আমাদের অ্যাপটা লঞ্চ হচ্ছে ইনশাল্লাহ! এবং আমি চাই সারা বাংলাদেশের নিবন্ধনকৃত এক লক্ষ সত্তর হাজার স্কুল আর চার কোটি সাতাশ লক্ষ শিক্ষার্থী টেন মিনিট স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত হবে।
দৈনিক ইনকিলাবঃ বিভিন্ন জায়গাতে আপনি মোটিভেশনাল প্রোগ্রামে জয়েন করছেন।তাই আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান তরুণদের যারা ব্যর্থ কিংবা হতাশ, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ আশা করছি।
আয়মান সাদিকঃ পরে করবো করতে করতে অনেকখানি সময় নষ্ট করা হয়েছে। তাই আজ থেকেই নিজের শখের কাজটা করার জন্য যা যা করা দরকার, করা শুরু করে দাও। মনে রেখো, Sometimes later becomes never. আর হ্যাঁ, হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসো। অন্যদের দোষ না দিয়ে নিজের উপর দোষ নেওয়ার অভ্যাস করো। Stop complaining, start fixing and taking actions. ভাগ্যের উপর কখনো দোষ দিও না, মানুষের দোষ-ত্রুটি নিয়ে কথা বলো না, আইডিয়া নিয়ে কথা বলো, সমস্যার সমাধান খোঁজো! অনেকদূর এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।