Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এরশাদের দলে প্রার্থী ঘোষণায় লুকোচুরি

জাপা নেতাদের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতারণার’ অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। লাঙ্গল মার্কা প্রতীকে ভোটের প্রস্তুতি গ্রহণরত সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের শীর্ষ নেতা তথা মহাসচিবসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, মহাসচিব-প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের আসন চূড়ান্ত করতে দলীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছেন; অনেকগুলো আসন ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠে। এরশাদকে অন্ধকারে রেখে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের অনুকম্পার উপর নির্ভরশীল করায় বিক্ষোভ করেন এবং স্লোগান দেন নেতারা। বনানীর অফিসে রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ কয়েকজন নেতা দলকে বিক্রি করেছেন বলেও স্লোগান দেয়া হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ স্থগিত করা হয়।
দশম জাতীয় সংসদে মহিলা ৬ আসনসহ জাপার বর্তমান এমপি ৪২ জন। অথচ এবার মহাজোট থেকে প্রথমে জাপাকে মাত্র ২২টি আসন দেয়া হয়। এরশাদ পল্ট্রি দিতে পারেন সে ভয়ে আরো কয়েকটি আসন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তবে কিছু আসন নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়। মহাসচিবসহ সিনিয়র একাধিক নেতা মজাজোটের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। জাপার নেতাদের ধারণা দলের দায়িত্বশীল নেতারা ‘এরশাদকে অন্ধকারে রেখে’ নিজেদের আসন ঠিক রেখে অন্যান্যদের আসন ছেড়ে দেন। রুহুল আমিন হাওলাদারের পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মোঃ শাহজাহান মিয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আর ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ফয়জুল্লাহকে। এখন হাওলাদার পটুয়াখালী-১, স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্মা বরিশাল-৬, ব্যারিস্টার আনিস চট্টগ্রাম-৫ আসন এবং জিয়াউদ্দিন বাবলু চট্টগ্রামের বদলে কক্সবাজার-৩ আসন মহাজোটের নমিনেশন নিশ্চিত করতে দলের অনেকগুলো আসন ছেড়ে দিতে রাজী হয়েছেন। এ অভিযোগ জাপার বিক্ষুব্ধ নেতাদের। এই নেতারা ব্যাক্তি স্বার্থে দলের সঙ্গে প্রতারণা করছেন এমন আলোচনা জাপায় এখন ওপেন সিক্রেট। মহাজোটে মনোনয়ন নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, কাজী মামুনুর রশীদ, মোস্তফা আল মাহমুদ, আলাউদ্দীন মৃধা, আবুল কাশেম রিপনসহ অসংখ্য নেতার কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা গতকাল বলেন, দলের মহাসচিব ও প্রেসিডিয়ামের সদস্য কাম অফিস কর্মচারী এমন কয়েকজন সিন্ডিকেট করে অর্ধশতকাটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। চাপের মুখে এখন অনেককে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন।
প্রার্থী ঘোষণার জন্য সংবাদ সম্মেলন ডেকে তোপের মুখেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে গতকাল বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের স্লোগানে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা ঘোষণা বন্ধ রাখা হয়। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অভিযোগ সুবিধাবাদী নেতা স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করে দলকে কার্যতঃ বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে জাপার সূত্রের দাবি মহাজোট থেকে ৪০টি আসন দেয়া হয়েছে।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার তোপের মুখে পড়েন। তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সারাদেশ থেকে আসা বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বনানী কার্যালয়ে ঘিরে রাখেন। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন হাওলাদার। পরীক্ষিত এবং ত্যাগী নেতাদের কেউ কেউ মহাসচিবের কাছে জানতে চান- কেনো এমনটা হলো? জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতারা শেষ মুহূর্তে কেনো মনোনয়ন পাওয়া থেকে বাদ পড়লো? নেতা-কর্মীদের মারমুখী আচরণ দেখে তালিকা ঘোষণা স্থগিত করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম, এমএ কাশেম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ছাড়াও বিভিন্ন স্থরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাপার নেতাকর্মীরা ৩শ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। তারা ‘দালাল দালাল’ বলে মহাসচিবের দিকে তেড়ে যান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তালিকা প্রকাশ না করে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হিসেবেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। মহাজোটের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই প্রায় দু’শো আসনেই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হবে। প্রার্থীতা বাছাই প্রক্রিয়া শেষে, মহাজোটের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে কিছু কিছু আসনে ওপেন প্রতিদ্ব›িদ্বতাও হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে মহাজোটের রুপরেখা চুড়ান্ত করা হয়েছে। মহাজোটে কোন মত পার্থক্য নেই।
জাতীয় পার্টির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় দলীয় প্রার্থীদের মাঝে মনোনয়ন পত্র বিতরণ শুরু করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, মহাজোট থেকে জাপা যে সব আসন পাচ্ছে বলে প্রচার রয়েছে সেগুলো হলো ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-১৩ সফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ঢাকা-১৭ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, টাঙ্গাইল-৫ পীরজাদা মনির হোসেন, জামালপুর-২ মোস্তফা আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১২ এমএ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট), নোয়াখালী-১ আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক (ইসলামী মহাজোট), ফেনী-৩ লে. জে.(অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, কুমিল্লা-৮ নরুল ইসলাম মিলন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ রেজাউল ইসলাম, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনিরউদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-৩ ডা. আক্কাস আলী, লালমনিরহাট-১ মেজর (অব.) খালেদ আখতার, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শাৃমীম হায়দার পাটোয়ারী, নাটোর-২ মজিবুর রহমান সেন্টু, নাটোর-৪ সালাউদ্দিন মৃধা, বগুড়া-২ শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, ঠাকুরগাঁও-৩ মোঃ হাফিজউদ্দিন আহমদ, সিলেট-২ ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ মোঃ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, হবিগঞ্জ-১ আতিকুর রহমান আতিক, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্মা, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, পিরোজপুর-৩ ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত।
জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, মহাসচিব নিজের ও স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্মার এবং ব্যারিষ্টার আনিস-বাবলুরা নিজেদের আসন নিশ্চিত করতে গিয়ে দলের স্বার্থ, মাঠ পর্যায়ের নিবেদিত জনপ্রিয় ও ত্যাগ নেতা-কর্মীদের স্বার্থকে পুরোপুরি জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
উল্লেখ, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনেও এরশাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর তাঁকে ‘অন্ধকারে রেখে’ রওশন এরশাদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সুনীল শুভ রায় গংরা জাতীয় পার্টিকে পাতানো নির্বাচনে নেয়। অতপর জাতীয় সংসদে বিরোধী দল তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বি-টীমের ভুমিকায় নামে দলটি।



 

Show all comments
  • Monir ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৪৯ এএম says : 0
    যারা এখনো এরশাদের জাতীয় পার্টি নামের সার্কাস পাটি কে সমর্থন করে তারা অাসলেই .....।
    Total Reply(0) Reply
  • Hanif Gazi ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫০ এএম says : 0
    বিলুপ্তর পথে জাতীয় পার্টি আগামী ৮/১০ বছরের মধ্য শেষ হবে এই পার্টি
    Total Reply(0) Reply
  • Masum Rahat ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫০ এএম says : 0
    চাচা ডিগবাজি দেওয়ার অপেক্ষায় আছে!
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫১ এএম says : 0
    জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১:৫২ এএম says : 0
    মানুষ এসব লুকোচুরি আর দেখতে চায় না। দয়া করে এসব বন্ধ করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ৯:২৫ এএম says : 0
    জাতৗয় পাটৗ একটি জনপ্রিয় দল তাই জাপা তার নিজস্ব জোট নিয়ে নিবাচন করলে আশিঁ টির ঊপরে আসন পাবে নিশ্চিত.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এরশাদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ