Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপার ডেড লাইন ৩০ অক্টোবর

সরকারের আশীর্বাদের ছাতা জি এম কাদের না রওশনের মাথায়?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে বিরোধের উথালপাথাল ঢেউ বইছে। দেশের বড় দুই দলের জন্য ওই নির্বাচন বাঁচা-মরার লড়াই। তবে সুবিধাবাদী রাজনীতিতে অভ্যস্ত এরশাদের জাতীয় পার্টির ওই নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথার চেয়ে বড় মাথাব্যথা চলতি মাসের ৩০ তারিখ। ওই দিন একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন বসছে। ওই অধিবেশনে পরিষ্কাব হবে সরকারের সমর্থনের ছাতা রওশনের ওপর নাকি জি এম কাদেরের। আওয়ামী লীগের অনুকম্পায় গণবিচ্ছিন্ন দলটি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। সংসদ অধিবেশনের ওই দিন সংসদীয় দলের আবেদন কার্যকর করে জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করা হবে; নাকি রওশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে সংসদ উপনেতা কাজী ফিরোজ রশিদকে করা হবে সে সিদ্ধান্তে পরিষ্কার হবে সরকারি দলের আশীর্বাদের ছাতা কার মাথায় থাকবে।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সংসদের একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে আরেকটি অধিবেশন বসতে হবে। সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ এই অধিবেশন আহ্বান করেছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদের ১৯তম অধিবেশন শেষ হয়েছিল।

এর মধ্যে জাতীয় পার্টিতে শুরু হয়েছে দেবর-ভাবীর লড়াই। বিদেশে চিকিৎসারত রওশন এরশাদ জাতীয় কাউন্সিলের আহ্বান করেছেন। দলের চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে এই কাউন্সিল আহ্বানে দলের এমপি ও নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা থেকে সরিয়ে ওই পদে জি এম কাদেরকে করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত আবেদন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দফতরে জমা দেয়া হয়। পরে প্রেসিডিয়াম সভায় রওশন এরশাদকে সংসদ নেতা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। এদিকে রওশন এরশাদ বিদেশে চিকিৎসারত থেকেই পাল্টা কার্যক্রম হিসেবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা পদ থেকে জি এম কাদেরকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব স্পিকারের কাছে পাঠিয়ে দেন। বেগম রওশন এরশাদের স্পিকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে জাতীয় সংসদের উপনেতা পদে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। স্পিকারকে চিঠি দেয়া নেয়া ইত্যাদি ইস্যুতে জাতীয় সংসদে দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার ভেল্কিবাজিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের কমপক্ষে অর্ধশত নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি জনগণের পক্ষে অবস্থান নিক। আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে আর পরিচিতি ক্রাইসিসে থাকতে চান না। এ জন্য তারা জি এম কাদেরকে সমর্থন করছেন। তবে দল থেকে ঠিকটে পড়া এবং পরিত্যক্ত কিছু নেতাকে নিয়ে রওশন এরশাদ সরকারের লেজুড় হিসেবে থাকতে চাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর বেগম রওশন এরশাদকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্যরা। ওই চিঠির বিষয়ে সংসদ সচিবালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্যদিকে রওশনের দেয়া চিঠির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্পিকার কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা নির্ভর করছে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের ওপর। কারণ তিনি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে যাকে সমর্থন করবেন তার পক্ষের আবেদন কার্যকর করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, জি এম কাদের সম্প্রতি কিছু বক্তব্য সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব বিরক্ত। কারণ তারা চায় জাতীয় পার্টি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আওয়ামী লীগের অনুগত থেকে দেশের রাজনীতিতে ‘নাচের পুতুল’ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু জি এম কাদের দলকে নতুন প্রাণ দিতে চান। জি এম কাদেরের স্পষ্ট বস্তব্যে সরকার বিক্ষুব্ধ হওয়ায় তার (জি এম কাদের) সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ফোনালাপ হয়েছে এমন খবর প্রচার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপির গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীরে ছেলের বিয়েতে জি এম কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক টেবিলের বসার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শুধু তাই নয়, রওশনপন্থীরা জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে অর্থ-সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ তুলে দুদকে অভিযোগ করেছে এবং সেই অভিযোগ হাইকোর্টে করে তদন্ত চাওয়া রিটের ওপর কোনোরকম আদেশ না দিয়ে তা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিষ্পত্তিতে আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘এই মুহূর্তে রিটের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। প্রয়োজন মনে করলে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

জানা গেছে, জি এম কাদেরের পক্ষে যে আবেদন স্পিকারের দফতরে করা হয়েছিল বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা তা ইতোমধ্যে স্পিকারের কাছে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব পুরনো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দু’জনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তিন বছর আগে এরশাদের মৃত্যুর পর দলের কর্তৃত্ব নিয়ে কাদের ও রওশনের বিরোধে দলটি ভাঙনের মুখে পড়েছিল। তখন সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতায় রওশনকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পাশাপাশি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ দেয়া হয়। আর কাদের দলের চেয়ারম্যানের পদ রাখার পাশাপাশি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হন। এখন দলের সবশ্রেণির নেতাই চাচ্ছেন জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা করা হোক। কিন্তু রওশনপন্থীরা চাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে কয়েকটি আসনের বিনিময়ে সরকারের বি-টিম হিসেবে থাকতে। দুই পক্ষই অনড়। তবে সরকার রওশনের ওপর ছাতা ধরবে নাকি জি এম কাদেরের মাথার ওপর সেটা ৩০ অক্টোবর সংসদ অধিবেশনের সময় পরিষ্কার হবে। কারণ ওই সময় স্পিকারকে দেয়া জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের চিঠির সুরাহা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ