Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিখোঁজ ঢাকায়, চট্টগ্রামে উঠলো মুক্তিপণের টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

যশোরের বিএনপি নেতা আবু বকরের মুক্তিপণ আদায় হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। মুক্তিপণ চেয়ে তার পরিবারের কাছে দেয়া বিকাশ নম্বরগুলো চট্টগ্রামে ব্যবহৃত হয়। গত ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে চট্টগ্রামে বিকাশের দুইটি নম্বর থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিপণের টাকা উত্তোলনকারীদের বিষয়ে গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে। ধারণা করা হচ্ছে, আবু বকরের মৃত্যু রহস্যের সঙ্গে মুক্তিপণের টাকা উত্তোলনের যোগসূত্র থাকতে পারে। বিজয়নগরে হোটেল মেট্রোপলিটন থেকে আবু বকর বের হওয়ার সময় কারা ওই হোটেলে আগে থেকে অনুসরণ করছিল তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান বলেন, রাজধানীর শাহবাগ থানা থেকে পাঠানো নিহতের পরিবারের অভিযোগপত্রটি তারা পেয়েছেন। বাদি ছাড়া মামলা দায়ের করা হবে না। বাদি থানায় আসার পর মামলা নেওয়া হবে। এর আগে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, আবু বকরের লাশ উদ্ধার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা। লাশ উদ্ধারের পর ওই থানায় অপমৃত্যু মামলাও হয়েছে। একই ঘটনায় দুই থানায় মামলা হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া শাহবাগ থানা এলাকার কোনো ঘটনাও নয় এটি। অভিযোগপত্রটি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল আবু বকরের ভাতিজা হুমায়ন কবির বলেন, তারা থানায় হত্যার অভিযোগ দায়ের করবেন। আবু বকরকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা চেয়ে কারা ফোন দিয়েছিল সে বিষয়টি তদন্ত করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই মূহুর্তে তারা যশোরে অবস্থান করছেন। ঢাকায় এসে তারা হত্যার অভিযোগ দিবেন।
গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে খবর পেয়ে বুড়িগঙ্গার চর-খেজুরবাগ বেবী সাহেব ডকইয়ার্ড সংলগ্ন পানিতে ভাসমান অবস্থায় একজনের লাশ অজ্ঞাত হিসাবে উদ্ধার করা হয়। পরনে ছিলো সাদা পাজামা ও গেঞ্জি। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মিটফোর্ড মর্গে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে মৃতের আত্মীয় স্বজনরা মিটফোর্ড মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য আবু বকর আবু গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। নয়াপল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের চার তলায় ৪১৩ নম্বর রুমে ছিলেন। সেখান থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমাও দেন। হোটেল রেজিস্টার বই অনুযায়ি তিনি ১৪ নভেম্বর হোটেল থেকে চলে যান। পরদিন ১৫ নভেম্বর তিনি হোটেলে আবারও ওঠেন। গত ১৮ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে তার সঙ্গী মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাইফুল ইসলাম ওষুধ কিনে ফিরে এসে তাকে আর রুম পাননি।
রাত পৌণে ৯টার দিকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কেশবপুরে অবস্থানরত এক ভাগ্নের মোবাইলে কয়েকবার মিসকল করা হয়। প্রত্যেকবার ব্যাক কলে শুধু হ্যালো হ্যালো ছাড়া কোনো কথা হয়নি। এরপর ০৯৬৩৮৮৮৮২০২ নম্বর মোবাইল থেকে ওই ভাগ্নের কাছে ফোন দিয়ে তার মামার জন্য দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এজন্য ওই রাতে কয়েকটি বিকাশ নম্বরও সরবরাহ করেন তারা।
রাত ১২টার পর বিকাশের ট্রানজিট বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার সকালে অপহরণকারীরা ০১৭৪৮১১০৫৭৭ নম্বর মোবাইল থেকে পুনরায় যোগাযোগ করে। এরপর তাদের দেয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে অপহরণকারীরা দেড় লাখ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বহু অনুরোধের পর অপহরণকারীরা ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার জন্য দুটি নম্বর সরবরাহ করে বলে, ওই টাকা পাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে আবু বকর আবুকে ওই হোটেলের সামনে ছেড়ে আসা হবে। সাড়ে ১০টার দিকে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার পরও তাকে ছাড়া হয়নি এবং তারা আর মোবাইল রিসিভ করেনি। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অপহরণকারীদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আবু বকর আবুর মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল।
রাজধানীর বিজয়নগরে মেট্রোপলিটন হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের দৃশ্য অনুযায়ি রোববার রাত ৮টা ৩৪ মিনিটে আবু বকর আবু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। হোটেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দুই ব্যক্তি অনুসরণ করছিল। এদের মধ্যে একজনের পরনে ধূসর রঙের গেঞ্জি ও চেক লুঙ্গি ও অপরজনের পরণে জিন্স প্যান্ট ও হালকা হলুদ রঙের গেঞ্জি। দ্বিতীয় ব্যক্তির মাথায় উলের টুপি রয়েছে। তারা দুই জন আবু বকর চলে যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করে করিডোরে দাঁড়িয়ে পরস্পর কথা বলতে থাকেন। এই দুই ব্যক্তি কারা-তা পুলিশ তদন্ত করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ